প্রেমের বিরোধে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে বন্ধু চন্দ্রশেখর সরকারকে নির্যাতন ও শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে মোবাশ্বির হোসেন নামে এক কলেজছাত্রকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ২ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত মোবাশ্বির হোসেন ঐ উপজেলার বৈকারঝুটি গ্রামের আব্দুল মজিদ মোড়লের ছেলে ও আশাশুনি ডিগ্রি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময়ে আসামি মোবাশ্বির হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
মামলা সূত্রে জানা যায়, চন্দ্রশেখর সরকার ও মোবাশ্বির হোসেন ছোটবেলা থেকে একই সঙ্গে পড়াশোনা করতেন। চম্পাফুল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আশাশুনি ডিগ্রি কলেজ থেকে একই সঙ্গে এসএসসি ও এইসএসসি পাসের পর চন্দ্রশেখর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ও মোবাশ্বির হোসেন আশাশুনি ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন।
এদিকে, মোবাশ্বিরের সঙ্গে একই গ্রামের ইন্দ্রানী ঘোষ ওরফে পাপিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভিন্ন ধর্মের এ প্রেম মেনে নিতে পারেননি চন্দ্রশেখর। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় দুই বন্ধুর মাঝে বাক্বিতণ্ডা হতো। এরই ধারাবাহিকতায় পথের কাঁটা চন্দ্রশেখরকে সরিয়ে দিতে হত্যার পরিকল্পনা করেন মোবাশ্বির।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর রাতে বাড়ি থেকে চন্দ্রশেখরকে বাড়ির পাশের একটি ঘেরে ডেকে নিয়ে যান মোবাশ্বির। সেখানে পাপিয়াকে নিয়ে কথা উঠলে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে চন্দ্রশেখরকে মারতে থাকেন মোবাশ্বির। পরে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ ঘেরের পানিতে ফেলে দেন তিনি। একদিন পর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
২০ অক্টোবর নিহতের বাবা শঙ্কর সরকার মামলা করেন। পুলিশ রাতেই সাতক্ষীরার একটি বাসা থেকে মোবাশ্বিরকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। পাপিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে ঘিরে বন্ধু চন্দ্রশেখরকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায় স্বীকার করে বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলামের কাছে তিনি জবানবন্দি দেন। পরবর্তীতে আদালত থেকে জামিন পেয়ে পালিয়ে যান মোবাশ্বির।
এদিকে, গত বছরের ৩১ মে মোবাশ্বির হোসেনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশাশুনি থানার ওসি মো. গোলাম কবীর। মামলার নথি ও ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামি মোবাশ্বিরের বিরুদ্ধে হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ২ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ জানান, ঘটনার সময়ে আসামির বয়স ছিল মাত্র ২১। বয়স বিবেচনায় তাকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।