কুমিল্লায়
বজ্রপাতে নিহত চারজনের মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী ফাহাদের বাড়িতে চলছে শোকের
মাতম। স্বামী মৃত্যুর ৭ বছর পর বজ্রপাতে ছেলেকে হারিয়ে আহাজারিতে করছেন
ফাহাদের মা নিপা আক্তার। মায়ের আহাজারিতে বাড়ি হয়ে উঠেছে পয়ালগচ্ছ গ্রামের
আকাশ বাতাস। গর্ভধারিণী মায়ের সাথে আহাজারি করছেন দাদা আবুল হাশেমসহ
পরিবারের অন্য স্বজনরাও।
৭ বছর আগে বরুড়া পয়ালগচ্ছ গ্রামের প্রবাসী
খোকন মিয়া দুই সন্তান রেখে মারা যান। খোকন ও নিপার সংসারে ফাহাদ ছিলেন ছোট
সন্তান। তাদের ঘরের বড় সন্তান মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। স্বামীর
মৃত্যুর পর ফরহাদকে ঘিরেই মা নিপাত ছাড়েননি স্বামীর বসতভিটা। ছোট ছেলে
ফাহাদকে নিয়ে তার ছিল বুক ভরা স্বপ্ন। তিলে তিলে সঞ্চিত স্বপ্ন কেড়ে নিলো
নিষ্ঠুর বজ্রপাত।
মা নিপা আহাজারি করতে করতে বলেন, ওরে নিষ্ঠুর বজ্রপাত
তোমার কী একটুও দয়া হয়নি। কিভাবে তুমি আমার বুকের ধনকে কেড়ে নিলি। আমি
কাকে নিয়ে বাঁচবো, কাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখবো।
তিনি জানান, প্রায় সময়
ফাহাদ বলতেন মা আমি মারা গেলে তুমি কাঁদবে? তখন তিনি বারণ করতেন বাবা এসব
কথা বলে না। সোমবার মা নিপাকে না বলেই সহপাঠীদের সঙ্গে ফসলের মাঠে গিয়েছেন
ঘুড়ি উড়াতে। তবে মাঝে মাকে বলেছিলেন মা আমি ভাত খাবো। ভাত রান্না করলেও
ছেলে ফাহাদকে তার রান্না করা ভাত আর খাওয়াতে পারেননি। এর মধ্যে বজ্রপাত তার
বুক খালি করে আদরের ছেলেটাকে কেড়ে নিলেন।
সোমবার বিকেলজুড়ে গুঁড়ি
গুঁড়ি বৃষ্টি মধ্যেই ফাহাদের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পয়ালগচ্ছ গ্রামে
গিয়ে দেখা যায় বাড়ি ভর্তি মানুষ। ফাহাদের মৃত্যুর সংবাদ শুনে পাড়া
প্রতিবেশী এবং আত্মীয় স্বজন এসেছেন ফাহাদের মাকে সান্তনা দিতে। ছেলেকে
হারিয়ে গর্ভধারিনী মা অনবরত আহাজারি করছেন আর চোখের পানি ফেলছেন ঘরভর্তি
স্বজনরা। এদিকে ফাহাদকে দাফনের প্রস্তুতি চলছে।
ফাহাদের দাদা আবুল
হাশেম বলেন, তার খেলার সাথী ছিল ফাহাদ। ফাহাদের বয়স ছিল ১৪ বছর। ৭ বছর বয়সে
বাবাকে হারিয়েছেন। নাতিকে বাবার স্নেহ মমতা দিয়েছেন। তবে আর্থিক সংকটের
কারণে বাবার অভাব পূরণ করতে পারেননি। ফাহাদের মা তার ছেলের দুই সন্তানকে
খুব কষ্ট করে বড় করছেন। সারাদিন নাতিকে লেখেননি। দাদা আবুল হাশেম চোখে কম
দেখেন। যখন শুনেছেন ফাহাদ বজ্রপাতে আক্রান্ত, তখন হুঁশ নেই। দৌড়ে নাতির
কাছে যেতে আহত হয়েছেন। স্থায়ীরা উদ্ধার করে বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ফাহাদকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। ছেলের পাশে দাফন
করবেন নাতিকে।
ফাহাদের সহপাঠী জিহানকে হারিয়েও আহাজারি করছেন স্বজনরা।
জিহানের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনার পিহর গ্ৰামে। বরুড়া পয়ালগচ্ছ গ্রামে না
আব্দুল বারেকের বাড়িতে বেড়াতে আসেন জিহান। ফাহাদ, জিহান অন্যান্য সহপাঠীদের
সাথে পাশের ফসলি জমিতে ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে বজ্রাঘাতে প্রাণ হারান। পরে
জিহানের মরদেহ নানার বাড়ি থেকে পাশ্ববর্তী উপজেলা কুমিল্লার চান্দিনা পিহর
গ্ৰামে নিয়ে দাফন করা হয়।
বজ্রপাতে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরুড়া
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নু এমং মারমা মং বলেন। বজ্রপাতে দুই ছাত্রের
মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এ মর্মান্তিক মৃত্যু ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মারা যাওয়া ছাত্রদের
দাফনের জন্য ৫ হাজার টাকা করে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও তাদের
সহযোগীয় থাকবে উপজেলা প্রশাসন।
উল্লেখ্য, সোমবার কুমিল্লার বরুড়ায় ২ ছাত্র, মুরাদনগর ২ কৃষক ও দেবিদ্বারে ১ শিশুসহ বজ্রপাতে ৫ জন নিহত হয়।