
দেশে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এ কারণে গত ২৩ জুলাই থেকে ৫
আগস্ট পর্যন্ত মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। পরে
সময় বাড়িয়ে তা ১০ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু অর্থনীতি ও মানুষের
জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ১ আগস্ট থেকে গার্মেন্টসহ রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা
খুলে দেওয়া হয়। কয়েক দিনের জন্য সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচলেরও অনুমতি
দেওয়া হয়। এখন কর্মস্থলে যাতায়াত করা নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এ
অবস্থায় ১১ আগস্ট থেকে কঠোর বিধি-নিষেধ পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়ার চিন্তা
করছে সরকার। এরই মধ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও ঠিক করা হয়েছে,
যা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করার অপোয় রয়েছে।
প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা
যায়, পর্যায়ক্রমে লকডাউন তুলে নেওয়ার পর সরকার সবচেয়ে জোর দেবে মানুষের
মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধিগুলো পালনের ওপর। পাশাপাশি ব্যাপক মানুষকে টিকার
আওতায় আনার ওপরও সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হবে। দোকানপাট ও পরিবহন
শ্রমিকদের টিকা প্রদানে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্ব পেতে পারে। গত
মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এমন আরো কিছু
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত
করার জন্য পুলিশকে বিশেষ মতা প্রদানের বিষয়টিও চিন্তা-ভাবনায় রয়েছে।
দোকানপাট ও শপিং মল খুলে দেওয়া হলে সেগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমতো মানা
হচ্ছে কি না তা নজরদারিতে রাখা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে জরিমানাসহ
শপিং মল বন্ধ করে দেওয়া হবে। গণপরিবহন পরিচালনার েেত্রও কিছু বিধি-নিষেধ
থাকবে। সারা দেশেই বাস-লঞ্চ-ট্রেনে অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন করতে হবে।
স্থানীয় প্রশাসন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিবহনের
সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এখন হাসপাতালগুলোতে যেভাবে রোগীর চাপ বাড়ছে,
তাতে হাসপাতালগুলো সমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
প্রাথমিক বা কম অসুস্থ কভিড রোগীদের আবাসিক হোটেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার
বিষয়টিও সরকারের জরুরি চিন্তা-ভাবনায় রয়েছে। একই সঙ্গে কয়েকটি ফিল্ড
হাসপাতাল করার কথাও ভাবছে সরকার।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা দুনিয়ায়ই
ডেল্টা ভেরিয়েন্ট নতুন করে সংক্রমণের জোরালো ঢেউ সৃষ্টি করেছে। এমনকি বেশির
ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়ে গেছে এমন সব দেশেও সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে।
বাংলাদেশেও নতুন ৯০ শতাংশের বেশি ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত। তাই আমাদের
সাবধান হতেই হবে। নতুবা হাসপাতাল বাড়িয়েও শেষ রা করা যাবে না। ভারতে যেমন
পথে-ঘাটে মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, তেমন অবস্থা বাংলাদেশেও হতে পারে। এটা
ঠিক, লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতি তিগ্রস্ত হয়, মানুষের জীবন-জীবিকা
ব্যাহত হয়, কষ্ট বেড়ে যায়। সে কারণেই সরকার বিধি-নিষেধ পর্যায়ক্রমে তুলে
নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কিন্তু মানুষের চলাচল একেবারে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে
পড়াটাও হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আমরা আশা করি, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে
কঠোর নজরদারি থাকবে।