এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ
কুমিল্লার দেবীদ্বারে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেওয়ায় অষ্টম শ্রেণীতে পড়–য়া এক কিশোরী(১৪) ও তাঁর মা জেসমিন আক্তার(৩৫), পিতা অটোরিক্সা চালক জামাল হোসেন(৪৫)কে টানা হেচড়া করে ঘর থেকে ধরে এনে সড়কে ফেলে প্রকাশ্যে দিবালোকে লাঠিপেটা করে নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলাসহ উভয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এস,আই) ওমর ফারুককে জেলা পুলিশ লাইনে বদলী করা হয়েছে।
এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিক্টিমের মা’ জেসমিন আক্তার’র ঘূষ দাবীর একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তবে কি কারনে তার এ তাৎক্ষনিক বদলীর আদেশ দেয়া হয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, শ্লীতাহানীর চেষ্টা মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই ওমর ফারুককে ষ্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়নি, এটা স্বাভাবিক বদলি।
শনিবার রাতে তাৎক্ষনিক বদলীর বিষয়ে একটি চিঠি কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় হতে দেবীদ্বার থানায় আসে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রত্যাহার হওয়া উপ-পরিদর্শক(এসআই) ওমর ফারুক নিজেই।
গত ২০ আগস্ট শুক্রবার দুপুরে মোঃ হাসানের বড় ভাই কাউছার আহম্মেদসহ অন্যান্য আসামিরা, ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর মাকে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করেন। এ সময় কাউছারকে স্থানীয় কয়েকজন থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ ঘটনার ধারণ করা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৬আগস্ট) রাতে দেবীদ্বার উপজেলার কুরছাপ গ্রামের একই পরিবারের ৮ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তরা হলেন, মোঃ নুরুল ইসলাম’র পুত্র মোঃ কাউছার (৩৫) ও মোঃ হাসান(২৫), মৃত; আলী হোসেন’র পুত্র মোঃ নুরুল ইসলাম (৬৫), মোঃ কামাল (৫৫) ও মোঃ সফিকুর রহমান (৬০), মোঃ কাউছারের স্ত্রী মোসাঃ নারগিছ (৩০), মোঃ হাসান’র স্ত্রী মোসাঃ আনিকা (২৫), মোঃ কামাল হোসেন’র স্ত্রী মোসাঃ কুলছুম (৪০)। মামলা নং-১৯. তারিখ-২৬/০৮/২০২১ইং।
এর আগে ওই মারপিটের ঘটনায় আহত নারী জেসমিন আক্তার তার মেয়েকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে গত ০৯/০৬/২১ইং তারিখে দেবী/১২ নং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলার তদন্তকর্মকর্তার বিরুদ্ধে আসামী গ্রেফতারে তালবাহানা এবং ঘুষ দাবীর অভিযোগ করেন।
গত শুক্রবার জেলার বিভিন্ন জায়গায় র্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তবে এ ঘটনার মূল আসামী কাউছার ও হাসানকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি।
মামলার বিবরণ ও র্যাবের প্রেসবিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের কুরছাপ পূর্বপাড়ায় চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম দিকে মো. নুরুল ইসলামের ছেলে মো.হাসান একই বাড়ির এক কিশোরীকে খালি ঘরে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালান।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলা ও ভিক্টিমের মা’কে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্যাতনে দায়ের করা মামলাসহ উভয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদ্য প্রত্যাহার হওয়া উপ-পরিদর্শক(এসআই) ওমর ফারুক জানান, জেলা পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশনায় আমাকে দেবীদ্বার থানা হতে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত হবার চিঠি পেয়েছি শনিবার রাতে, আর আমি ইতিমধ্যে আমার সকল মামলা দেবীদ্বার থানায় হস্তান্তর করে দিয়ে দেবীদ্বার থানা হতে সিসি নিয়ে নিয়েছি। তবে মারপিটের ঘটনাটি যখন ঘটে তখন আমি দেবীদ্বার থানায় ছিলাম না, ছুটিতে ছিলাম।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, গত শুক্রবার রাতে অভিযান মামলায় অভিযুক্ত উপজেলার কুরছাপ গ্রামের মৃত আলী হোসেন মুন্সীর ছেলে নুরুল ইসলাম, মোস্তফা কামাল ও একই গ্রামের মোঃ কাউছার'র স্ত্রী মোসা: নারগিছকে গ্রেফতার করেন। অপরদিকে একই মামলার আরেক আসামী কুলসুমকে আটক করেছে দেবীদ্বার থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে দেবীদ্বার থানা অফিসার ইনচার্জ (সার্বিক) মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে এ পর্যন্ত মামলার ৪ আসামীকে আটক করা হয়েছে, পলাতক মামলার প্রধান আসামী মোঃ কাউছার আহম্মেদ, মোঃ হাসান এবং পুত্রবধু আনিকাসহ পলাতক বাকী ৪ অভিযুক্তকে আটক করার চেষ্টা চলছে।
মামলার প্রধান আসামী মোঃ কাউছার আহম্মেদ বিদেশ পালিয়ে গেছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব বলেন, প্রধান আসামী কাউছার বিদেশ চলে গিয়েছে এ ধরণের সংবাদ আমরা পেয়েছি। তবে তা এখনো নিশ্চিত নয়, আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আশা করি অতিদ্রুত এই মামলার বাকি আসামীদেরও গ্রেফতার করতে সক্ষম হব।