নিজস্ব
প্রতিবেদক: কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা এখনো পুরোনো
কারিকুলাম পড়ছেন। তারা যেসব বিষয়ে দক্ষ হয়ে বের হচ্ছেন, সেসব কাজের চাহিদা
এখন আর চাকরির বাজারে নেই। ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী কারিগরি
থেকে পড়াশোনা শেষে ডিগ্রি অর্জন করলেও বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না।
কারণ চাহিদার সঙ্গে তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের (দক্ষতা উন্নয়ন) তেমন কোনো
সম্পর্কই নেই।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর
পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সংস্থার গবেষকরা।
রাজধানী ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক
শিক্ষা বর্তমান পরিস্থিতি ও সংস্কার চিন্তা’ নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন
করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের
কর্মসংস্থান তৈরির একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে কারিগরি জ্ঞানে
দক্ষ জনশক্তি। প্রচলিত সাধারণ শিক্ষায় অধিকতর মনোযোগ, বরাদ্দ দেওয়ার
ক্ষেত্রে জাতীয় অঙ্গীকার ও অগ্রাধিকার চিহ্নিত করে বস্তুনিষ্ঠ পরিকল্পনার
অভাব এবং বাস্তবায়ন করা কার্যক্রমগুলোর পরিবীক্ষণ যথাযথভাবে না হওয়ায়
কারিগরি শিক্ষার পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
সংবাদ
সম্মেলনে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেসব টুলস বা যন্ত্র
দিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করছে, সেগুলোর চাহিদাও বাজারে শেষ হয়েছে। ফলে
একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করার পরও বেকার থাকছেন। কিন্তু বিদেশি লোকজন
ঠিকই কাজ পেয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা কমিশন যেভাবে
কাজ করার কথা ছিল, সেভাবে করেনি। তারা সঠিকভাবে কাজ করলে কারিগরি
শিক্ষাব্যবস্থার এমন পরিস্থিতি হতো না। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো কীভাবে
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের উন্নয়ন করেছে, সেটির কোনো
অংশ আমাদের দেশে করা হয়নি। কোরিয়া, জাপান ও ভারত যেভাবে কারিগরি শিক্ষাকে
কাজে লাগিয়ে নিজেদের পরিবর্তন করেছে, সেটা আমরা করতে পারিনি। বর্তমান যুগে
গণিত, বিজ্ঞান ও অটোমেশনে দক্ষ না হলে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।
এসডিজি
বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে
বৃহত্তর এবং অধিক ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত করা টেকসই উন্নয়নের
আওতায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক। কিন্তু এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে
আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।
কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন ও যুগোপযোগী করতে করণীয়
বিষয়ে তিনি বলেন, আগামীর রাজনৈতিক ইশতেহারে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপারে
স্পষ্ট আলাপ থাকতে হবে। শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে মোট জিডিপির ৩ থেকে ৫ শতাংশ
বরাদ্দ থাকবে এমন নয়। কারিগরি শিক্ষার বৃত্তি, যন্ত্রাংশ ক্রয় ও অবকাঠামো
উন্নয়ন কত টাকা ব্যয় করা হবে, সেটিও স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। পাঠ্যসূচি থেকে
শুরু করে শিক্ষকদের আধুনিকায়ন করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন শিক্ষক নিয়োগ করতে
হবে। পুরোনো শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
কারিগরি
শিক্ষা নিয়ে সমাজে এখনো নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। সেগুলো ঝেড়ে ফেলতে হবে
জানিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কারিগরি শিক্ষাকে অনেকে ছোট করে দেখেন।
কারিগরি থেকে পাস করা একটি ছেলের চেয়ে বিবিএ পাস করা ছেলেকে বেশি মূল্যায়ন
করা হয়। এসব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে নিম্ন
আয়ের মানুষ ভালো কারিগর হয়ে উঠতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।