ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ইউক্রেনে ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলেন কুমিল্লার তানজিব
Published : Friday, 4 March, 2022 at 12:00 AM, Update: 04.03.2022 12:42:58 AM
ইউক্রেনে ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলেন কুমিল্লার তানজিবতানভীর দিপু:
ভাগ্যের জোরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের ওডেসা থেকে পোল্যান্ডে পৌঁছেছেন কুমিল্লার ছেলে তানজিব আহমেদ। তবে ইউক্রেনেই তাকে ফেলে আসতে হয়েছে তার শখের গাড়িটি। শরনার্থী শিবিরে যেতে ১২ ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়েছেন ২১ ঘন্টায়, শেষ ২০ কিলোমিটার তাকে হাঁটতে হয়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার সময় ওডেসা শহরের নিজের বাসায় ছিলেন তানজিব। বোমা হামলার শব্দে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সে রাতেই আশ্রয় নেন ওডেসার একটি বাংকারে। সেখান থেকে নানান চরাইউতরাই পেরিয়ে ৪দিন পর ইউক্রেনের পাশর্^বর্তীদেশ পোল্যান্ডের শরনার্থী শিবিরে পৌঁছান তিনি। গত মঙ্গলবার তিনি পৌঁছান পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ’তে বাঙালিদের জন্য সরকারি ভাবে রাখা একটি হোটেলে।  বুধবার রাতে কথা হয় তানজিবের সাথে। তানজিব কুমিল্লার ঝাউতলা এলাকার সোহরাব হোসেনের ছেলে। সে কুমিল্লা জিলা স্কুলের ২০১৬ ব্যাচ এর ছাত্র। তিনি ইউক্রেনের ওডেসায় আগ্রাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনার জন্য গত সাত মাস আগে পাড়ি জমান। পড়াশুনার পাশাপাশি সেখানে একটি অনলাইন ফার্মে পার্ট টাইম কাজ করতেন।
তানজিব জানান, বোম্বিং শুরু হবার পর প্রথম মনে হয়েছিলো কোথাও কোন গাড়ির টায়ার ফাটছে। কিন্তু ক্রমেই তা বিকটা আকার ধারন করতে থাকে। আমি ওডেসায় আমার বাসায় কোন রকম তালা মেরে বাড়ির মালিকের সাথে গিয়ে একটি বাংকারে আশ্রয় নেই। পনের বিশ মিনিট বাংকারে থাকার পর আর কোন শব্দ পাইনি। নিরপদ মনে করে আবার বাড়িতে ফিরে আসি, কিন্তু এর পরে আবরো বোম্বিংয়ের শব্দে সবাই আতংকিত হয়ে বাংকারে আশ্রয় নেই। বাংকারে ছিলো অন্ধকার, মোবাইলে নেটওয়ার্ক ছিলো না। কোন রকমে রাত পার করে সকালে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করি। প্রথমে থেকে যাবার চিন্তা করলেও পরে ইউক্রেনের যে খবর পেলাম সবাই সিদ্ধান্ত নেই যেভাবেই হোক জান বাঁচাতে হবে। সবাই মিলে রওনা হই পোল্যান্ড বর্ডারের দিকে। ওডেসা থেকে ভাড়া গাড়ি করে লিভিব শহরের দিকে ছুটি। এসময় আমার বন্ধুরা আলাদা হয়ে যায়। যে যার মত পালাতে গিয়ে সবাই সবাইকে হারিয়ে ফেলি। কিন্তু আমি ভাড়া করা গাড়ি ছাড়ি নি। ওডেসা থেকে লিভিব হয়ে পোল্যান্ডের রাওয়ারুস্কা সীমান্তে যেতে খুব বেশি হলে ১২ ঘন্টা লাগার কথা, সেই পথ পাড়ি দিতে হয়েছে ২১ ঘন্টায়। যানজটের কারনে সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে গাড়ি ছেড়ে দিতে হয়েছে। পুরো ওই ২০ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়েছে আমাকে। আমার ভাগ্য ভালো আবহাওয়া কিছুটা ভালো ছিলো- ঠান্ডা বাতাস থাকলেও রোদ ছিলো বেশ। কিন্তু যারা রাতে বা ভোরে সীমান্ত অতিক্রম করেছে তাদের অবস্থা একেবারে নাজেহাল। তবে সবচেয়ে বড় কথা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পোল্যান্ড সীমান্তরক্ষীদের আচরণে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। তারা আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে।
তানজিব জানান, অন্যান্যদের তুলনায় আমার পথটা খুব বেশি কষ্টের হয়নি। আল্লাহ আমাকে খুব সহজেই পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু অন্য যাদের গল্প শুনি বা অনেকের শরীর ও পায়ের অবস্থা দেখে শিহরিত হই। কি কষ্ট করে তাদের প্রাণ বাঁচাতে হয়েছে। তবে আমার খুব প্রিয় কষ্ট করে জমানো টাকায় কেনা গাড়িটি ফেলে আসতে হয়েছে ওডেসাতে। বাড়ির মালিকের কাছে চাবি দিয়ে বলে এসেছি- আবার আসতে পারলে ফেরত নিবো।
ওডেসা থেকে লিভিবে যাবার পথের দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে তানজিব জানান, মানুষ শুধু প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে। যে যেভাবে পারছে ছুটছে। নিরাপত্তায় রাস্তায় পথে পথে চেক পোস্ট বসিয়েছে ইউক্রেনিয়ান আর্মি। রাস্তায় রাস্তায় সাঁজোয়া যান। তৈরী করা হয়েছে বাংকার। রাস্তার পাশে বোম্বিংয়ে ধ্বংস হওয়া যানবাহন পরে থাকতে দেখেছি। সীমান্তের দিকে যে লম্বা যানবাহনে সারি তা গুণে শেষ করার মত না। পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানুষ ছুটছে সীমান্তে। তবে সত্যিই বলতে হবে-আমি ভাগ্যের জোরে এত সহজে পোল্যান্ডে এসেছি। বাড়িতে কথা হয়েছে সবার সাথে। তারা আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করছিলো খুব। বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ যে আমাদের দেশের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে পোল্যান্ড সীমান্ত অতিক্রম করার সময় বাংলাদেশিদের কোন বেগ পেতে হচ্ছে না।