ক্ষিরোদ নদীর তীর ঘেঁসেই ছিল সমতটের রাজধানী বরকামতা
Published : Tuesday, 9 November, 2021 at 12:00 AM
এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ
সমতট রাজ্যের রাজধানী খ্যাত ‘বরকামতা’। নানা কারনে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ‘বরকামতা’কেই সমতট রাজ্যের রাজধানী বলে ধারনা করা হচ্ছে। যদিও কুমিল্লায় ‘বরকামতা’ নামে আরো গ্রামের অস্তিত্ব থাকায়, দেবীদ্বারের ‘বরকামতা’ই যে সমতটের রাজধানী এ বিষয়ে ইতিহাস বিদগণের তথ্য-উপাত্ত্য থেকে পরিস্কার ধারনা না পাওয়া গেলেও, ইতিহাসে বর্ণিত তথ্যানুযায়ী প্রবল পরাক্রান্ত চন্দ্র বংশীয় রাজাদের রাজধানী ছিল রোহিতগিরিতে। পরবর্তীতে পালাক্রমে তাদের বংশিয়দের রাজত্বের বিস্তৃতি ছিল কুমিল্লার নিকটবর্তী ক্ষিরোদ নদীর তীরে পূর্বোক্ত দেবপর্বত নামক স্থানে। ক্ষিরোদ নদীটির অবস্থান যেহেতু দেবীদ্বার উপজেলার বরকামতা’র পাশ ঘেঁসে গোমতী নদীর সাথে সংযুক্ত ছিল (বর্তমান চান্দিনা বাস স্টেশনের পার্শ্বে বাগুর গ্রামের বিলুপ্তপ্রায় খাল আকৃতিটিই ছিল প্রাচীন আমলের ক্ষিরোদ নদী)। সে কারনে ধারনা করা হচ্ছে সমতট রাজ্যের রাজধানী বর্তমান দেবীদ্বার উপজেলার বরকামতা’ই ছিল। হিন্দু অধ্যুষিত ঐতিহ্যমন্ডিত কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ‘বরকামতা’ গ্রাম। নানা দিক থেকে দেবীদ্বার’র এ গ্রামটি ইতিহাস ঐতিহ্যের শীর্ষস্থানে রয়েছে। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক’র পাশে দেবীদ্বার এবং চান্দিনা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত বরকামতা কুমিল্লা শহর থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তবে এ গ্রামের নামকরণ নিয়েও ভিন্নমত রয়েছে। উল্লেখ্য যে, বরকামতা গ্রামের নামেই এই ইউনিয়নের নামাকরণ করা হয়।
সমতট রাজ্যের রাজধানী ‘বরকামতা’র উৎপত্তির ইতিহাসঃ
বর্তমান ‘বরকামতা’ গ্রামটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অংশ ছিল। সাবেক বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্রগ্রাম জেলার বিশাল অংশ নিয়ে সমতট রাজ্যের অবস্থান ছিল এবং প্রায় ৫শত মাইল বিস্তৃত ছিল বলে জানা যায়। খ্রীষ্টিয় নবম শতাব্দীতে এ অঞ্চলটি হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে চলে আসে। (বর্তমান রাঙ্গামাটি জেলার পূর্ববর্তী নাম ছিল হরিকেল) অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল (ময়নামতির সাবেক নাম ছিল রোহিতগিরি)। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী’র অধীনে আসার পর ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয়। রাজা কমলাঙ্ক’র শাসনামলে তার নামানুসারে এ জেলার নাম হয়েছিল ‘কমলাঙ্ক’, কালক্রমে ‘কমলাঙ্ক’ থেকে ‘কার্মান্ত,’ ‘কার্মান্ত’ থেকে ‘র্কর্মূল্যা’, ‘কর্মূল্যা’ থেকে ‘কুমিল্যা’ এবং সর্বশেষ ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে ‘কুমিল্লা’ রাখা হয়।
তিব্বতের ভিক্ষু লামা তারনাথ বাংলাদেশের চন্দ্রবংশ সম্পর্কে বর্ণনায় বলেছেন যে, ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শতাব্দীতে তাঁরা এখানে রাজত্ব করেছেন। কুমিল্লা জেলার সম্প্রতি ময়নামতি-লালমাই পাহাড়ি অঞ্চল খনন করে অনেক নতুন নতুন প্রত্নতত্ত¦পাওয়া গেছে, যার উপর নির্ভর করে ৮ম শতাব্দী থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলার ইতিহাস অনেকখানি পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়েছে। ৫৯৬ খ্রীষ্টাব্দে কান্তিদেবের পরে প্রবল পরাক্রান্ত চন্দ্রবংশ পূর্ব ও দক্ষিণ বঙ্গে রাজত্ব পরিচালনা করেছেন। এই বংশের প্রথম দুই জন রাজা পূর্ণচন্দ্র ও তাঁর পুত্র সুবর্ণচন্দ্র রোহিতাগিরিতে রাজত্ব করেছেন। এটি সম্ভবত: বর্তমান বিহার প্রদেশের শাহাবাদ জেলার অন্তর্গত রোটাসগড়েরই প্রাচীন নাম। পরবর্তীকালে এই বংশীয় রাজাদের রাজধানী ছিল কুমিল্লার নিকটবর্তী ক্ষিরোদ নদীর তীরে পূর্বোক্ত দেবপর্বত নামক স্থানে। ক্ষিরোদ নদীটির অবস্থান যেহেতু দেবীদ্বার উপজেলার বরকামতা গ্রামে’র পাশ ঘেঁসে গোমতী নদীর সাথে সংযুক্ত ছিল (বর্তমান চান্দিনা বাস স্টেশনের পার্শ্বে বাগুর গ্রামের বিলুপ্তপ্রায় খাল আকৃতিটিই ছিল প্রাচীন আমলের ক্ষিরোদ নদী)। সে কারনে ধারনা করা হচ্ছে সমতট রাজ্যের রাজধানী বর্তমান দেবীদ্বার উপজেলার বরকামতা’ই ছিল। অপরদিকে সেন বংশের অস্তিত্ব খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি মিলিয়ে যায়। যদিও পরবর্তীতে এক দেব বংশের কথা এই বিক্রমপুর অঞ্চলে পাওয়া গেছে। এদের শাসন পুর্বদিকে চট্টগ্রাম থেকে পশ্চিমে কুমিল্লা ও বিক্রমপুর অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দেব বংশের শেষ ইতিহাস কিছু পাওয়া যায়নি।
ভারতের বিশিষ্ট লেখক অতুলচন্দ্ররায় ও প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায় সংকলিত ‘ভারত বর্ষের ইতিহাস’ বইয়ে উল্লেখ করা হয়,- সাত শতক থেকে বারো শতক পর্যন্ত বর্তমান ত্রিপুরা জেলা ছিল সমতটের অন্যতম অংশ। সপ্তম শতাব্দীতে সমতটের রাজধানী ছিল ত্রিপুরা রাজ্যের কামড়া অঞ্চলে। এক সময় এ জনপদের পশ্চিম সীমা চব্বিশ পরগনার খাড়ি পরগনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। গঙ্গা-ভাগীরথীর পূর্বতীর থেকে শুরু করে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত সমুদ্রকূলবর্তী অঞ্চলকেই সম্ভবত বলা হতো সমতট। কুমিলা শহরের ১২ মাইল পশ্চিমে ‘বড়কামতা’ নামক স্থানটি সাত শতক’র রাজধানী ছিল। চন্দ্রবংশীয় রাজা ভবদেব কুমিল্লায় আনন্দ বিহার বা শালবন বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময়ে বিহার এশিয়ার জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিগণিত হয়। সে সময় একে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেওয়া হয়। বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং আনন্দ বিহারে আসেন। তখন বিহারে চার হাজার ভিক্ষু (ছাত্র) ছিল। হিউয়েন সাং ময়নামতি অঞ্চলে ৩৫টি শিক্ষাকেন্দ্র (বিহার) দেখতে পান। তখন তিনি সমতট তথা কুমিল্লা বাসীকে প্রবল শিক্ষানুরাগী বলে আখ্যায়িত করেন। চৈনিক পরিব্রাজক হুয়েনসাং’র বর্ণনা অনুযায়ী সমতটের স্থান আমরা পাই কামরূপ’র (আসাম’র) দক্ষিনে এক নাবাল জমির এলাকা যা সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এর রাজধানী ছিল কার্মান্ততে (বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায়)। সম্ভবত উত্তরের উঁচু এবং উঁচু-নিচু অঞ্চলের চেয়ে এই অঞ্চলের নদী বিধৌত অঞ্চল ছিল সমতল। সেই থেকে সমতট নামটি প্রচলিত হয়েছিল। এর থেকে অনুমান করা হচ্ছে সে সমতট রাষ্ট্র ছিল বাংলাদেশের কুমিল্লার টিপেরা। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় বঙ্গের নিম্নে অবস্থিত আর্দ্র অঞ্চল হিসেবে সমতট পরিচিত।
কেউ কেউ মনে করেন, বরকামতা নামটির সাথে প্রাচীন ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে সমতট গঠিত হয়েছিল। আবার অনেকের মতে সমতট’র প্রাণকেন্দ্র ছিল ‘লালমাই-ময়নামতি’ এবং প্রাচীন কুমিল্লা অঞ্চলের নাম ছিল সমতট। খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দী থেকে (কারও কারও মতে সপ্তম শতাব্দী) দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই জনপদের বিস্তৃতি ছিল প্রায় ৫০০ মাইল। সমতটের রাজধানী বরকামতায় দেববংশীয় শাসকগণ শাসন করতেন। কুমিল্লার আশ্রাফপুরে অবস্থিত দুটি তাম্রশাসন এবং দেউলবাড়ির মূর্তি লেখা হতে সমতটের বৌদ্ধ খড়গ রাজবংশ (৬২৫-৭২৫) সম্বন্ধে আমরা অবগত হই। এতে রাজা খড়েগদ্যম, জাত খড়গ ও দেব খড়গের নাম জানা যায়। বরকামতাকে কেন্দ্র করে চারদিকে এ নগরী বিস্তৃত ছিল। কালের পরিক্রমায় অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। তবে রয়ে গেছে স্মৃতি। বর্তমান ময়নামতি টিলাটি ছিল এক সময়ের নৌবন্দর এবং বঙ্গপোসাগরের বিস্তৃতি ছিল ময়নামতি পর্যন্ত। বরকামতার ২ কিলোমিটার উত্তর- পশ্চিমে প্রায় ২৫ ফুট উঁচু ঢিবি আছে। এর উপরে একটি শিব লিঙ্গ আছে। প্রত্নতাত্বিকদের ধারণা এটি ৭ম শতকের চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং’র বর্ণিত স্মৃতিবিজড়িত বৌদ্বস্তুপের ধ্বংসাবশেষ হতে পারে। বরকামতার ২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত বেলাশরে বোধিস্বত্ত আলোকিত স্বরের একটি চমৎকার প্রস্তর মূর্তি পাওয়া গেছে। ৬ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত দেবীদ্বারের শুভপুরে বজুপানি বোধিস্বত্তের একটি প্রমান সাইজের মূর্তি পাওয়া গেছে। শুভপুরের পার্শ¦বর্তী বিহারমন্ডলে পাওয়া গেছে ‘ধনাধিপতির মূর্তি’। এর পার্শ্ববর্তী‘ চরেরপাড়’ গ্রামে একটি বৌদ্বমূর্তি পাওয়া গেছে। বরকামতার ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে চান্দিনা উপজেলার ‘পিহর’গ্রামে মহাযানি বৌদ্ধদেবী মরীচির একটি মনোরম মূর্তি আবিষ্কার হয়েছে।
বরকামতা’র নামকরণঃ
ফাহিয়েন সাং, বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ও প্রত্নতত্ববিদ নলিনী কান্তি ভট্রশালীর মতে বরকামতা নামকরণ নিয়ে নানা মতভেদ প্রচলিত আছে। তন্মধ্যে বহুল প্রচলিত তথ্য হলো শেরশাহ্’র শাসনামলে ‘দি গ্রান্ড ট্রাং রোড’ বর্তমানে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহা সড়ক’র ‘চান্দিনা বাইপাস’ সড়কের উত্তরাংশে বিশাল সমতল ভূমি বিস্তৃত এলাকা নিয়ে সমতটের রাজধানী ‘বরক্যামটা’র অবস্থান ছিল।
বরকামতা নামকরণ নিয়ে নানা মতভেদ লোকমুখে প্রচলিত আছে। অনেকের মতে জমিদারী আমলে ত্রিপুরা রাজ্যোর তৎকালীন জমিদার (?) ভ্রমনোদ্দেশ্যে রাজশাহী গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি পান ক্ষেতের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন। অতঃপর তিনি নিজ এলাকা ত্রিপুরা এসে মেঘনা নদীর পূর্ব অববাহিকার সমতল ভূমিতে (বর্তমান বরকামতা) পান চাষ শুরু করেন। প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই পান ক্ষেতগুলোকে পশুপাখীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বাঁশের ফালি (কাইম) দিয়ে বেড়া দেয়া হয়েছিল। আর পান ক্ষেতগুলোকে বলা হত পানের ‘বরজ’। ‘বরজ’ এবং ‘কাইম’র সংমিশ্রণে এই এলাটিকে তখন ‘বরজকাইমতা’ বলে ডাকা হতো। সময়ের পরিবর্তনে এই বরজকাইমতা ‘বরকামতা’ রূপে নামান্তরিত হয়েছে।
আবার বরকামতা গ্রামের বর্ষীয়ানদের মতে, জমিদারী আমলে জমিদাররা বরলাটদের কাছ থেকে জমি ইজারা নিত। ওই সময়ের ত্রিপুরার তৎকালীন জমিদার ওই সময়কার বড়লাট লর্ড ক্যানিং ক্যামটা’র নিকট থেকে প্রায় সূদীর্ঘ এলাকা ইজারা নিয়েছিলেন। এই এলাকার একটি নির্দিষ্ট সীমা রেখায় ‘লর্ড ক্যামটা’ এসেছিলেন। তার নামানুসারে এই সীমা রেখাটির নাম রাখা হয়েছিল বড়লর্ডক্যামটা’। পরবর্তীতে এই ‘বড়লর্ডক্যামটা’ নাম পরিবর্তন হয়ে ‘বড়ক্যামটা’ এবং ‘বড়ক্যামটা’ থেকে এলাকাটি ‘বরকামতা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
যে কারণে সমতট রাজ্যের রাজধানী খ্যাত বরকামতা ঐতিহ্যমন্ডিত ঃ
রাজা-মহারাজদের অতীত ঐতিহ্যের দিক থেকে বরকামতা গ্রামটি ইতিহাস বিদদের নিকট একটি মাইল ফলক। বৃটিশ শাসনামলেও বরকামতা গ্রমটি ছিল বৃটিশ শাসকদের আতঙ্ক, তেমনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠীর নিকট ছিল মহাতঙ্ক। বৃটিশ শাসনামলে এ গ্রামে গড়ে উঠেছিল সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদী স্বদেশী বিপ্লবীদের ঘাঁটি। বরকামতা পানের বরজ’র জন্যও বিখ্যাত হয়ে আছে। হিন্দুঅধ্যূষিত বরকামতা গ্রামের ধনী-গরীব প্রায় প্রতিটি পরিবারই জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে পানের বরজ’র সাথে আত্মিক সম্পর্ক রেখেছেন। বরকামতা গ্রামের নামানুসারে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ১৫নং ইউনিয়ন পরিষদ’র নাম বরকামতা ইউনিয়ন পরিষদ নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়াও কুমিল্লার বিখ্যাত খাদী শিল্পের জন্য অতীতের ন্যায় এখনো বরকামতা গ্রামটি বিখ্যাত। প্রযুক্তিগত কারনে খাদী শিল্পটি এখন বিলুপ্ত প্রায়। বর্তমানে হাতেগুনা কয়েকটি পরিবার খাদী শিল্পের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে।
মহাত্মা গান্ধী’র বরকামতা পরিদর্শন ও গান্ধীজী’র পালিত কন্যার তত্বাবধানে বরকামতা অভয়াশ্রম ঃ
বৃটিশ বেনিয়াদের শোষন ও শাসন’র জিঞ্জির থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করতে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার বরকামতা গ্রামের নরেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরীর বাড়ির সামনে তাদের দেয়া দান করা জমির উপর ‘অভয়াশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। অভয়াশ্রমটি ছিল বর্তমান ‘আনন্দাশ্রম’র বরাবর রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে। যদিও ওই সময়ে প্রতিষ্ঠিত ‘অভয়াশ্রম’র আর কোন অস্তিত্ব নেই। ওই ‘অভয়াশ্রম’র সম্পত্তি উত্তরাধীকার সূত্রে বর্তমানে নরেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরীর বংশধররাই ভোগ দখলে আছেন। গান্ধীজীর নির্দেশে অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার পর তার তত্বাবধানে ছিলেন,- মহত্মাগান্ধীর পালিত কন্যা আন্তুস সালাম। আন্তুস সালাম ছিলেন বিহারী বংশদ্ভোত এবং চিরকুমারী। আন্তুস সালাম আজ নেই কিন্তু বরকামতা গ্রামে আন্তুস সালাম’র বসত বাড়িটি আজও ‘সালাম বাড়ি’ নামে বিখ্যাত হয়ে আছে। ১৯৩৮ সালে মহত্মাগান্ধী কুমিল্লা অভয়াশ্রম পরিদর্শনে আসেন এবং ওই একই সফরে মহত্মাগান্ধী চান্দিনা তাত বস্ত্র শিল্প কারখানা পরিদর্শন শেষে চান্দিনা বাজারে (বর্তমান গরু বাজার) কংগ্রেস দলের আয়োজনে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য শেষে তিনি বরকামতা ‘অভয়াশ্রম’র তত্বাবধায়ক পালিত কন্যা আন্তুস সালামকে দেখতে আসেন।
প্রসঙ্গতঃ আলাপকালে মুক্তিযুদ্ধচলাকালে প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ’র অন্যতম সদস্য ন্যাপ প্রধান প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ চান্দিনায় গান্ধীজী’র আগমন সম্পর্কে বলেন,- তখন তিনি (ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ) দেবীদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ গঙ্গামন্ডল রাজ ইনিস্টিটিউশন’এ অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। গান্ধীজী চান্দিনায় জনসভায় বক্তব্য দেয়ার সংবাদে তিনিও ওই সমাবেশে যোগ দেন। গান্ধীজীর বক্তব্য শোনার অপেক্ষায় হাজার হাজার মানুষ। গান্ধীজী মঞ্চে উঠে মাত্র দুই মিনিটের বক্তব্যে “হিন্দু মুসলিম ভাই হো, এক হো, বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদকো খতম করো” বক্তব্য দিয়েই মঞ্চ থেকে নেমে গেলেন।
অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ এতো দূর থেকে পায়ে হেটে এসেছেন যার বক্তব্য শোনতে এবং যাকে দেখতে এসেছেন, কারন তখন ওনার কাছে গান্ধীজীকে দেখতে গান্ধী পোকার আকৃতি নাকি অন্য কিছুর মতো ? তা দেখতে এসেছেন। এসময় তার পরনে ধূতীবস্ত্র, হাতের লাঠিসহ নানা আকৃতির বর্নাও দিয়েছেন। এসে যা দেখলেন, তার দির্ঘদিনের ধারনা পাল্টেগেছে। তিনি গান্ধীজীর ওই সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মর্মার্থ খুঁজতে যেয়ে তার মধ্যে রাজনৈতিক অনুপ্রেরনা ও রাজনীতির ভিত্তি গড়ে উঠে সেই থেকে।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে বরকামতা সশস্ত্র বিপ্লবী দল ঃ
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে আমরণ সংগ্রামে লিপ্ত অরবিন্দ ঘোষ, বাঘা যতীন, রাসবিহারী বসু, সূর্যসেন (মাস্টার দা), অতিন্দ্র মোহন রায়, বিধূভূষণ ভট্টাচার্য, উল্লাস কর দত্ত, অশোক নন্দী, ত্রিপুরা সেন গুপ্ত, বিনয়, বাদল, দিনেশ, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, আশুতোষ সিংহ, প্রফুল্ল চাকী, প্রতুল গাঙ্গুলী, অতুল রায়, বীণা দাস, বেণী মাধব দাস, সূধীর দত্ত, অন্ত সিংহ, প্রফুল নলিনী বর্মণসহ হাজারো বিপ্লবীর অগ্নিঝরা দিনে কুমিল্লার দু’ বিপ্লবী কন্যা শান্তি, সুনীতি ব্রিটিশের মহাতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে বঙ্গ প্রদেশে যে তিনটি স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী দল গড়ে উঠেছিল (অনুশীলন, যুগান্তর ও চট্রগ্রামের মাস্টার’দা সূর্য্য সেনের রিপাবলিকান পার্টি) এদের মধ্যে অনুশীলন সমিতি অন্যতম। তার সাথে যুক্ত হয়েছিল বরকামতা সশস্ত্র বিপ্লবী সংগঠন। অপরদিকে একই সময়ে মুরাদনগর উপজেলার দারোরা গ্রামের দিনেশ চন্দ্র দাসের বাড়িতে দিনেশ চন্দ্র দাস, রথিপত্তি দাস গুপ্ত এবং হলধর দাস গুপ্ত’র নেতৃত্বে অনুশীলন সমিতির একটি শক্ত ঘাঁটি তৈরী হয়েছিল।
ওই সময় কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শরৎবসু বিপ্লবী ছাত্রদের পুলিশে ধরিয়ে দিতেন বলে ১৯১৫ সালের ৩ মার্চ বিপ্লবী অতীন রায়ের পরিকল্পনায় শরৎবসুকে হত্যা করেন জনৈক বিপ্লবী। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে সশস্ত্র বিপ্লবীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে এক সময় একটি বিপ্লবীদের অন্যতম ঘাটিতে পরিনত হয় কুমিল্লা। ১৯২৩ সালে কুমিল্লা অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তা ছিল বিপ্লবীদের প্রাণ কেন্দ্র। এই সময়ের মধ্যে ১৯৩০, ১৯৩২ ও ১৯৪২ সনে তিন বার অভয়াশ্রমকে ব্রিটিশ সরকার বে-আইনী ঘোষনা করেছিল।
এসময়ে গান্ধিজীর অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে ইংরেজ বিতাড়ন সম্ভব হবে না ভেবে কুমিল্লার বহু তরুণ- তরুণী, কিশোর- কিশোরী সশস্ত্র বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তারই অংশ হিসেবে বরকামতায় গান্ধীজীর অনুসারী কংগ্রেস নেতা নরেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরী, তারিক কর, চিত্ত চক্রবর্ত্তী’র নেতৃত্বে গড়ে তোলা বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে স্বদেশী বিপ্লবী গ্রুপের কার্যক্রম পরিদর্শন করে যান। যদিও অহিংস আন্দোলনের প্রবর্তক মহত্মাগান্ধী সহিংস আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন না। এছাড়াও ভারতবর্ষের অন্যতম নেতা সীমান্ত গান্ধী খান আব্দুল গাফ্ফার খান ও জওহরলাল নেহেরু বরকামতা গ্রামে এসে জনসভায় বক্তব্য রেখেছিলেন বলেও জণশ্রুতি আছে। বরকামতা গ্রামের অধিবাসীরা বিভিন্ন কারনে বরাবরই রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন। কংগ্রেস এবং কমিউনিস্টদের বিচরণ ছিল এ গ্রামে বেশী। কংগ্রেস নেতা নরেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরী, তারিক কর, চিত্ত চক্রবর্ত্তী’র নেতৃত্বে নন্দকিশোর কর, বৈকুন্ঠ কর, কামিনী কর, হরকুমার করসহ অসংখ্য সমর্থক নেতা-কর্মী ছিলেন।
নরেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরী, তারিক কর, চিত্ত চক্রবর্ত্তী’র নেতৃত্বে গড়ে তোলা বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে স্বদেশী বিপ্লবী গ্রুপ কুমিল্লায় অবস্থিত ‘ষ্ট্যাট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’ বর্তমান পূবালী চত্তর’র পূবালী ব্যাংকে ডাকাতি, চান্দিনা মহিছাইল গ্রামের বিখ্যাত জমিদার ভৈরব সিং’র বাড়িতে ডাকাতিসহ অসংখ্য বিত্তবান পরিবার ও প্রতিষ্ঠানে ডাকাতির আয় দেশের গরীব জণসাধারনকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। 'ষ্ট্যাট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া' এবং চান্দিনা মহিছাইল গ্রামের বিখ্যাত জমিদার ভৈরব সিং’র বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নরেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরী, তারিক কর, চিত্ত চক্রবর্ত্তীসহ ১২জন বিপ্লবী সাত বছরের কারাদন্ড ভোগ করেছিলেন।
ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে পেছনের দিকে তাকালে দেখা যায় বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতীতে নারীরাও পিছিয়ে নেই, ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে নারীরা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের শুরুতে নারী বিপ্লবীদের পথিকৃত ছিলেন- বীণা দাস, স্বর্ণকুমারি দেবী, সরলা দেবী, আশালতা সেন, সরোজিনি নাইডো, ননী বালা ও দুকড়ি বালা প্রমুখ। তাদের দেখানো পথ ধরে হেঁটে গেছেন ইন্দুমতি দেবী, লীলা রায়, সাবিত্রি দেবী, কল্যাণী দাস, কমলাদাস গুপ্ত, কমলা দেবী প্রমুখ। পরবর্তীতে এদের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন দেবীদ্বারের বিপ্লবী প্রফুল্ল নলিনী বর্মণ। তার দুই নিকট আত্মীয় শান্তি ঘোষ এবং সুনীতি চৌধুরী।
এছাড়াও বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার বিপ্লবী প্রতুল গাঙ্গুলী (কুমিল্লা শহরের দিগাম্বরীতলা’র গাঙ্গুলী হাউজের স্বত্বাধীকার), ত্রিপুরা সেন গুপ্ত, ব্রাক্ষনবাড়িয়া জেলার লেসিয়ারা’র বিধূভূষণ ভট্টাচার্য, উল্লাস কর দত্ত, অশোক নন্দীসহ অসংখ্য বিপ্লবী। ওই সময় চাঁদপুর জেলার গান্ধী নামে খ্যাত হরদয়াল নাগ গান্ধীজির সহযোদ্ধা হলেও পেছনে থেকে বিপ্লবীদের সহযোগীতা করেছেন। সেই অগ্নিযুগের আন্দোলনে দেবীদ্বারের অংশিদারিত্বও কম ছিলনা। ব্রিটিশের শাসনামলে এমপি ও অস্থায়ী মন্ত্রী সুবিল গ্রামের আশুতোষ সিংহ, বরকামতা গ্রামের নরেন্দ্র চৌধুরী, তারিক কর, চিত্ত চক্রবর্ত্তী, তাদের সহযোগী নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ দেবীদ্বার উপজেলার কাকসার (মাশিকাড়া) গ্রামের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি প্রফুল্ল নলিনী বর্মণ। প্রফুল্ল নলিনী বর্মণ কুমিল্লা ভিক্টরিয়া কলেজ’র তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী হিসেবে অধ্যয়নরত অবস্থায় ভিক্টোরীয়া কলেজ’র ছাত্র সংসদ’র সহ-সভাপতি (ভিপি) ১৯৩১ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময় তার সাথে পরিচয় ঘটে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অগ্নিযুগের বিপ্লবী অতীন্দ্র মোহন রায়’র সাথে। এ মহান ত্যাগী বিপ্লবী অতীন্দ্র মোহন রায়’র দিক্ষায় দিক্ষিত হয়ে প্রফুল্ল নলিনী বর্মণ’র নিকটাত্মীয় শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী ১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর গুলি করে হত্যা করেছিলেন ইংরেজ জেলা প্রশাসক মিঃ চার্লস্ জেফরী বাকল্যান্ড স্টীভেন্সকে। শান্তি-সুনীতি উভয়েই ছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেছা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ফয়জুন্নেছা হাই স্কুলের ছাত্রী। ১৯৩১ সালে শান্তি ঘোষ ছিলেন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী এবং সুনীতি চৌধুরী ছিলেন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। শান্তি- সুনীতি সম্পর্কে ভাগ্নী ও মাসী ছিলেন। তারা দুজনেই ছিলেন দক্ষ সাঁতারু। সেই বিপ্লবী দুই তরুনীর নামে কুমিল্লা বাদুরতলা থেকে বাগিচাগাঁও সড়কের নামকরণ করা হয় ‘শান্তি-সুনীতি সড়ক।’
১৯৭১’র বরকামতা যুদ্ধ ঃ
বৃটিশ শাসনামলের অবসান হলেও পাকিস্তানের বর্বর শাসক গোষ্ঠীর শেষ সময়ে অর্থাৎ ১৯৭১ সালে’র স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে ১৪ এপ্রিল সকাল ১১টায় সমতট রাজ্যের রাজধানী খ্যাত এবং হিন্দুপ্রধান ঐতিহ্যমন্ডিত বরকামতা গ্রামে পাক হানাদাররা আক্রমন চালাবে। ওই খবর পেয়ে তৎসময়ে কমিউনিস্ট পার্টি বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্রইউনিয়ন সমন্ময়ে গঠিত বিশেষ গেরিলা বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠা সদস্য ও গেরিলা ইউনিট কুমিল্লা প্রধান কমরেড আব্দুল হাফেজ ও ওই এলঅকার আব্দুল হালিম পুলিশ(অবঃ)’র নেতৃত্বে প্রায় পাঁচ হাজার বাঙালী মাত্র দুটি থ্রী-নট থ্রী রাইফেল ও লাঠি হাতে বরকামতা গ্রামের প্রবেশ পথের পার্শ্বে, জঙ্গলে, বরজ’র ভেতরে অবস্থান নিয়ে ওৎপেতে থাকেন। শত্রুসেনারা বিশাল গাড়িবহর নিয়ে এসে কাঠেরপুল থেকে নেমে বরকামতা গ্রামের পথে এগুতে থাকলে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা স্থানীয় বাঙালীরা ‘জয়-বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে লাঠি উচিয়ে এবং থ্রী-নট থ্রী রাইফেল’র গুলিতে শত্রুসেনাদের উপর আকস্মিক হামলা চালায়। রাইফেলের গুলিতে পাক হানাদার বাহিনীর এক প্লাটুন সৈন্যের পাঁচজন পাক সেনা তৎক্ষনাত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং আকস্মিক হামলায় কিং-কর্তব্য-বিমূঢ় বাকি সৈন্যরা লাশগুলো নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। হিংস্র পাক হানাদার দল ওইদিন রাতেই আরো ব্যাপক শক্তি-সামর্থ সার্চ লাইট নিয়ে পুরো বরকামতা গ্রামটি অগ্নি সংযোগে ছারখার, লুটপাট, নির্যাতনের তান্ডব চালায়। যে অগ্নীকান্ডের লেলিহান শিখা এক সপ্তাহের বেশী সময় ধরে প্রজ্বলিত ছিল। ওই সময় বিশিষ্ট লেখক, রাজনীতিক সত্যেন সেন ভারত যাওয়ার পথে দেবীদ্বার উপজেলার জাফরাবাদ (বেতুয়া) গ্রামের কমরেড আব্দুল হাফেজের তত্বাবধানে তার বাড়িতে রাত্রী যাপন করেছিলেন। ওই সময় তিনি এ পথ দিয়ে ভারত সীমান্ত পারাপারের পথে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তার লিখা বই ‘পথে পান্তরে’র দ্বিতীয় খন্ডে ওই ঘটনার বিবরন দিয়েছিলেন।