শিক্ষক-কমিটি দ্বন্দ্বে কলেজ অচলাবস্থা দেবিদ্বারে এক কলেজে ৩ প্রতিষ্ঠাতা!
Published : Monday, 9 August, 2021 at 12:00 AM
অভিযোগ তদন্ত করছে শিক্ষাবোর্ড ---
শাহীন আলম, দেবিদ্বার।
একটি কলেজের প্রতিষ্ঠা একজন কিংবা দুইজন নয় তিনজন দাবিদার। এমন তুঘলকি কা- ঘটেছে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার গঙ্গাম-ল মডেল কলেজ কমিটিতে। সমস্যা এখনেই শেষ নয়। কলেজের সাইনবোর্ড ও কাগজপত্রে শুরুতে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে একজনের নাম থাকলেও ওই নাম বাদ দিয়ে বর্তমানে ভিন্ন দুই ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠাতা উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে। কলেজটির প্রতিষ্ঠাতার নাম পরিবর্তন, বর্তমান কমিটি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বৈধতা নিয়ে দুইপক্ষের বিরোধে বিগত সময়ে উপজেলা পর্যায়ে একাধিকবার শ্রেষ্ঠ হওয়া এ কলেজের এখন লেজেগোবরে দশার সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয়ে গত ১৪ জুন ফারুক আহমেদ মৃধাসহ মোট ১৮জন আজীবন দাতা সদস্য শিক্ষামন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব, জেলা প্রশাসক, জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু দেড় মাসেও তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় কলেজটিতে অচলাবস্থার অবসান হয়নি। এ অবস্থায় প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা চরম ক্ষতির সম্মুখিন হওয়ার আশংঙ্কা করছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দেবিদ্বার উপজেলার চাঁন্দপুর গ্রামে ২০১৪ সালে গঙ্গাম-ল মডেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কলেজটি প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন প্রভাষক আবদুর রশিদ। পরে একই বছরের ১০ফেব্রুয়ারি সভাপতির স্বাক্ষর ব্যতীত সদস্যদের স্বাক্ষরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. পলাশ ভূঁইয়াকে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এ কলেজে কর্মরত থেকে একই সময়ে উপজেলার জাফরগঞ্জ মীর আবদুল গফুর ডিগ্রি কলেজ ও রয়েল ইন্টারন্যাশনাল কলেজে চাকরিসহ নানা অনিয়ম ও অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ প্রমানীত হওয়ায় প্রভাষক মো.পলাশ ভূইয়াকে কলেজের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তে ২০১৮ সালের ২৬জুলাই চূড়ান্তভাবে এ প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত করা হয়।
কলেজের সাবেক সভাপতি ও আজীবন দাতা সদস্য অভিযোগকারী ফারুক আহমেদ মৃধা জানান, ‘তিনিসহ এলাকার ১৯ জন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি কলেজটি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের জন্য ১৫৪ শতক জমি ও নগদ ৩০ লাখ ৭০ হাজার টাকা দান করেন। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত এ কে এম হাবিবউল্লাহ। তাঁর ছেলে প্রকৌশলী এ কিউ এম ইকরাম উল্লাহর চেষ্টায় ইতোমধ্যে কলেজের একটি পাকা ভবন নির্মাণসহ উন্নয়নমূলক অনেক কাজ হয়েছে। অবৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পলাশ ভূঁইয়া গোপনে কলেজটির বর্তমান অবৈধ কমিটি কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড থেকে অনুমোদন করিয়ে নেয়াসহ ও প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত এ কে এম হাবিবউল্লাহর নাম বাদ দিয়ে মোহাম্মদ আলী সরকার ও আবুল কালাম আজাদের নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সকলের সম্মতিতে রেজুলেশন করে এ কে এম হাবিবউল্লাকে প্রতিষ্ঠাতা করতে তাঁর পরিবার থেকে ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা অনুদান নেয়া হয়। বর্তমান অবৈধ অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটি এসব কাগজপত্র সরিয়ে নিয়ে আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছেন। এদিকে, কলেজের বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি মফিজুল ইসলাম সরকার জানান, কলেজটির প্রতিষ্ঠালগ্নে আর্থিক অনুদান দেয়ার কারণে মোহাম্মদ আলী সরকার ও আবুল কালাম আজাদ সরকারের নাম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়, যা বৈধ এবং আইনসম্মত। কিন্তু প্রয়াত অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন পরবর্তীতে এ কে এম হাবিবউল্লাহকে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার কথা বলে তাঁর পরিবার থেকে আর্থিক অনুদান গ্রহণ করার বিষয়টি বিধিসম্মত হয়নি। এছাড়া বোর্ডে যেসব বিষয়ে অভিযোগ হয়েছে তা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে কলেজটির অচলাবস্থার নিরস হোক এটা আমি চাই। এসব অভিযোগের বিষয়ে মো. পলাশ ভূঁইয়া বলেন, তিনি ২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এ কলেজের বৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তাকে বরখাস্ত করার কোন চিঠি তিনি পাননি। কাগজপত্র দেখে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ বর্তমান কমিটির অনুমোদন দিয়েছে। কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা মর্মে এ কে এম হাবিবউল্লাহর নামে কোনো কাগজপত্র এ প্রতিষ্ঠানে নেই, এসব কাগজপত্র আগের কমিটি হয়তো নিয়ে গেছে। মোহাম্মদ আলী সরকার ও আবুল কালাম আজাদ সরকার নামে দুইজনের কাগজপত্র পাওয়া গেছে, তাই তাদেরকে প্রতিষ্ঠাতা উল্লেখে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। এছাড়া এ কলেজটি এমপিওভুক্ত নয়, এখানে যৎসামান্য বেতন পাই। তাই অন্য কলেজে শিক্ষকতার বিষয়ে অভিযোগের কারণে গত জুন মাসে অব্যাহতি নিয়েছি।’ অপরদিকে কলেজ কমিটির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ মৃধা জানান, সকলের সম্মতিতে রেজুলেশন করে এ কে এম হাবিবউল্লাকে প্রতিষ্ঠাতা করতে তাঁর পরিবার থেকে ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা অনুদান নেয়া হয়। বর্তমান অবৈধ অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটি এসব কাগজপত্র সরিয়ে নিয়ে আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছেন।
দাতা সদস্য একেএম একেএম একরাম উল্লাহ বলেন, প্রতিষ্ঠার পর নানা আর্থিক সংকটে পড়ে কলেজটি। এ আর্থিক সংকট দূর করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ২০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান করি। এছাড়াও কলেজের অবকাঠোমো উন্নয়নের জন্য একতলা ভবন এবং কলেজের আসবাবপত্র ও ফার্নিচার বাবদ নগদ আরও ১০ লক্ষ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। এতে নির্বাহী কমিটির সকল সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে একেএম হাবিবুল্লাহকে কলেজের সাইনবোর্ড ও প্যাডে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নাম স্থাপন করা হয়। কিন্তু বর্তমান কমিটি অসুদপায়ে প্রতিষ্ঠাতা একেএম হাবিবুল্লাহ’র নাম কেটে আবুল কালাম আজাদ ও মোহাম্মদ আলী সরকারের নামে প্রতিষ্ঠাতা নাম স্থাপন করেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ব্যপাবে সঠিক তদন্তের দাবি করছি।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আবদুস ছালাম জানান, কলেজটির ১৮ জন দাতা ও আজীবন দাতা সদস্যের স্বাক্ষরিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট অভিযোগ প্রেরণ করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল মজিদ বলেন, করোনার জন্য তদন্ত কার্যক্রম বিলম্ব হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বভাবিক হলে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেয়া হবে।