ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
এস কে সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ড
Published : Wednesday, 10 November, 2021 at 12:00 AM, Update: 10.11.2021 12:50:08 AM
এস কে সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ডনিজস্ব প্রতিবেদক :সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে মানিলন্ডারিংয়ে সাত আর অর্থ আত্মসাতের মামলায় চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া মামলার আট আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় দুইজনকে দেওয়া হয়েছে খালাস।
মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। তবে দুই ধারার সাজা এক সঙ্গে চলবে বলে ১৮২ পাতার রায়ে উল্লেখ করেন বিচারক। এছাড়া এস কে সিনহার ৭৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
মানিলন্ডারিং আইনে এস কে সিনহাকে সাত বছর কারাদণ্ড ও ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া অর্থ আত্মসাতের মামলায় চার বছর ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীমকে চার বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী), রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়কে দেওয়া হয়েছে তিন বছরের কারাদণ্ড।
ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন ও ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারীকে তিন বছররে কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান এবং একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহারকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে মাহবুবুল হক চিশতি কারাগারে ছিলেন। রায় ঘোষণার আগে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক রয়েছেন। অপর ছয় আসামি জামিনে ছিলেন। তারা আদালতে হাজির হন। এদের মধ্যে শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা বাদে অপর আসামির সাজা হয়। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
রায় ঘোষণার পর দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ আলী সালাম বলেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
এর আগে এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল ২১ অক্টোবর। বিচারক সেদিন রায় ঘোষণা না করে ৯ নভেম্বর পরবর্তী রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। এ নিয়ে দুই দফায় এসকে সিনহার রায় ঘোষণার তারিখ পেছায়।
২০১৯ সালের ১০ জুলাই মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলা করেন সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।
এরপর চলতি বছরের ২৯ আগস্ট আত্মপক্ষ সমর্থনে সাত আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন এবং আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন।
তারা হলেন- ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী), ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, টাঙ্গাইলের মো. শাহজাহান ও একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা।
মামলার আসামিদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন মাহবুবুল হক চিশতী। আর বাকি ছয়জন জামিনে। অন্যদিকে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সফিউদ্দিন আসকারী আহমেদ, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক রয়েছেন। পলাতক থাকায় তারা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেননি। এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ২১ জন।
এ মামলায় ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আদালতে এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদ। ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, আসামি মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় দুটি চলতি হিসাব খোলেন। ৭ নভেম্বর তারা দুই কোটি করে চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। ব্যাংক হিসাব খোলা ও ঋণ আবেদনপত্রে দুজনই বাড়ির নম্বর ৫১, সড়ক নম্বর ১২, সেক্টর ১০, উত্তরা আবাসিক এলাকা- এ ঠিকানা উল্লেখ করেন। ওই বাড়ি সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। ঋণ আবেদনে জামানত হিসেবে রণজিৎ চন্দ্র সাহার স্ত্রী সান্ত্রী রায় সিমির সাভারের ৩২ শতাংশ জমি দেখানো হয়। এ দুজনই এস কে সিনহার পূর্বপরিচিত। ঋণ আবেদন দুটি কোনো রকম যাচাই-বাছাই করা হয়নি। রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ ও ব্যাংকের নিয়মনীতিও মানা হয়নি।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।