তানভীর দিপু:
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটের হাওয়া বইছে নির্বাচন কমিশন, জেলা
নির্বাচন কার্যালয়, সম্ভাব্য প্রার্থী এবং ভোটারদের মাঝে। নির্বাচন
অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর যেমন কাজ এগিয়ে রাখছে, তেমনি
সম্ভাব্য প্রার্থীরাও পোষ্টার ,ফেষ্টুন- লিফলেট দিয়ে জানান দিচ্ছেন ভোটের
সময় ঘনিয়ে আসার। এদিকে, মেয়াদ শেষ হবার আগের ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন
আয়োজনের যে আইন আছে - সেই অনুযায়ী গেল বছরের ডিসেম্বর থেকেই চলছে নির্বাচনী
সময়। বিভিন্ন সূত্র বলছে, এই মার্চ মাসের শেষ অথবা এপ্রিলের শুরুর দিকে
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিলো। তবে নতুন করে জাতীয় নির্বাচন কমিশন
পর্ষদ আসার কারণে এখনো পর্যন্ত কুমিল্লা সিটির নির্বাচন নিয়ে সুনিশ্চিত কোন
সিদ্ধান্ত আসছে না। তবে নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র বলছে, এই নির্বাচন
কমিশনের আগামী সভায়ই উঠবে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিষয়টি।
সেখান থেকে আসতে পারে সিদ্ধান্ত। সভায় আলোচনা হতে পারে সিটি কর্পোরেশনের
নির্বাচন নিয়ে কোন আইনী জটিলতা আছে কি না কিংবা তফসিলের সম্ভাব্য সূচী।
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম জানান,
‘জেনেছি নির্বাচন হবে। আপাতত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নিয়ে কোন আইনী
জটিলতা নেই। ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগে সীমানা সংক্রান্ত একটি রিট
হয়েছিলো।পরে সেটি স্থগিত হওয়ার কারনে সেবার নির্বাচন হয়েছিলো। পরে আবার
আদালতের কনটেমপ্ট অব কোর্টের একটি আদেশ ছিলো, পরে সেটিও নাকচ করে দেন
আদালত। আমি যতটুকু জানি, আপাতত ওই মামলার কোন চলমান নাই।’
তিনি আরো
জানান, নতুন করে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সীমানা বৃদ্ধির চিন্তা ভাবনা
করা হচ্ছে। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সকল জনপ্রতিনিধিগণ, যেসব ইউনিয়নে
সীমানা বাড়ানোর সম্ভাব্যতা রয়েছে সে সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ এবং স্থানীয়
সংসদ সদস্যগণ এই বিষয়ে এক মত হলে আমরা প্রস্তাবনা ঢাকায় জনপ্রশাসন
মন্ত্রনালয়ে পাঠাবো।
তফসিল ঘোষণা করা হলে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি
রয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ দুলাল
তালুকদার। তিনি জানান, ইতিমধ্যে ভোটর তালিকা সম্পন্ন হয়ে গেছে। যতটা জানি,
এখানে(কুমিল্লায়) ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। ইভিএম মেশিনগুলোও
কুমিল্লাতে আছে, যে মেশিনগুলো ইউনিয়ন পরিষদে ব্যবহার করা হয়েছিলো সেগুলো
কুমিল্লায় আছে। এখন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবেন। রিটার্নিং অফিসার, সহকারী
রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করবেন- আমরা কাজ শুরু করে দিবো, আমাদের কোন সমস্যা
নাই।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মোট ভোটার
সংখ্যা ২ লাখ ২৮ হাজার ৯৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ১৪০ জন
এবং নারী ভোটার ১ লাখ ১৬ হাজার ৮০৬ জন।
এদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে
নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদে
প্রদিদ্বন্ধীতা করতে আগ্রহীরা। ভোটে লড়াই করতে কুমিল্লার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও
সামাজিক ব্যাক্তিগণের এই তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। ইতিমধ্যে কেউ কেউ
পোষ্টার ফেস্টুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছেন নগরীর দেয়ালে দেয়ালে। কোন কোন প্রার্থী
কিংবা কারো সমর্থকরা সশরীরেই মিছিল মিটিংয়ে জানান দিচ্ছেন নিজেদের মাঠে
থাকার কথা। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে নির্বাচনে
প্রার্থীতা নিয়ে আলোচনা।
নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে,
কাউন্সিলর প্রার্থীরা কেউ প্রকাশ্যে এখনো প্রার্থীতার কথা না বললেও নানারন
মিছিল মিটিং বা সভায় নিজেদের কিংবা সমর্থকদের বক্তব্যে প্রকাশ করছে ভোটের
মাঠে প্রতিদ্বন্ধীতার কথা। পুরোনো কাউন্সিলর সাথে প্রতিদ্বন্ধীতা করতে
অনেকেই সাংগঠনিক প্রস্তুতিও শুরু করেছেন বলেও জানা গেছে। নির্বাচনকে সামনে
রেখে সবাই একটি উৎসবমুখর পরিবেশের অপেক্ষায় আছে।
বর্তমানে কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ৫৩ দশমিক ৪ বর্গ কিলোমিটার। ২৭ টি ওয়ার্ড নিয়ে এই
সিটি কর্পোরেশনটি ২০১১ সালের ১০ জুলাই বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার
মন্ত্রনালয়ের একটি অধ্যাদেশের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে। সর্বশেষ ২০১৭
সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।