
পর্তুগালে ১৯৭৪ সাল থেকে ২৫ এপ্রিল জাতীয় স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তাই মহামারির ঝুঁকি উপেক্ষা করে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিশু থেকে শুরু করে আশি বা তদূর্ধ্ব বয়সের হাজার হাজার পর্তুগিজ নাগরিক স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য রাজধানী লিসবনের স্বাধীনতা সরণিতে উপস্থিত হয়েছিল।
২০২০ সালে সংক্রমণ রোধে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছিল। কার্লোস ফেরেইরা নামক এক বৃদ্ধ পর্তুগালের পতাকা হাতে একাই রেলিটি সম্পন্ন করেছিলেন। পর্তুগিজ সংবাদমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সেদিন পতাকা হাতে তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন- "আমি প্রতি বছর আসি এখানে; যত বাধা বিপত্তি থাকুক না কেন কারণ আমাদের সম্মানের প্রতিরক্ষা করতে হবে সত্যের সঙ্গে মর্যাদার সঙ্গে, সঠিক গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে, স্বাধীনতা, স্বাধীনতা।"
কিন্তু এ বছর সরকারের উচ্চপর্যায়ের দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে শেষপর্যন্ত আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পূর্বের মতো বিভিন্ন স্লোগানের কমতি ছিল না যেমন- স্বাধীনতা সব সময়, স্বাধীনতা মানে নাগরিক মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা, স্বাধীনতার কোনো মালিক নেই- ইত্যাদি দিতে দিতে রেলি ও কুচকাওয়াজ অংশগ্রহণ করেন। সবাই মাস্ক পরে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে, অনেকেই এক হাতে ২৫ এপ্রিলের প্রতীকী লাল রঙের কারনেশন ফুল এবং অপর হাতে জাতীয় পতাকা আকাশের পানে উঁচিয়ে রেখেছিলেন।
রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। তবে স্বাধীনতা সরণিতে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি উপস্থিত না হলেও স্বল্পসংখ্যক রাজনীতি দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে অনলাইনে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
১৯৭৩ সালে ক্যাপ্টেন মুভমেন্ট নামে পরিচিত সামরিক লোকদের একটি গোষ্ঠী গোপনীয়তার সাথে এমএফএ বা সশস্ত্র বাহিনীর মুভমেন্ট (মুভিমেন্টো দ্য ফোরসা আর্মাদাস) তৈরি করেছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মার্সেলো কেতানো এবং রাষ্ট্রপতি আমেরিকা টমাসের স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করার পথ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এটি করা হয়েছিল। সামরিক ক্ষেত্রের কৌশলবিদ সালুগিরা দ্য মাইয়া এবং মাস্টার মিলিটারি সমন্বয়কারী ওতেলো সরাইভা দে কারভালহোর নেতৃত্বে এবং জেনারেল কোস্টা গোমেসের সমর্থিত এই আন্দোলনটি ১৯ ৭৪ সালের ২৫ এপ্রিল মার্সেলো কেটানোকে সফলভাবে ক্ষমতাচ্যুত করে।
এই রক্তহীন অভ্যুত্থানের নাম কর্নেশনস বিপ্লব (রেবুলাসাও ডোস ক্রাভোস) নামেও অভিহিত করা হয়। এ নামটির প্রতিষ্ঠা পাওয়ার কারণ সাধারণ জনগণ কার্নেশন ফুলসহ সশস্ত্র বাহিনীকে স্বাগত জানায়, যা সশস্ত্র বাহিনী তা আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যারেলে মাথায় প্রবেশ করান। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দ্রুতই ছবি ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে এ কারণে সন ফুল হাতেই গণতন্ত্র ফিরে পাবার প্রতীক হিসেবে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেন।