পদ্মা
সেতু নিছক একটি সেতু নয়, সড়ক ও রেল সংযোগের মাধ্যমে দেশের যোগাযোগ
ব্যবস্থার উন্নয়ন নয়, বরং এর চেয়েও অনেক বেশি, যা জাতীয় অর্থনৈতিক
প্রবৃদ্ধিতে যোগ করবে নতুন মাত্রা। আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক
উপ-কমিটির মঙ্গলবার আয়োজিত ‘জাতীয় অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব’ শীর্ষক
এক সেমিনারে উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা এ বিষয়ে বিস্তারিত
তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। তারা বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে জিডিপিতে যোগ হবে আরও
দশ বিলিয়ন বা এক হাজার কোটি ডলার, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৯৩ হাজার কোটি
টাকা। এটি পদ্মা সেতু নির্মাণে যে ব্যয় হয়েছে, তার চেয়ে তিনগুণ বেশি অর্থ
যোগ করবে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে। উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু নির্মাণে এ
পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। অবশ্য রেল সেতুর জন্য আলাদা
বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই সেতু থেকে যে টোল আদায় হবে তার চেয়ে প্রাধান্য দেয়া
হবে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ওপর। বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপির আকার ৪২০ বিলিয়ন
ডলার। পদ্মা সেতুকে বিবেচনা করতে হবে এই অঞ্চলের করিডর হিসেবে। ফলে
দক্ষিণাঞ্চলের ১৩টি দারিদ্র্যপীড়িত জেলার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। আগামীতে
আন্তঃদেশীয় যোগাযোগসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য
সম্প্রসারণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিতে পদ্মা সেতুর
অবদান আরও বাড়বে সুনিশ্চিত। সেতুটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি
জেলাকে সংযুক্ত করবে সারাদেশের সঙ্গে। সেতুর মাধ্যমে মংলা ও পায়রা বন্দর
এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের
সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে, যা এককথায় যুগান্তকারী। সেতুকে ঘিরে যেমন
সর্বস্তরের মানুষের আয়-উপার্জন বাড়বে, তেমনি গড়ে উঠবে পর্যটন ও বিনোদন
কেন্দ্র। ঘটবে কৃষি বিপ্লব। জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে পদ্মা সেতুর অবদান থাকবে ২
দশমিক ৩ শতাংশের বেশি।
এই সেতু নির্মাণের অগ্রদূত হিসেবে এগিয়ে আসেন
দেশীয় প্রকৌশলীরাই। নিজস্ব অর্থায়নে চীনের সহযোগিতায় নির্মিত এই সেতুর কাজ
করোনা অতিমারীর কারণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করা হলেও সেটি হয়নি।
পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের যোগাযোগ
ব্যবস্থায় যুগান্তকারী অবদান রাখতে সক্ষম হবে। পদ্মা সেতু আন্তর্জাতিক
অঙ্গনেও বাংলাদেশের সক্ষমতাসহ ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছে। এর সার্বিক
রক্ষণাবেক্ষণসহ নিয়মিত দেখভাল ও নিরাপত্তা নিয়ে অবহেলার বিন্দুমাত্র অবকাশ
নেই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে উত্তর ও
দক্ষিণ থানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন এর স্বপ্নদ্রষ্টা ও বাস্তবায়নকারী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। থানা দুটি পদ্মা সেতুর সার্বিক নিরাপত্তা
বিধানসহ নিয়মিত দেখভাল এবং স্থানীয় জনপদে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার
পাশাপাশি অপরাধ দমনে কার্যকর অবদান রাখতে সক্ষম হবে নিশ্চয়ই।