ভারতের বিপক্ষে আজ নামছে বাংলাদেশ ফুটবল দল।ভারতের বিপক্ষে আজ নামছে বাংলাদেশ ফুটবল দল।
সেই ২০০৩ সালের কথা। সর্বশেষ ঢাকায় তীব্র শীতের মাঝেও শক্তিশালী ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সাফ ফুটবলের সেমিফাইনালে রোকনুজ্জামান কাঞ্চনের পর মতিউর মুন্না গোলে জয়ের বন্দরে পৌঁছেছিল তারা।
এরপর কেটেছে ১৮টি বছর। ভারতের সঙ্গে একাধিকবার বিভিন্ন প্রতিযোগিতা কিংবা প্রীতি ম্যাচে দেখা হয়েছে যদিও। কিন্তু আর জয়ের উল্লাসে মাততে পারেনি। আজ বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে সেই ভারতেরই মুখোমুখি জামাল ভূঁইয়ারা। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে দুই দলের আগুনে ম্যাচটি। সরাসরি দেখাবে টি স্পোর্টস ও গাজী টিভি।
তবে সর্বশেষ লড়াইয়ের কারণে এখন একটিই প্রশ্ন ফুটবলপ্রেমীদের। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ দিয়ে ১৮ বছরের আক্ষেপ ঘুচাতে পারবে তো বাংলাদেশ?
আগের ম্যাচে তুমুল লড়াই হয়েছিল বলেই এই ম্যাচ নিয়ে সবার বাড়তি প্রত্যাশা। এর আগে কলকাতায় প্রায় ৭০ হাজার দর্শকদের সামনে লড়াই করেছিল জামাল ভূঁইয়ারা। শুরুর দিক থেকেই তারা শক্তিশালী ভারতকে ভড়কে দিয়েছিল। কিন্তু অ্যাওয়ে সেই ম্যাচে এগিয়ে গিয়েও ১-১ গোলে ড্র করাটা ছিল অনেকটা দুর্ভাগ্যের। সেই পারফরম্যান্সের পরই বাংলাদেশ দল আশায় বুক বেঁধেছিল। হোম ম্যাচে নিজেদের চিরচেনা পরিবেশে ‘দেখে নেবে’ সুনীল ছেত্রীদের। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে পরিকল্পনা এগোয়নি ঠিকমতো।
এখন সেই ‘হোম ম্যাচ’খেলতে হচ্ছে কাতারের দোহায় জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে। তাতে কী? ভেন্যু পাল্টালেও সেটি জেমি ডের শিষ্যদের মনোবলে একটুও চিড় ধরাতে পারেনি। কলকাতার ম্যাচের মতো লড়াই করতে মুখিয়ে বাংলাদেশ। প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে বিনা ‘যুদ্ধে’ এক বিন্দু জায়গা ছাড়তে নারাজ!
অবশ্য বাছাইয়ে দুই দল যে স্বস্তিতে আছে তা কিন্তু নয়। ‘ই’ গ্রুপে ৬ ম্যাচে বাংলাদেশ ২ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে। আর এক পয়েন্ট বেশি নিয়ে ভারত ঠিক ওপরে। এই ম্যাচ জিততে পারলে দুই দলের সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। অন্তত এশিয়ান কাপে খেলার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে।
তবে ফিফা র্যাঙ্কিং বিবেচনায় নিলে দুই দলের মধ্যে রয়েছে যোজন-যোজন পার্থক্য। বাংলাদেশ ১৮৪-তে। আর ভারত ১০৫-এ। র্যাঙ্কিং দেখলে যে কারও মনে হতে পারে ভারতই ম্যাচ জিততে যাচ্ছে। কিন্তু মাঠের খেলাতে অনেক সময় র্যাঙ্কিংয়ের ছাপ পড়ে না। মাঠের পারফরম্যান্সই যে বড়।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের দিকে তাকালেই সেটি বোঝা যায়। বাছাইয়ের বাকি তিন ম্যাচের প্রথমটিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে ১-১ গোলে ড্র করেছে আফগানদের সঙ্গে। আর ভারত ১০ জন নিয়েও ১-০ গোলে হেরেছে কাতারের কাছে। দুই দলই সাধ্যমতো লড়াই করেছে। তাই আরও একটি ধুন্ধুমার লড়াইয়ের অপেক্ষা।
সাধারণত বাংলাদেশ রক্ষণ জমাট করে প্রতি আক্রমণ নির্ভর খেলে থাকে। যেই কাজটি আফগানদের বিপক্ষে ঠিকঠাক করতে পেরেছিল জামালরা। শুধু একটি গোল হজম ছাড়া। ইংলিশ কোচ জেমি ডে অন্তত এই জায়গাতে কিছুটা হলেও এগিয়ে আছেন। তাছাড়া আগে দ্বিতীয়ার্ধে ফুটবলাররা ক্লান্ত হয়ে পড়তো। গোলও হজম করতে হতো। সেই জায়গা থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। ৯০ মিনিট তো মাঠ জুড়ে খেলতে দেখা যায়। যার সঙ্গে যোগ হয়েছে গোল করার দক্ষতা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখনও পুরোপুরি যোগ্য স্ট্রাইকার গড়ে উঠেনি দলে। মতিন-বিপলু-রাকিবদের নিয়ে ফরোয়ার্ড জোনের তাই বড় পরীক্ষা।
বিপরীতে ভারতের আবার সেই সমস্যা নেই। তাদের অধিনায়ক ৩৬ বছর বয়সী সুনীল ছেত্রীর নামের পাশে ৭২টি গোল জ্বলজ্বল করছে। জাতীয় দলে খেলেছেন ১১২টি ম্যাচ। এছাড়া অন্য যারা আছেন তাদের অভিজ্ঞতাও কম নয়। আর তাদের আরেক ভরসার নাম গুরপ্রীত সিং। তেকাঠির নিচে দুর্দমনীয় ফুটবল খেলে যাচ্ছেন। তাকে পরাস্ত করাটাও একধরনের চ্যালেঞ্জ।
এর পরেও ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচ এবার বেশ সমীহ-ই করছেন বাংলাদেশকে। যদিও দুই দলের মধ্যে দুই ডজনের বেশি ম্যাচ হয়েছে আগে। এরমধ্যে ভারতের সাফল্যই বেশি। তবে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বাংলাদেশ দলকে আশা দেখাচ্ছে। স্বপ্ন দেখাচ্ছে ১৮ বছর পর ভারত বধের, কিংবা পয়েন্ট ছিনিয়ে নেওয়ার।
জামাল যেমন আগেই বলে গেছেন, এই ম্যাচে বাড়তি অনুপ্রেরণা নিয়ে দল মাঠে নামবে। উজ্জীবিত হয়ে খেলবে। আর সেটা করতে পারলেই দোহার স্টেডিয়ামে লাল-সবুজ দলের নতুন করে ইতিহাস রচিত হবে।