দেশে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন খুবই কম। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের
হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের এমন সাফল্য
বিশ্বব্যাপী প্রশংসিতও হয়েছে। মহামারি মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থানে রয়েছে। জাপানের নিক্কি এশিয়া বিশ্বের
১২১টি দেশকে নিয়ে করোনা মোকাবেলায় সাফল্যের যে তালিকা তৈরি করেছে তাতে
বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ২৬তম। বাংলাদেশের এই সাফল্য অবশ্যই প্রশংসার
যোগ্য এবং অনেক বড় স্বস্তির বিষয়। কিন্তু করোনা মোকাবেলায় গৃহীত উদ্যোগে
শৈথিল্য দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। টিকা কর্মসূচি দ্রুত এগিয়ে নেওয়া এবং
সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর আগের মতোই কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।
আমাদের
মনে রাখতে হবে যে এর আগেও শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নামার পর আবার তা
দ্রুত বেড়ে গিয়েছিল এবং অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছিল। আবারও যেকোনো সময়
এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তেমন অনাকাঙ্ক্ষিত
পরিস্থিতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রধান পদক্ষেপ হচ্ছে দ্রুততম সময়ে সম্ভাব্য
সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষকে টিকা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা। সরকার অবশ্য এ
ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। টিকা সংগ্রহের পরিস্থিতি এখন অনেক
ভালো। এভাবে চললে আগামী মার্চের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা কর্মসূচির
আওতায় নিয়ে আসা খুব একটা কঠিন হবে না। দৈনিক টিকা প্রদানের সংখ্যাও দ্রুত
বাড়ছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ লাখ ডোজ টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ
ছাড়া প্রতি মাসে এক বা দুইবার এক বা দুই দিনের জন্য বিশেষ টিকা অভিযান
পরিচালনার লক্ষ্য রয়েছে। প্রতিটি অভিযানে আরো ৭০ থেকে ৮০ লাখ মানুষকে টিকা
প্রদান করা হবে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, টিকা প্রদানের গতি কাঙ্ক্ষিত
মাত্রায়ই চলতে থাকবে। লক্ষণীয় যে টিকা গ্রহণের পরও অনেক মানুষ করোনাভাইরাসে
আক্রান্ত হয়। তাই টিকা গ্রহণের পর স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কোনো রকম
উদাসীনতা দেখানো যাবে না। অনেক দেশেই ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার
পরও নতুন করে সেসব দেশে ভয়াবহরূপে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে। তাই টিকা
নেওয়ার পরও মানুষ যাতে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তা নিশ্চিত করতে
হবে। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টির জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি
গণপরিবহন, অফিস-কারখানা ও অন্যান্য জনসমাগমের স্থানগুলোতে মানুষ যাতে
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
করোনায় বিশ্ব হারিয়েছে
৪৮ লাখের বেশি মানুষ, আর বাংলাদেশ হারিয়েছে ২৭ হাজারের বেশি মানুষকে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মৃত্যুর বাস্তব সংখ্যা এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। শুধু
বহু মানুষের মৃত্যুই নয়, বিশ্ব অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আয়-উপার্জন
হারিয়ে বহু মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। তাই মহামারি নির্মূল না
হওয়া পর্যন্ত করোনাবিরোধী যুদ্ধ আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে।