Published : Wednesday, 19 May, 2021 at 12:00 AM, Update: 19.05.2021 1:42:31 AM
তিন বন্ধু। তিনজনই ছাত্র। বয়স ২২। নড়াইল শহর থেকে একসঙ্গে বের হয়েছিলেন একটি মোটরসাইকেলে। উদ্দেশ্য ছিল পদ্মা সেতু দেখা। সেটিই ছিল তাঁদের অন্তিম যাত্রা। ওই যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে তিনজনই নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নড়াইল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একসঙ্গে তাঁদের জানাজা হয়। নড়াইল পৌর কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়েছে। জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল নামে।
সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কৌরবালী এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে তাঁরা নিহত হন। তাঁরা হলেন গাজী রাফিউর, মো. গালিব ও শাহিনুর রহমান। তাঁরা নড়াইল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ২০১৬ সালের এসএসসি ব্যাচের শিার্থী। বিদ্যালয় থেকেই তাঁদের বন্ধুত্বের শুরু। গালিব নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে এবং শাহিনুর খুলনা আজম খান কমার্স কলেজে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। রাফিউর যশোরে একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা শেষ বর্ষে পড়তেন।
শুধু ওই তিন বন্ধুই নন, পদ্মা সেতু দেখার উদ্দেশ্যে এসএসসি-২০১৬ ব্যাচের ৯ বন্ধু একসঙ্গে বের হয়েছিলেন। তাঁদের বাহন ছিল চারটি মোটরসাইকেল।
শুধু ওই তিন বন্ধুই নন, পদ্মা সেতু দেখার উদ্দেশ্যে এসএসসি-২০১৬ ব্যাচের ৯ বন্ধু একসঙ্গে বের হয়েছিলেন। তাঁদের বাহন ছিল চারটি মোটরসাইকেল। নিহত তিনজন ছিলেন এক মোটরসাইকেলে। অন্যরা দুজন করে অন্য তিন মোটরসাইকেলে ছিলেন। এই যাত্রার সঙ্গী তাহমিদুল ইসলাম ও মাহির রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বিকেলে নড়াইল শহর থেকে বের হন। দুর্ঘটনাস্থলের কিছু দূর আগে থেকে ওই তিন বন্ধু দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল টেনে অন্যদের থেকে এগিয়ে যান। অন্যরা সামনে গিয়ে দেখেন, মোটরসাইকেলসহ তাঁরা সড়কের পাশে ছিটকে পড়ে আছেন। ঘটনাস্থলেই নিহত হন গালিব। মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঢোকার পথে রাফিউর মারা যান। আর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় শাহিনুরের।
রাফিউরের বাবা কলেজশিক। রাফিউরের আরেক বোন নবম শ্রেণির ছাত্রী। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা রেশমা পারভীন শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন। মাঝেমধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। গতকাল রওনা হওয়ার পর মা–বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল রাফিউরের। মা তাঁর স্মৃতি হাতড়িয়ে বিলাপ করছেন।
গালিবদের বাড়িতে গিয়েও দেখা যায় শোকার্ত মানুষের ঢল। তিন ভাইয়ের মধ্যে গালিব মেজ। তাঁর মা নাদিরা আহমেদকে স্বজনেরা সান্ত¡না দিচ্ছেন। তিনি শোকে বুক চাপড়াচ্ছিলেন। গালিব বের হওয়ার সময়ে কোথায় যাচ্ছেন তা মাকে বলে যাননি। শুধু একনজরে দেখেছিলেন ছেলের হন্তদন্ত ছুট।
দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মেজ ছিলেন শাহিনুর। তাঁদের বাড়িতেও মাতম চলছিল। এলাকার মানুষ জড়ো হয়ে পরিবারকে সান্ত¡না দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ছেলে হারানোর শোকের কাছে সেই সান্ত¡না ফিকে হয়ে যাচ্ছিল।