মেহেদী হাসান মিরাজ, খালেদ আহমেদদের নিয়ে সাজানো খেলাঘরের বোলিং আক্রমণ। স্কোরবোর্ডে রান পেলে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের যেকোনো দলকেই হারানোর সামর্থ্য ছিল ছোট বাজেটের দলটির। আজ আবাহনীকে হারিয়ে সেই সামর্থ্যের প্রমাণ রাখল খেলাঘর।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে ওপেনার ইমতিয়াজ হোসেনের ৬৬ রানে খেলাঘর করে ১৬৪ রান। সেই রান তাড়া করতে গিয়ে ৮ রানে হেরেছে মুশফিকুর রহিমের আবাহনী। টানা তিন ম্যাচে জয়ের পর এবারের লিগে এটি আবাহনীর প্রথম হার।
গত তিন ম্যাচের তিনটিতেই আবাহনী জিতেছে মুশফিকের ব্যাটে চড়ে। আজ রনি চৌধুরীর অফ স্পিনে মুশফিক দ্রুত আউট (৫ বলে ৮ রান) হলেন, আবাহনীর বাকি ব্যাটসম্যানরা আর ম্যাচ জেতাতে পারেননি। মুশফিক আউট হওয়ার সময় ৩ ওভার শেষে আবাহনীর রান ছিল ২ উইকেটে ১২।
ওপেনার থেকে চারে নেমে নাজমুল হোসেন ৩৩ বলে ৪৯ রান করেন। তৃতীয় উইকেটে মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে ৫৯ বলে ৮৫ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি। কিন্তু আউট হয়ে যান অসময়ে, যখন আবাহনীর জন্য তাঁর উইকেটে থাকা দরকার ছিল। একইভাবে অসময়ে আউট হয়েছেন নাঈমও।
রানের জন্য দৌড়াচ্ছেন প্রাইম দোলেশ্বরের ফজলে রাব্বী ও সাইফ।
রানের জন্য দৌড়াচ্ছেন প্রাইম দোলেশ্বরের ফজলে রাব্বী ও সাইফ। ছবি: প্রথম আলো
আবাহনীর উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করেছে ওপেনার নাঈমের ইনিংস। ৪৯ রান করেছেন তিনিও, কিন্তু বল খেলেছেন ৪২টি। যখন তাঁর ম্যাচ শেষ করে আসার কথা, তখন তিনি আউট হন খালেদের বলে বোল্ড হয়ে। ১৫তম ওভারের তৃতীয় বলে নাঈম আউট হওয়ার সময় আবাহনীর রান ৪ উইকেটে ১১৩।
পরে দায়িত্ব বর্তায় ক্রিজে নতুন দুই ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন ও আফিফ হোসেনের ওপর। কিন্তু ডেথ ওভারে অনেক চেষ্টা করেও খেলাঘরের পেসার খালেদের গতির বৈচিত্র্য সামাল দিতে পারেননি তাঁরা। মোসাদ্দেক ১৯ বলে করেছেন ২১ রান, আফিফ ১৮ বলে ২২ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন।
জিততে শেষ ৪ ওভারে আবাহনীর দরকার ছিল ৪২ রান। যার মধ্যে দুই ওভারই করেছেন খালেদ। সেখানে মাত্র ১২ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন এই ডানহাতি পেসার। ইনিংসের শুরুতে রনির স্পেল ও শেষে খালেদের স্পেলেই মূলত ভুগেছে আবাহনী। দুজনই দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। প্রথম ওভারে আবাহনীর ওপেনার মুনিম শাহরিয়ারের উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি মেডেন ওভার করা রনি ইনিংসের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে ৯ রান দিয়ে নেন মুশফিকের উইকেট।
বিকেএসপির দুই মাঠ ও মিরপুর - একসঙ্গে তিনটি ম্যাচ হয়েছে প্রিমিয়ার লিগে। তিনটি ম্যাচই হয়েছে জমজমাট। তিনটিই গেছে শেষ ওভার পর্যন্ত।
এর আগে খেলাঘরের ওপেনার ইমতিয়াজের ৬৬ রানের ইনিংসটি ছিল ৪৬ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় সাজানো। তাঁকে যোগ্য সংগত দেন তিনে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ। ২৫ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ রান করেন মিরাজ, দ্বিতীয় উইকেটে ইমতিয়াজের সঙ্গে তাঁর জুটিটা হয় ৪৬ বলে ৬২ রানের। আবাহনীর হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন আরাফাত সানি ও মোসাদ্দেক।
জিতেছে ব্রাদার্স
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও ওল্ড ডিওএইচএসের ম্যাচটিও রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে। মাইশুকুর রহমানের ৪৮ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৮ রানের সৌজন্যে ব্রাদার্স করে ১৩৯ রান, তাড়া করে গিয়ে ওল্ড ডিওএইচএস হারে মাত্র ২ রানে।
আনিসুল ইসলামের ৫০ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৪ রানের ইনিংস যথেষ্ট ছিল না ওল্ড ডিওএইচএসের জন্য। আরেক ওপেনার রাকিন আহমেদ (৩১ বলে ৩৩) ও তিনে নামা মাহমুদুল হাসান (৩৩ বলে ৩৪) অসময়ে আউট হন প্রায় বলের সমান রান করে। পরের নতুন ব্যাটসম্যান রায়ান রহমান ও প্রিতম কুমার চাপের মুখে ম্যাচ বের করতে পারেননি।
ফরহাদ রেজা দারুণ ব্যাটিংয়ে জিতিয়েছেন প্রাইম দোলেশ্বরকে।
ফরহাদ রেজা দারুণ ব্যাটিংয়ে জিতিয়েছেন প্রাইম দোলেশ্বরকে। ছবি: প্রথম আলো
প্রাইম দোলেশ্বর জিতেছে
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ম্যাচটিও হয়েছে জমজমাট। দিনের আগের দুই ম্যাচের মতো প্রাইম দোলেশ্বর ও শাইনপুকুরের ম্যাচও শেষ ওভারে গিয়েছে। শাইনপুকুরের ১৬৩ রান তাড়া করতে গিয়ে শেষ দিকে ফরহাদ রেজা ও শামীম হোসেনের দুর্দান্ত ব্যাটিং জিতিয়েছে প্রাইম দোলেশ্বরকে। এর আগে তিনে নামা সাইফ হাসানের ফিফটি (৩৫ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৫০) প্রাইম দোলেশ্বরের জয়ের ভিত গড়ে দেয়। ফজলে মাহমুদও ৩৩ বলে ৪১ করে ভালো সঙ্গ দেন।
কিন্তু দ্রুত রান করে ম্যাচ শেষ করে আসার দায়িত্বটা বর্তায় শামীমের ওপর। ১৬ বলে ২ ছক্কায় শামীম ২২ রান করে আউট হলে ফরহাদ বাকি পথটা পাড়ি দেন। মাত্র ১১ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ২ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে দোলেশ্বর।
শাইনপুকুরের হয়ে পাঁচে নামা মাহিদুল ইসলাম ৩২ বলে করেন ৪৪ রান। ২০-এর বেশি রান পেয়েছেন মাহিদুলসহ শাইনপুকুরের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজনই। ওপেনার তানজিদ ১৬ বলে করেছেন ২৫ রান, আরেক ওপেনার সাব্বির হোসেনের রান ১৯ বলে ৩৬। তিনে নামা রবিউল ইসলাম ৩৬ বলে করেন ৩৪ রান।