দেড় বছর আগে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী মো. রুবেল। করোনাভাইরাসের কারণে কখনও বাংলাদেশ কখনও মালয়েশিয়ায় লকডাউনে ফ্লাইট বন্ধ। অপেক্ষা থেকে থেকে হতাশায় ছিলেন তিনি। এ সময়ে দেনা হয়েছে আড়াই লাখ টাকারও বেশি। মালয়েশিয়ায় কর্মস্থলে ফিরতে দেশটির নিয়ম অনুযায়ী মাই ট্রাভেল পাসে অ্যাপ্রুভালে পেয়েছেন, রি এন্ট্রি ভিসার জন্য দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন রুবেল।
জানা গেছে, ৩০ বছর বয়সী মো. রুবেলের টাঙ্গাইলের সখীপুরের দরিয়াপুর গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও চার বছরের ছেলে নিয়ে ছিল রুবেলের সংসার। তার পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে তার বন্ধু মো. রনি শিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বুধবার (২ জুন) সকালে স্ট্রোক করে মারা গেছেন প্রবাসী মো. রুবেল। বেশ কিছুদিন ধরেই দেনা পরিশোধ আর কাজে ফেরা নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন সে।
রনি শিকাদার নিজেও মালয়েশিয়া প্রবাসী। তিনিও ছুটিতে এসে দেশে আটকা পড়ে আছেন। রনি শিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার সঙ্গে রুবেলের যোগাযোগ ছিলো নিয়মিত। সে ঋণ নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল। যখন মালয়েশিয়ায় মাই ট্রাভেল পাসে অ্যাপ্রুভাল হলো তখন তাকে নিয়ে আমিও ঢাকায় এসেছিলাম। লকডাউনের মধ্যে সিএনজিতে করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ঢাকায় আসেছিলাম রি-এন্ট্রি ভিসার আবেদন করতে। নতুন করে মালয়েশিয়ার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সংবাদ শুনার পর থেকে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তার ওপর বাংলাদেশে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ১ জুন নির্দেশনা দেয় ৪ জুন থেকে মালয়েশিয়ায় যাওয়া যাবে না। এতে সে আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে, মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। মানসিক চাপ সামলাতে না পেরে সে স্ট্রোক করে মারা গেছে।
জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর ধরে প্রবাসে ছিলেন রুবেল। প্রবাসে গিয়ে পরিবারের হাল ধরেন তিনি। দুই বোনের বিয়ে, নিজের সংসার, বাবা মায়ের দায়িত্ব ছিলো তার কাঁধে। দেশে এসে আটকা পড়ার পর চলতে না পেরে ঋণ করেন তিনি। তবে প্রতিনিয়ত পাওনাদারের চাপ, মালয়েশিয়া কর্মস্থলে না ফেরার অনিশ্চয়তায় মানসিকভাবে চাপে ছিলেন রুবেল।
দেশে এসে আটকে পড়া মালয়েশিয়া প্রবাসীরা মঙ্গলবার (১ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে দ্রুত কর্মস্থলে ফিরতে সরকারের সহায়তার জন্য। তাদের তথ্য মতে, কমপক্ষে ২৫ হাজার প্রবাসী দেশে আটকে আছেন। গত বছর সেটেম্বর, নভেম্বর মাসে ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও যোগযোগ করেন তারা। তবে কোন সুফল না পেয়ে এবার মানববন্ধনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও চিঠি দেন।
ছুটিতে এসে আটকে পড়া প্রবাসীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ প্রবাসী বন্ধু মালয়েশিয়া’র সাধারন সম্পাদক এবি রুবেল ভূঁইয়া বলেন, করোনাকালে এই দেড় বছর দেশে আটকে যাওয়া আমরা দেখছি সরকারের কোনও সাহায্য সহযোগিতা আমাদের দুয়ারে আসেনি। সরকারি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে যে কাগজপত্র দিতে হয়, তাতে অনেরকের পক্ষে ঋণ পাওয়া অসম্ভব। বিভিন্নভাবে ঋণ নিয়ে অনেকে বিপর্যস্ত। এভাবে প্রবাসীরা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মো. রুবেলে মানসিক চাপ সামলাতে না পেরে স্ট্রোক করে মারা গেছে। সরকার যেহেতু বিদেশে মারা গেলে প্রবাসীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়, সে হিসেবে রুবেলের পরিবারকেও সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে, আমরা এ দাবি জানাই।