ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্বামী মকবুল মিয়া ও স্ত্রী রেখা বেগমসহ তাদের তিন সন্তানের মৃত্যুর ঘটনা ২৪লাখ টাকায় আপসরফা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছফিউল্লাহ মিয়ার নেতৃত্বে এই আপস-রফা হয়।
মকবুল আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর গ্রামের সফর মিয়ার ছেলে। তিনি উপজেলা সদরের শরীয়তনগর এলাকার আলাই মোল্লার ভবনের নিচতলায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। রেখা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ছফিউল্লাহ মিয়ার নেতৃত্বে আশুগঞ্জ বাজারে তার কার্যালয়ে এ ঘটনায় সালিশ হয়। সেখানে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজ, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান, জেলা কাজী সমিতির সভাপতি মোল্লা মকবুলের মা খোরশেদা বেগম ও শ্বশুর খোরশেদ আলম, ভবন মালিক আলাই মোল্লাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সালিশে মৃত্যুর ঘটনায় ভবন মালিক আলাই মোল্লাকে ২৪লাখ টাকা জরিমানা করে আপস করা হয়।
আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ছফিউল্লাহ মিয়া বলেন, ২৪লাখ টাকায় আপস হয়েছে। মকবুলের অনেক টাকা ঋণ আছে। নিহতের স্বজনরাসহ উপজেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ১০টার দিকে রান্নাঘরে কয়েল জ্বালাতে যায় মকবুল-রেখার শিশু ছেলে আরিফ হোসেন। দেশলাই জ্বালাতেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। আরিফকে বাঁচাতে এগিয়ে যান তার মা, বাবা ও ছোট ভাই জোবায়ের হোসেন। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডে বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে অন্ধকারে তাঁরা বাইরে যেতে পারেননি। ভেতরেই সবাই দগ্ধ হন। ঘটনাস্থলেই জোবায়ের মারা যায়। পরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে মকবুল মিয়া (৪২), বড় ছেলে আরিফ হোসেন ও রেখা মারা যান। এর আগে হাসপাতালে রেখার গর্ভে থাকা মেয়েসস্তানের জন্ম হয় মৃত অবস্থায়।
গত ২মার্চ বেলা ভবনের মালিকসহ পাঁচজনকে আসামি করে আশুগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন মকবুলের মা খোরশেদা বেগম। মামলায় ভবনের আলাই মিয়া মোল্লা (৬০), তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও বাড়ির দারোয়াকে আসামি করা হয়।
এ ঘটনায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলমকে প্রধানসহ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসন। মার্চের প্রথম দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির সদস্যরা।
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তাই তদন্তের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর স্পষ্ট কারণসহ সবই উল্লেখ রয়েছে।’