ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
মতিন খসরুর মৃত্যু: করোনাকালে বার সভাপতির শূন্যপদ পূরণ হবে কীভাবে?
Published : Tuesday, 4 May, 2021 at 12:00 AM
দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু। কিন্ত দায়িত্ব বুঝে পেয়ে সভাপতির চেয়ারে বসার আগেই করোনাভাইরাসে তার মৃত্যু হয়। মতিন খসরুর মৃত্যুতে আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদ শূন্য হয়। এখন শূন্যপদের বিষয়ে আইনজীবীদের মধ্যে চলছে নানা গুঞ্জন। সবার মুখে এখন প্রশ্ন- কে হচ্ছেন বার সভাপতি? সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হতে পারে? আর যদি নির্বাচন হয়, তাহলে করোনাকালে এটা সম্ভব কি-না? (সূত্র: জগো নিউজ)
শূন্যপদ পূরণে করণীয় নির্ধারণে ৪ মে বার সমিতির বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে এই শূন্যপদ পূরণের প্রক্রিয়া কী হতে পারে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
সভাপতির শূন্যপদ পূরণের প্রক্রিয়া নিয়ে আইনজীবীরা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তবে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদ শূন্য হওয়ার পর বার অ্যাসোশিয়েশনের রুল বা সংবিধান অনুযায়ী সভা আহ্বান করে এক মাসের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে সুপ্রিম কোর্টের অনেক আইনজীবী মত দিয়েছেন।
আবার কেউ কেউ বলছেন, বারের নির্বাচিত সিনিয়র সহ-সভাপতি (ভাইস প্রেসিডেন্ট) ওই পদে আসীন হবেন। তবে সেটা হবে নির্বাচিত প্রতিনিধির মতামতের ওপর ভিত্তি করে। কোনো কোনো আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বারের সংবিধান বা রুলস অনুযায়ী ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন। করোনাকালে চাইলে নির্বাচন কমিশন দুই দিনে নির্বাচন করতে পারেন বলেও মত আইনজীবীদের।
গত ২৬ এপ্রিল সমিতির নবনির্বচিত সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৪ মে বেলা ২টার সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এক বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সভাপতির শূন্যপদ পূরণে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রের বিধান তুলে ধরা হবে। সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে, সেখানেই সিদ্ধান্ত হতে পারে।
সভাপতির শূন্যপদ পূরণের প্রক্রিয়া কী হবে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আর্টিকেল ১৬ ধারায় আছে, স্পেশাল জেনারেল মিটিং ডাকতে হবে, যে সিদ্ধান্তই নেয়া হোক না কেন। এ ধরনের পরিস্থিতি কখনো হয়নি যে, দায়িত্ব পাওয়ার পর কোনো সভাপতি মারা গেছেন। তবে একটা ঘটেছিল, যখন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সভাপতি থাকা অবস্থায় মন্ত্রী হয়েছিলেন। সেটা ছিল অল্প কিছুদিনের জন্য। সভাপতি হওয়ার পর পরই কিন্তু না। সেই পরিস্থিতি ছিল অন্যরকম।’
তিনি বলেন, ‘বিশেষ সভায় এটা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে, যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হোক না কেন সেটা করোনাকালে সম্ভব কি-না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন সিনিয়র এই আইনজীবী।’
সাবেক মন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, ‘নিয়ম হলো, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে বছরে একবারই নির্বাচন হয়। কিন্তু কোনো সভাপতি পদে আসীন হওয়ার পর-পরই মৃত্যুবরণ করার মতো ঘটনা আমার জানা মতে এর আগে ঘটেনি। সম্ভবত এটাই প্রথম। আর এখন আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে শূন্যপদে নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি পদে নতুন কেউ আসবেন।’
এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘এর আগে এমন পরিস্থিতি আসেনি। এবারই প্রথম সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সিমিতির নির্বাচনের পরেই ভোটে বিজয়ী সভাপতি মারা গেছেন। এ অবস্থায় সভাপতির শূন্যপদ পূরণ করার জন্যে ভাইস চেয়ারম্যান যে আছে তাকে দায়িত্ব দিলেই হবে। নির্বাচন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণ করে চেয়ারে বসার আগেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মৃত্যুতে এই প্রথম একটি সঙ্কট তৈরি হয়েছে। যে কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোশিয়েশনে নিয়মই আছে, এমন পরিস্থিতিতে এক মাসের মধ্যে বিশেষ সভা আহ্বান করে নির্বাচনের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণ করতে হবে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘এ অবস্থায় সভাপতির শূন্যপদ পূরণে ভাইস প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব দেয়া হবে। সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ আইনমন্ত্রী হওয়ার সময় তার সভাপতির পদ শূন্য হয়েছিল। পরে সেখানে যিনি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তাকে সভাপতি করা হয়েছিল। এ হিসেবে মার্চ মাসে থেকে শুরু হয়ে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে দিনক্ষণ গণনা শুরু হবে। যেখানে এক মাসের মধ্যে পদের শূন্যস্থান পূরণ করার বিধান রয়েছে। তবে সেটা আলোচনা সাপেক্ষে, কবে কখন থেকে মাস গণনা নির্ধারণ করা হবে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক তিনবারের সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোশিয়েশন) আর্টিক্যাল ১৬-তে বলা আছে, ডেথ, রিমুভাল (অপসারণ) ও রেজিগনেশন (পদত্যাগ)-এই তিনটা কারণ হলে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন দিতে হবে। আর সেই নির্বাচন ৩০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। আশা করছি, সুপ্রিম কোর্ট বারের পক্ষ থেকে ৪ মের বিশেষ সভায় সিদ্ধান্ত আসবে, সভাপতির শূন্পদে কীভাবে নির্বাচন হবে।’
ভাইস প্রেসিডেন্টকে এই পদ দেয়া যাবে বলে অপর আইনজীবীদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তা হলে তো আবার ওই পোস্টটি শূন্য হবে। সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতেই হবে।’
করোনাকালে নির্বাচন সম্ভব কি-না জানতে চাইলে এ বিষয়ে ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বলেন, ‘শুধু প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করা সম্ভব। নির্বাচন কমিশন চাইলে দুই দিনে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারেন। মহামারি হলেও কিছু করার নেই; সাংবিধানিক বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে।’
সাবেক আইনমন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু ২০২১-২২ মেয়াদের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ১৪ এপ্রিল ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান তিনি।