অর্থ আত্মসাতের মামলায় শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জিএম শাখার কর্মচারী ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের পেশকার মো. ইমাম উদ্দিনকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ২৮ বছরের দণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। তবে একই মামলার আট বছরের দণ্ডিত তার স্ত্রী কমলা আক্তারকে খালাস দেওয়া হয়েছে। ইমাম উদ্দিনের আপিল খারিজ এবং কমলা আক্তারের আপিল মঞ্জুর করে সোমবার রায় দিয়েছেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ।
আদালতে আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুন্নেসা রত্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের জানান, ভ্রাম্যমাণ আদলতের আদায় করা জরিমানার টাকা ঠিকমতো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে কিনা, শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে তা খতিয়ে দেখতে এবং তদারকি করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
আসামিপক্ষের আইনজীবী তাপস কান্তি বল জানান, বিচারিক আদালতের রায়ে ইমাম উদ্দিনকে পাঁচটি ধারায় মোট ২৮ বছরের কারাদণ্ড দিলেও সব ধারার সাজা একসাথে চলবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ধারায় সর্বোচ্চ সাজা ছিল ১০ বছরের কারাদণ্ড। আপিল খারিজ হওয়ায় ইমাম উদ্দিনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
২০১০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ২৬ মে পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের পেশকার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ইমাম উদ্দিন তার স্ত্রী অফিস সহকারী কমলা আক্তারের সহায়তায় আদালতের অর্থদণ্ড বাবদ প্রাপ্ত ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ২৪ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন।
এ অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৮ জুন শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী হাকিম জিনিয়া জিন্নাত বাদী হয়ে পালং থানায় সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন।
পরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক হাফিজুর ইসলাম এ অভিযোগটি তদন্ত করে ইমাম উদ্দিন ও কমলা আক্তারকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
বিচার শেষে ফরিদপুরের বিশেষ জজ আদালতের বিচারিক হাকিম মতিয়ার রহমান ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ইমাম উদ্দিনকে পৃথক ৫ ধারায় ২৮ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ২৪ টাকা আর্থিক দণ্ড দেন। টাকা অনাদায়ে তাকে আরো সাত মাস ১৫ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
একই সঙ্গে এ কাজে সহায়তা করার জন্য ইমাম উদ্দিনের স্ত্রী শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী কমলা আক্তারকে দুই ধারায় আট বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও নগদ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে স্বামী-স্ত্রী হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন।