জলবায়ু
পরিবর্তনের তিকর প্রভাব নিয়ে এখন আর কোনো সংশয় নেই। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা
ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। অনেক দেশেরই উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে
গেছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় নি¤œাঞ্চলেও তার প্রভাব ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহেও পূর্ণিমার জোয়ারে বাঁধ উপচে সাতীরার বেশ কিছু গ্রাম তলিয়ে
গেছে। উপকূলীয় অনেক শহরও প্রায়ই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। লবণাক্ততার
কারণে ফসল ও গাছপালার ব্যাপক তি হচ্ছে। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলে খরা প্রবণতাও
ক্রমেই বাড়ছে। বদলে যাচ্ছে বৃষ্টিপাতের ধরন। বাড়ছে বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের
পরিমাণ ও তীব্রতা। দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায়ও উঠে এসেছে
বাংলাদেশের সামনে থাকা ঝুঁকিগুলো। বিশ্বব্যাংকের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা
হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের তিন-চতুর্থাংশ
বা ১৩ কোটির বেশি মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক নিচে নেমে যাবে। অথচ
কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানো কিংবা সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত দেশগুলোকে
সহায়তার েেত্র ধনী দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি যেমন কম, তার চেয়েও কম হচ্ছে
প্রতিশ্রুতি রার তাগিদ। এমন প্রোপটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
জলবায়ুযুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ডিপ্লোম্যাট
ম্যাগাজিনের এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ঐক্যবদ্ধ না
হলে জলবায়ুযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত।
এ বছরের শেষ দিকে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত
হবে ২৬তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৬)। তার আগেই উন্নত দেশগুলোর প থেকে
কার্বন নিঃসরণ কমানোর সুস্পষ্ট পরিকল্পনা প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা ৪৮টি
উন্নয়নশীল দেশের জোট কাইমেট ভালনারেবল ফোরামেরও (সিভিএফ) নেতা। তিনি ওই
জলবায়ু সম্মেলনকে অর্থবহ করতে সিভিএফ-কপ-২৬ ঐক্যেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, কপ-২৬ সম্মেলনের আগে আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল একটি জলবায়ু সম্মেলনের
ডাক দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানেও প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনাসহ ৪০ জন বিশ্বনেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ডিপ্লোম্যাটে
প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “বাংলাদেশকে বলা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ‘গ্রাউন্ড
জিরো’। এরই মধ্যে ৬০ লাখ বাংলাদেশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুহারা
হয়েছে। তার পরও আমরা এক কোটি ১০ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলেছি, আর সে
জন্য আমাদের পরিবেশগত মূল্যও দিতে হচ্ছে। এর তিপূরণ আমাদের কে দেবে?”
শিল্প
বিপ্লবের পর থেকে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আজ যে
মাত্রায় পৌঁছেছে, তাতে সিভিএফভুক্ত ৪৮টি দেশের অবদান অতি নগণ্য। ৮০ শতাংশ
কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী জি-২০ভুক্ত দেশগুলো। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের
কারণে সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত হচ্ছে সিভিএফভুক্ত দেশগুলো। প্রধানমন্ত্রী
লিখেছেন, বড় অর্থনীতির দেশগুলো প্যারিস সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য ১০০
বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিলে বাস্তবে তহবিল পাওয়া গেছে এর চেয়ে অনেক
কম। এসব কারণে কপ-২৬ সম্মেলনে ঢাকা-গ্লাসগো-সিভিএফ-কপ-২৬ ঐক্যের যে ঘোষণা
আশা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তা অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা আশা করি,
বিশ্বনেতৃত্ব জলবায়ু পরিবর্তনের তিকর প্রভাব থেকে বিশ্বকে রায় আরো কার্যকর
ভূমিকা পালন করবেন।