‘মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনাদের মূর্তীমান আতঙ্ক ছিল এলাহাবাদ’
Published : Monday, 27 December, 2021 at 12:00 AM
এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধদিনের সূতীকার খ্যাত এলাহাবাদ গ্রামটি পাক বাহিনীর কাছে একটি মূর্তীমান আতঙ্ক ছিল।
‘নিউভিশন এলাহাবাদ’ নামে স্থানীয় একটি সামাজিক সংগঠন কর্তৃক ‘মহান বিজয় দিবসের ৫০বছর পূর্তীতে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা, করোনাযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা ক্রেষ্ট বিতরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আলোচকরা ওই বক্তব্য তুলে ধরেন।
শনিবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা প্রয়াত ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদের নিজ গ্রাম এলাহাবাদে তার পিতা মরহুম মৌলভী কিয়াম উদ্দিন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এলাহাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ওই আয়োজন করা হয়।
আলোচকরা আরো বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করায় ১৯৭০ সালের ৩১ জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত মহা সমাবেশটি ছিল উল্লেখযোগ্য। স্বাধীকার আন্দোলন ত্বরান্মিত এবং এক ব্যক্তির এক ভোটের ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচনে আসন বন্টনের দাবীতে ওই দিন প্রয়াত ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদের সভাপতিত্বে নিজ গ্রাম দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদে এক মহা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যে সমাবেশে ৪০ জাতীয় বাম নেতা এবং এবং ৪০ দেশের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে অর্ধলক্ষাধিক লোকের উপস্থিতি ছিল, যে সমাবেশটি পাক সরকার হেলিকপ্টার দিয়ে পরিমাপ করতে হয়েছিল। সমাবেশ করার কয়েক মাসের মধ্যেই গোটা পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠে। এ আন্দোলনের প্রভাব পশ্চিম পাকিস্তানেও পড়ে। সামরিক সরকার আন্দোলনের চাপে বাধ্য হয়ে ১৯৭০ সালে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছিল।
ওই সমাবেশে উপস্থিত নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কমরেড বারীন দত্ত কমরেড বরুন রায়, কমরেড রবী নিয়োগী, কমরেড জিতেন ঘোষ, সাহিত্যিক কমরেড সত্যেন সেন, কবি বেগম সুফিয়া কামাল, কমরেড অমূল্য লাহেড়ি, কমরেড জসিম উদ্দিন মন্ডল, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা কমরেড চৌধূরী হারুন-অর-রশিদ কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা কমরেড হাতেম আলী, কবিয়াল রমেশ চন্দ্র শীল, দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক আহমেদুল কবির, মাওলানা আহমেদুর রহমান আজমি, ফয়েজ উল্লাহ, দেওয়ান মাহবুব আলী, সৈয়দ আলতাফ হোসেন, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, মতিয়া চৌধূরী, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, পীর হাবিবুর রহমান, ভাষা সৈনিক আব্দুল জলিল ভূঞাসহ ৪০ নেতা ও বৃটিশের সাবেক এমপি ও অস্থায়ী মন্ত্রী আশুতোষ সিংহ, ভাষা সৈনিক বিশিষ্ট আইনজীবী কংগ্রেস থেকে মনোনীত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, অধ্যাপক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তও উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের তেজপুরে ‘ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়ন কর্তৃক গঠিত বিশেষ গেরিলা বাহিনী’র সাব ক্যাম্প ছিল এলাহাবাদ ইউনিয়নের এলাহাবাদ গ্রামে। পাশাপাশি ওই বাহিনীর আরো একটি স্যাটেলাইট ক্যাম্প ছিল পাশ^বর্তী শুভপুর গ্রামে। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের পালাটোনায় প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের প্রধান ও প্রতিষ্ঠাতা মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন সুজাত আলী’র বাড়ি একই ইউনিয়নের গৌরসার গ্রামে থাকায় এ এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহনের সংখ্যাও ছিল বেশী। এছাড়াও ‘ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়ন কর্তৃক গঠিত বিশেষ গেরিলা বাহিনী’ প্রতিষ্ঠাদের অন্যতম সদস্য সিপিবি নেতা কমরেড আব্দুল হাফেজ, সাবেক এম,এন,এ আব্দুল আজিজ খান, আজগর হোসেন মাষ্টারসহ অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক’র বাড়ি এ দেবীদ্বারে হওয়ায় মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুক্তিযোদ্ধার এলাকা এ দেবীদ্বার। মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যায় প্রথম রয়েছে চট্রগ্রামের মিরেশ^রাই উপজেলা। যুদ্ধদিনে মুক্তিযুদ্ধের অবদান রক্ষায়ও শীর্ষে আছে দেবীদ্বার।
করোনাকালে মানবিক অবদান রাখায়, ৮টি সংগঠনকে করোনা যোদ্ধা ‘সুপার হিরু’ সম্মাননা প্রদান করা হয়,- এদের মধ্যে ‘এবিএম গোলাম মোস্তফা (সাবেক এমপি) ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিস’, ‘আলহাজ¦ ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী (সাবেক এমপি) করোনা হ্যাল্প সেন্টার জেড ফোর্স’, ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার ‘পাশে আছি কোভিড-১৯ সেবা টিম’, ‘ইউছুফ মোল্লা বিবেক সেবা টিম’, ‘টিম-১০১ কুমিল্লা (উঃ) জেলা স্বেচ্ছা সেবকলীগ’, হ্যালো স্বেচ্ছা সেবকলীগ’, হ্যালো ছাত্রলীগ’, নিউভিশন কোভিড-১৯সেবা সার্ভিস’সহ ৮টি সেবা টিম’র প্রতিনিধিদের হাতে ওই সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং ‘নিউভিশন এলাহাবাদ’র প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মোঃ সোহেল আহমেদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, লেখক, রাজনীতিক ও সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার, বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির, বীর মুক্তিযোদ্ধা শুভাষ চক্রবর্তী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, ‘টিম-১০১ কুমিল্লা (উঃ) জেলা স্বেচ্ছা সেবকলীগের প্রধান করোনা যোদ্ধা সরকার মোঃ লিটন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোঃ নুরুল আমিন প্রমুখ।
আয়োজকরা মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধদিনের সূতীকার খ্যাত এবং পাক সরকারের আতঙ্কখ্যাত এলাহাবাদ ও গৌরসার গ্রামের ১০৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সংবর্ধনা ও সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করেন। এছাড়াও করোনা মহামারিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা ৮টি সংগঠন ও ২জন সাংবাদিককে সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়। পরে এলাহাবাদ নিউভিশন সাংস্কৃতিক টিমের আয়োজিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগে কয়েকশত দর্শক শ্রোতার উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।