করোনা
মহামারি এখনো সারা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। করোনার টিকা আবিষ্কৃত হলেও সব
দেশের সব মানুষ সমানভাবে তা পাচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, এখন
পর্যন্ত যত টিকা উৎপাদিত হয়েছে তার ৮৪ শতাংশই গেছে উচ্চ ও উচ্চ-মধ্যম আয়ের
দেশগুলোতে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশগুলো টিকা পেয়েছে ১ শতাংশেরও কম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান এই বৈষম্য
দ্রুত দূর করার দাবি জানান। শুক্রবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম
অধিবেশনে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে টিকা থেকে দূরে
রেখে কখনোই মহামারি থেকে টেকসই পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। কেউই পুরোপুরি নিরাপদ
থাকতে পারব না।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলতি অধিবেশনে সর্বশেষ
বিশ্বপরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার
নিয়ে মোট ১৭ বার বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের দেখানো পথে শেখ হাসিনা বরাবরের মতো এবারও বাংলায় তাঁর
ভাষণ দিয়েছেন। বিশ্বনেতাদের বিবেচনার জন্য তিনি তাঁর ভাষণে ছয় দফা প্রস্তাব
তুলে ধরেছেন। এগুলো হচ্ছে : এক. কভিডমুক্ত বিশ্ব গড়তে সর্বজনীন ও সাশ্রয়ী
মূল্যে টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা; দুই. ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর
কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, ক্ষতিপূরণ এবং টেকসই অভিযোজনে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি
হস্তান্তর; তিন. করোনায় বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তার
জন্য ডিজিটাল সরঞ্জামাদি ও সেবা, ইন্টারনেট ও শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নে
বিনিয়োগ করা; চার. উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে থাকা বাংলাদেশের মতো
দেশগুলোর জন্য আরো প্রণোদনাভিত্তিক কাঠামো সৃষ্টি; পাঁচ. কভিডে ক্ষতিগ্রস্ত
অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা; এবং ছয়. রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে
বিশ্বসম্প্রদায়কে আরো জোরালো ভূমিকা রাখা ও সহযোগিতা করা। শেখ হাসিনা বলেন,
জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির অন্যতম। জিডিপিতে
বিশ্বে ৪১তম। গত এক দশকে দারিদ্র্যের হার ৩১.৫ থেকে ২০.৫ শতাংশে নেমে
এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতের বিভিন্ন সূচকে
অগ্রগতি, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস এবং গড় আয়ু বৃদ্ধির মতো
গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, নারীর রাজনৈতিক
ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।
বাংলাদেশসহ আরো কিছু দেশে
উন্নয়নের যে ধারা সূচিত হয়েছে তা ধরে রাখতে হলে এবং পেছনে পড়ে থাকা
দেশগুলোকে এগিয়ে আনতে হলে অনেক বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে বৈশ্বিক
উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিতে হবে। নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের
অগ্রগতির পথে এখনো অনেক বাধা রয়েছে। বাংলাদেশ সাধ্যমতো সেগুলো মোকাবেলা
করছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা
সংকট পর্যন্ত এমন কিছু বাধা রয়েছে, যেগুলো মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা
জরুরি। এসব ক্ষেত্রে আমরা আশা করি, জাতিসংঘসহ বিশ্বনেতারা সময়োপযোগী
পদক্ষেপ নেবেন।