করোনাভাইরাসের
কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশও
এর বাইরে নয়। মহামারির তীব্রতার মধ্যেই গতকাল শুরু হয়েছে জাতীয় সংসদের
বাজেট অধিবেশন। মহামারি শুরুর পর এক বছর আগে স্বাস্থ্য প্রণোদনা ও সামাজিক
সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা
কামাল। তিনি এরই মধ্যে বলেছেন, দেশের মানুষ ও ব্যবসায়ীদের বাঁচানোই হবে
তাঁর এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য।
বাজেট হচ্ছে সরকারের এক বছরের
আয়-ব্যয়ের আগাম হিসাব। সেবা থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে রাষ্ট্রের নাগরিকরা
যে সেবা ও উন্নয়ন পেতে চায় বা রাষ্ট্র যে সেবা নিশ্চিত করতে চায়, তা এই
বাজেটের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়। বাজেটে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার ওপর
নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন কর্মকা-। শুধু অবকাঠামোগত নয়, সব ধরনের উন্নয়নই
বাজেটের ওপর নির্ভরশীল। দেশের শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব
খাতেই বরাদ্দ থাকে বাজেটে। শিল্প খাতের উন্নয়নে নেওয়া ব্যবস্থাদির উল্লেখ
করে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, করোনাকালেও
ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। করোনা মোকাবেলাকে প্রাধান্য
দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আসন্ন বাজেট। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কর্মসংস্থান, কৃষি,
দেশীয় শিল্প ও বিনিয়োগকে। স্বাস্থ্য খাতকে দেওয়া হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্ব।
করোনা মোকাবেলা ও ভ্যাকসিন কেনা বাবদ থাকছে পৃথক থোক বরাদ্দ। করোনা
মোকাবেলায় যেসব পণ্য আমদানি করতে হয়, সেগুলো থাকবে করের আওতামুক্ত। এ ছাড়া
করোনাসেবা তথা স্বাস্থ্যসেবা বিকেন্দ্রীকরণ করতে নেওয়া হচ্ছে
মাস্টারপ্ল্যান। এরই সঙ্গে কৃষি, সমাজকল্যাণ, খাদ্য ও দুর্যোগ
ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে বিনিয়োগের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে বলে
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এসএমই খাতে ব্যাংক থেকে ঋণপ্রাপ্তির
প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। তাঁদের মতে, আগামী বাজেট হতে হবে মানুষকে কাজে
রাখার বাজেট। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বহীন ও অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয়
কমিয়ে উৎপাদনশীল, সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসৃজন প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়াতে
হবে। সরকারি খাতের বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ বাড়ানোর
সুযোগ রাখতে হবে। দেশের ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা—কভিড-১৯-এর চ্যালেঞ্জ
মোকাবেলায় ব্যবসা-সহায়ক কর সুবিধা। বেশির ভাগ উন্নয়নশীল দেশের তুলনায়
বাংলাদেশে করপোরেট করের হার বেশি। শুল্ক-করে ছাড়ের প্রত্যাশা করেন দেশের
বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশের গত ৫০ বছরের সাফল্য এক মহামারির
ধাক্কায় অনেকটাই ঝুঁকির মুখে এসে পড়েছে। জনসংখ্যার বড় একটি অংশ
দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি
কর্মসংস্থানসহ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি বাজেটে
গুরুত্ব পাবে এটাই সবার প্রত্যাশা। বাজেটে জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে বলেই
আমরা আশা করি। এছাড়া নাগরিকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি
প্রাধান্য পাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।