বাংলাদেশ
দ্রুত এগিয়ে চলেছে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে,
কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গপথ, চার লেন-আট লেন মহাসড়কসহ যোগাযোগ
অবকাঠামো খাতে বিপুল উন্নতি হয়েছে ও হচ্ছে। জ্বালানি ও বিদ্যুতের সমস্যা
কেটেছে। নতুন পায়রাবন্দরসহ আগের সমুদ্রবন্দরগুলোর সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের কাজ সমাপ্তির পথে। ফলে বাংলাদেশে
অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগও। কিন্তু
বাংলাদেশে এখনো এমন অনেক ক্ষেত্র আছে, যেগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ আরো বেশি
করে আসার সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের প্রতি সেই আহ্বানই
জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোরে
প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ‘ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’ আয়োজিত ‘বাংলাদেশ
ফরওয়ার্ড : দ্য ফ্রন্টিয়ার ফর গ্রোথ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে তিনি
জানান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি
প্রক্রিয়াকরণ, নীল অর্থনীতি, পর্যটন ও হাই-টেক পার্কের মতো বিভিন্ন
প্রতিশ্রুতিশীল খাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা আরো বেশি বিনিয়োগ করতে
পারেন।
বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের মতো বৈশ্বিক শিল্পোদ্যোক্তারাও
তাঁদের সঞ্চিত অর্থ কোথাও না কোথাও বিনিয়োগ করতে চান। সে ক্ষেত্রে তাঁরা
বিনিয়োগের নিরাপত্তা, ব্যবসায়ের পরিবেশ, মুনাফা, মুনাফা নিজ দেশে নিয়ে
যাওয়ার সুযোগ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ আরো অনেক বিষয় বিবেচনা করেন। এসব দিক
থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের চোখে বাংলাদেশ এখন অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে
রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
ব্যালান্স অব পেমেন্টেও বাংলাদেশের অবস্থান এখন অনেক ভালো। বাংলাদেশের
রপ্তানি বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় অনেক বেড়েছে।
ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারও অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশ এখন বিদেশি
বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। এখন প্রয়োজন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা
দূর করা। ব্যবসায় সহজীকরণ করার লক্ষ্যে নানা রকম উদ্যোগ নেওয়া। প্রয়োজন
দুর্নীতি কমানো এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন। বর্তমান সরকার সে
কাজগুলোও দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে। গোলটেবিল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ
করেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের
পরিমাণ আরো বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল অনুঘটকের
ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ একটি ছোট্ট ভূখণ্ড অথচ রয়েছে বিপুল
জনসংখ্যা। তাঁদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে প্রয়োজন ব্যাপক শিল্পায়ন।
সেখানে অভ্যন্তরীণ শিল্পোদ্যোগকে যেমন এগিয়ে নিতে হবে, তেমনি বিদেশি
বিনিয়োগ আকর্ষণেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এটা ঠিক, শিল্পায়নের অনেক
পূর্বশর্ত পূরণ করায় বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি শিল্পায়নে কিছুটা গতি এসেছে।
কিন্তু এখনো অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে। এখনো গ্যাসের সমস্যায় ভুগছে বহু
শিল্প-কারখানা। যোগাযোগের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে আরো অনেক দূর যেতে হবে।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতি কমাতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে
যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তাদের আকৃষ্ট করতে নানা রকম উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা আশা
করি, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে এই লক্ষ্যে দ্রুত প্রয়োজনীয়
পদক্ষেপ নেওয়া হবে।