মানবিক
মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে। সমাজ ক্রমেই বর্বরতার চরমে চলে যাওয়ায়
আমাদের সমাজের পরিচয়টাই যেন পাল্টে যাচ্ছে। সে কারণেই নারী নির্যাতনের ঘটনা
ক্রমেই বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এই সমাজ কোথায় যাচ্ছে? কোন
ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা? মানুষ আলোকিত দিনের অপেক্ষায় থাকে।
যুগের
পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজও আলোকিত হবে। মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ
বাড়বে-এটাই তো কাক্সিক্ষত। দেশে শিক্ষিতের হার বেড়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নও
চোখে পড়ার মতো। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মানবিক উন্নয়ন কি হয়েছে? এমন প্রশ্ন আসে
কিছু ঘটনা জানার পর।
বরগুনায় গত সোমবার রাত ১২টার দিকে সদর উপজেলার আয়লা
পাতাকাটা ইউনিয়নের বৈকালীন বাজারে এক নারীর ওপর এসিডজাতীয় পদার্থ ছোড়ার
অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এতে তাঁর মুখমণ্ডল, চোখ ও গলার উপরিভাগ
দগ্ধ হয়েছে। বরগুনা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে উন্নত
চিকিৎসার জন্য ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি
ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। বরগুনা সদর থানার ওসি জানিয়েছেন, ঘটনায় জড়িত
থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া
হবে।
অন্য আরেক খবরে প্রকাশ, নওগাঁর আত্রাইয়ে গ্রাম্য সালিসে এক
গৃহবধূকে নির্যাতন করা হয়েছে। সালিসে করা জরিমানার টাকা দিতে না পারায়
গৃহবধূর বাড়ি থেকে ফ্রিজ নিয়ে যান মাতবররা। ভুক্তভোগী গৃহবধূ জানান, তাঁর
মেয়ের ছবি বিকৃত করে উপজেলার হাতিয়াপাড়া গ্রামের এক যুবক কয়েকজনকে দেখান। এ
ঘটনায় গত রবিবার রাতে সমাজের পক্ষ থেকে হাতিয়াপাড়া গ্রামে সালিস বসানো হয়।
ওই সালিসে উল্টো তাঁকে দোষারোপ করে ১০টি বেত্রাঘাত এবং ১৫ হাজার টাকা
জরিমানা করেন মাতবররা। একই সঙ্গে ওই যুবককে পাঁচটি বেত্রাঘাত এবং দুই হাজার
টাকা জরিমানা করা হয়। ওই সালিসে গ্রামের মাতবররা গৃহবধূর স্বামীকে দিয়ে
বেত্রাঘাত করান। এতে গৃহবধূর শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় রক্তাক্ত হয়। এ ছাড়া
জরিমানার টাকা না দিতে পারায় রাতেই তাঁর ঘর থেকে ফ্রিজ নিয়ে যাওয়া হয়।
বাংলাদেশে
এ ধরনের ঘটনা তো এটাই প্রথম নয়। এর আগেও এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে।
গণমাধ্যমে অনেক ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক আলোড়নও সৃষ্টি হয়। তারপর
তা চলে যায় আড়ালে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
শুধু আইন পাস হলেই যে এই সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্তি মিলবে না, এখন তা আর
নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। উপযুক্ত শাস্তি না হওয়ায় অপরাধীরা আরো
বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নারীর প্রতি এই সহিংসতা কমাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ
করতে হবে বলে মনে করেন সমাজ বিশ্লেষকরা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তি
দৃশ্যমান করা গেলে এ ধরনের অপরাধ কমবে বলে আমরা মনে করি।