Published : Friday, 1 July, 2022 at 12:00 AM, Update: 01.07.2022 1:50:21 AM
বশিরুল ইসলাম: মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক বলেন, দেশের মানুষের জন্য প্রাণিজ আমিষের চাহিদাপূরণে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপদ মাছ সরবরাহ করতে হবে। আর সে লক্ষ্যেই কাজ করছে মৎস্য অধিদপ্তর। এখন আমাদের প্রয়োজন নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মৎস্য খাদ্য ও মৎস্যজাত পন্য সরবরাহ করা । এজন্য মৎস্য ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত সকলের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তাহলেই আমাদের অর্জিত হবে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা। পাশাপাশি রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও সকলের অংশগ্রহনের মাধ্যমে কাংখিত আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। আমাদের দেশের মানুষ কাজের জন্য আর বিদেশ যেতে হবেনা বিদেশীরা আগামীতে আমাদের দেশে কাজের জন্য আসবে। গতকাল ৩০ জুন বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলা মৎস্য অফিসারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বার্ষিক কর্মশালায় মৎস্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মো: আবদুস ছাত্তার আগত প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ন্যাশনাল টেকনোলজি প্রজেক্ট এর বার্ষিক কর্মশালায় কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহকারী পরিচালক ও রিসোর্স পার্সন ওমর ফারুক। চান্দিনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও রিসোর্স পার্সন ফারুক ময়েদুজ্জামান মুকুল, নাঙ্গলকোট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয় বণিক, বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, ক্ষেত্রসহকারী ও লিফবৃন্দ।
এসময় প্রধান অতিথি আরো বলেন, দেশের জনগনের পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের যোগান আজ অন্যতম চ্যালেঞ্জ। দেশের মানুষের জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ প্রাণিজ আমিষ সরবরাহের মাধ্যমে সুষম খাবারের নিশ্চয়তা বিধানে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের অবদান উল্লেখযোগ্য। আমরা শুধুমাত্র কুমিল্লায় গতবছরে ২লক্ষ ৭৯হাজার ১৭৩ মে. টন মাছ উৎপাদন করেছি। আমাদের চাহিদা ছিল ১লক্ষ ৪৬হাজার ৩৫৩ মে. টন। গত বছর জেলার দাউদকান্দি উপজেলায় ৪৫হাজার ৩৫৩ মে. টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে সেখানে আমাদের চাহিদা ছিল ৬হাজার ৯৮৭ মে. টন। দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে মৎস্যখাতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি যোগানে মাছ উল্লেখ্যযোগ্য স্থান দখল করে আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় বাংলঅদেশ আজ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের সাফল্য আজ বিশ^জন স্বীকৃত। মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ ৩য় স্থানে এবং বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম স্থান যথারীতি ধরে রেখেছে। সর্বোপরি মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মৎস্য অধিদপ্তর পুরস্কার অর্জন করেছে। এসব অর্জন সরকার কর্তৃক মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বাস্তবায়িত যথোপযুক্ত কার্যক্রমেরই ফসল। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে
অভ্যন্তরীন জলাশয়ের আবাসস্থল উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে উৎকর্ষতা সাধন, পরিবেশ ও সমাজবান্ধব চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের সহনশীল আহরণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পুষ্টি-সংবেদনশীল মৎস্যচাষ ব্যবস্থা প্রবর্তন ও সচেতনতা বৃদ্ধি; সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রমের পরিধিসম্প্রসারণ এবং স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আমরা এটা মনে রাখতে হবে আমাদের খাদ্যে প্রাপ্ত প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ যোগান দেয় মাছ। মাছ একটি উচ্চ আমিষ সমৃদ্ধ দামে সস্তা ও সহজ প্রাপ্য, কম চর্বি ও শ্বেতসার যুক্ত নিরাপদ খাদ্য। মানুষের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানগুলোর সবগুলো উপাদানই সুষম পরিমাণে মাছে বিদ্যমান। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মৎস্য সেক্টরে উন্নত মাছ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এছাড়াও তিনি মৎস্য আইন, উত্তম মৎস্যচাষ অনুশীলন ও ব্যবস্থাপনা, মৎস্য মাননিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি পরিচালনাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেন।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন, বিভাগীয় সহকারী পরিচালক ওমর ফারুক, রিসোর্স পার্সন ও চান্দিনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক ময়েদুজ্জামান। উন্মুক্ত আলোচনা অংশ নেন ক্ষেত্রসহকারী, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, চান্দিনা উপজেলার লিফ পরেশ চন্দ্র সরকারসহ আরো অনেকে।