ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
জন্ম নিবন্ধনের ভুল সংশোধনে ভোগান্তি চরমে
Published : Monday, 27 December, 2021 at 12:00 AM
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম। তার ভাতিজা মাহমুদুল হাসানের জন্ম নিবন্ধনের সময় ভুল হয়েছে তারিখে। সেটি সংশোধনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ, ইউএনও অফিস ঘুরে আসতে হয়েছে ঢাকার রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে। তবে তাতেও কোনো সুরাহা হয়নি। অনেক চেষ্টার পর সংশোধনের পরিবর্তে ভুল জন্ম নিবন্ধন দিয়েই কাজ চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয় তাদের। অবেশেষে নিরাশ হয়েই বাড়ি ফেরেন তিনি।
সংশোধনে জটিলতার কারণে মাহমুদুলের জন্মের তারিখই পরিবর্তন হয়ে গেছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে শাহ আলম বলেন, নিবন্ধনে আমার ভাতিজা মাহমুদুল হাসানের জন্ম তারিখ ভুল ছিল। তার জন্ম ছিল ২০১৫ সালের ২৪ জুলাই। কিন্তু নিবন্ধনে হয়ে গেছে ২৮ জুলাই। এই ভুলটি সংশোধন করতে চেয়েছি। কিন্তু দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও সেটি পারিনি। উল্টো তারা জানিয়েছেন, জন্ম নিবন্ধনের সার্ভার পুরোটাই লক, এর সংশোধন হবে না। যা আছে তাতেই চালিয়ে নিতে হবে।
ভোগান্তি নিয়ে শাহ আলম বলেন, প্রথমে আমি ইউনিয়ন পরিষদে গেছি। পরে তারা ইউএনও অফিসে পাঠায়। সেখানেও সমাধান না পেয়ে পরিবহন পুল ভবনের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে যাই। সেখানেও সমাধান পাইনি। এ কারণে আমার ভাতিজার জন্ম তারিখই পরিবর্তন হয়ে গেল। রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় বললো, ২৪ আর ২৮ তারিখের ব্যবধান খুব বেশি নয়। এখানে তাদের করণীয় কিছু নেই বলেই সান্ত্বনা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সাধারণ মানুষের এখানে কিছু করণীয় নেই। এখানে উপরের যারা আছেন তারা হয়তো একটি প্রক্রিয়া বের করে আনলে মানুষের সুবিধা হবে। আমার ভাতিজাকে ভুল জন্ম তারিখের জন্ম নিবন্ধন দিয়েই স্কুলে ভর্তি করাতে হয়েছে।
জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত এমন সমস্যা এখন প্রতিটি পর্যায়ে। ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন এখন অনেকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানান জটিলতার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে ঘুরেও সমাধান মিলছে না অনেকের। এর সঙ্গে কর্তাদের গাফিলতি নিয়মিত ঘটনা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, জন্ম নিবন্ধনের মতো প্রয়োজনীয় একটি বিষয়ে এত জটিলতা রাখা বাস্তব সম্মত নয়। সাধারণ মানুষের জন্য সহজ পদ্ধতি হলে এ ধরনের ভোগান্তি হতো না বলে মনে করছেন তারা।
জন্মনিবন্ধন কার্যক্রমে ভোগান্তি জানতে সরেজমিনে বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিস, ওয়ার্ড কার্যালয় ও রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় ঘুরে দেখেছে জাগো নিউজ। সেখানে ভুক্তভোগীরা তাদের নানান অভিযোগের কথা বলেছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) অঞ্চল-৮ এর কার্যালয়ে ৬২ থেকে ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের সব এলাকার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করা হয়। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য সেখানে এসেছেন ধলপুর বাঁশপট্টির বাসিন্দা মিনারা বেগম। তবে কর্তারা জানালেন, স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করা এলাকার চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট ছাড়া জন্ম নিবন্ধন হবে না।
দীর্ঘদিন ঢাকায় বাস করা মিনারা বেগমের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর। ঢাকায় কোনো বাড়িঘর নেই। আবার তিনি গ্রামেও যান না। এ কারণে কোথাও সার্টিফিকেট পাচ্ছেন না তিনি। এরপর নানাভাবে কর্তাদের আকুতি শুরু করেন মিনারা। কিন্তু উল্টো একজন কর্মকর্তা আক্ষেপ করে নিজের বোনের জন্ম নিবন্ধন তৈরিতে এমন সমস্যা হয়েছে বলে জানান। সংশোধনে ব্যাপক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলেও অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।
মিনারা বেগম বলেন, আমি ভোটার হয়েছি নারকেল বাগান মসজিদ এলাকা থেকে। ভোটার আইডিসহ সবকিছুই সেখান থেকে হয়েছে। আমাদের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈরে। তবে সেখানে বাড়িঘর, সহায় সম্পত্তি কিছু নেই। সেখানে আমরা বসবাসও করি না। আমার সন্তানদের সবার জন্ম ঢাকায়। ভোটার আইডি এই ঠিকানা দিয়ে করেছি। সবকিছু নিয়ে এসেছি। ঢাকায় বলে গ্রামের চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট লাগবে। আমি বললাম আমি তো ওখানে থাকি না, যাই না। সেখানকার চেয়ারম্যানও পরিচিত না। কাউন্সিলর অফিসেও বলছে যে গ্রামের ঠিকানার সার্টিফিকেট আনতে। আমরা এখানকার নাগরিক, আমরা ঢাকার ভোটার। এখন ঢাকায় তো বাড়িও নেই। গ্রামে বা ঢাকায় কোথাও বাড়ি নেই বলে আমার জন্ম নিবন্ধনের কাজটি হচ্ছে না।
নিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, যে জন্ম নিবন্ধন যেখানে করেছে সংশোধন যদি করতে হয়, সেখানে আবেদন করে। সেখানে সমস্যা হলে পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে সংশোধনী হয়। এটা অনলাইনে এখানে করতে হবে, তারপর পাঠাতে হবে। যেহেতু ভুল হয়েছে সংশোধনের প্রক্রিয়া তো এভাবেই হবে।
তিনি বলেন, জন্ম নিবন্ধন নতুন করে করতে চাইলে তার বাসস্থান যেখানে হোক, উনি যেখানে বসবাস করছেন সে এলাকায় নিবন্ধনের আবেদন করতে পারেন, সমস্যা নেই।
নিজেদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে তিনি বলেন, এখন সব চাপ এক সঙ্গে। ১ লাখ মানুষ যদি আমাদের সফটওয়্যারে ঢোকে তাহলে বুঝুন আমাদের চাপ কেমন আছে। আর সংশোধনের ক্ষেত্রেও এখন আমাদের প্রতিটি জায়গায় প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার আবেদন আসছে। কিন্তু সারাদিন মনোযোগ দিয়ে করলেও ৩শ’র বেশি করা যায় না। আমাদের অন্য কাজও আছে, পাসওয়ার্ড অন্য কাউকে শেয়ার করেও করা সম্ভব না।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নরমাল জন্ম নিবন্ধন যারা করেন তারা পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হয় যখন তারা আবার কারেকশন করতে যান। আমাদের দেশের ম্যাক্সিমাম জন্ম নিবন্ধন কারেকশন করতে যান জালিয়াতির উদ্দেশ্যে। তখন সেটার ব্যাপারে আমাদের একটা রেস্ট্রিকশন থাকে, সার্ভার সেগুলো অ্যালাও করে না। দেখা যায় এখন বয়স আপনার যেটা আছে সেটা একটু কমিয়ে বা বাড়িয়ে দিতে চান। তখন এসব সমস্যা দেখা যায়। একজন লোকের বয়স ৮৫ বছর হলেও জন্মনিবন্ধন করতে চায়, দেখা যায় তার এসএসসির সনদ বা কিছুই নেই, তখন সমস্যাগুলো দেখা দেয়।