তানভীর দিপু:
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের নব নির্বাচিত পর্ষদ শপথ গ্রহনের পর দীর্ঘ মেয়াদি
পরিকল্পনা নিয়ে নগর উন্নয়নে কাজ শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন সমাজ
বিশ্লেষকরা। সিটি কর্পোরেশনের গত দুই মেয়াদে যেভাবে পরিকল্পনাহীন এবং
বিচ্ছিন্নভাবে উন্নয়ন কাজ হয়েছে তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে নগরবাসীর
মাঝে। নতুন মেয়র এবং কাউন্সিলরদের কাছে নগরবাসীর দাবি, দীর্ঘ মেয়াদি
মাস্টারপ্ল্যান করেই উন্নয়ন এবং পরিবর্তন কাজ শুরু করা। পরিকল্পনাহীন যে
কোন কাজই পরবর্তিতে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে শংকা তাদের। যদিও
১১ বছর বয়সী এই সিটি কর্পোরেশন নিয়োগপ্রাপ্ত কোন নগর পরিকল্পনাবিদ পায়
নি । তবে নব নির্বাচিত মেয়র আরফানুল হক রিফাত তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে
বলেছিলেন, কুমিল্লা নগরীর জন্য দেশ সেরা পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ নেয়া হবে।
যার বাস্তবায়ন দেখতে চায় কুমিল্লাবাসী।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লা সিটির
পরিকল্পনাবিদের জন্য নতুন জনবলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। যা এবার অনুমোদন হতে
পারে। কুমিল্লা সিটির একজন নকশাকার রয়েছে। তবে কুমিল্লা সিটির জন্য যে
বিশাল বরাদ্দ রয়েছে এমন আরো দুই তিনটি বরাদ্দ পরিকল্পনামত কাজে লাগানো গেলে
আগামী ৫ বছরেই একটি পরিকল্পিত নগরী পাওয়া সম্ভব।
বিশ্লেষকদের মতে,
কুমিল্লা নগরীর জনসংখ্যা, আয়তন, অর্থনীতি, রাজনীতি, পরিবেশ ও জলবায়ু,
অবকাঠামো, সড়ক, স্থাপনা ও ইতিহাস পর্যালোচনা করে নগরীর জন্য মহাপরিকল্পনা
নেয়া সময়ের দাবি। রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ, ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয়
সামাজিক নেতৃবৃন্দের সক্রিয় অংশগ্রহনে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং
কাজ শুরু করা প্রয়োজন। উত্তরের ১৮টি ওয়ার্ডের বাইরে দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডে
সিটি কর্পোরেশনের জন্য প্রয়োজনীয় বড় বড় স্থাপনা যেমন- স্টেডিয়াম, পার্ক,
বিনোদন কেন্দ্র ও বিশাল আকারের দাপ্তরিক স্থাপনা করা যেতে পারে। এছাড়া
আবাসিক ভবন অনুমোদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসংখ্যা, সেবার মান এবং সড়ক
ব্যবস্থা আমলে নেয়া উচিত। এছাড়া এই নগরের উন্নয়নে ইতিহাস ঐতিহ্যকে
প্রাধান্য দিয়েই পরিকল্পনা নেয়া উচিত। জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর উন্নয়ন
কাজের জন্য বিভিন্ন সময় রাজধানী ঢাকা থেকে পরিকল্পনাবিদদের মাধ্যমে
বিশ্লেষণ করে কাজ করা হয়। বিদেশি বরাদ্দের কাজগুলোতেও পরিকল্পনা করেন
নিজস্ব পরিকল্পনাবিদরা। আর স্বল্প আয়তন এবং বরাদ্দের উন্নয়ণ কাজের জন্য
মেয়র-কাউন্সিলরদের পরামর্শের উপরই নির্ভর করতে হয়েছে কর্পোরেশনকে। তবে
কুমিল্লা নগরীর জন্য করা মাষ্টারপ্ল্যান স্থানীয় সরকারের অনুমোদন না পাবার
ঘটনাও রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা কুমিল্লা জেলা সাধারণ
সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, নগরীর উন্নয়নে পুরোনো সমস্যাগুলোকে প্রাধান্য
দেয়া উচিত। উন্নয়ন কাজের কারণে আবার ভবিষ্যতে যেন কোন ধরনের সমস্যার তৈরী
না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।উন্নয়ন যেন ভোগান্তির কারন না হয়। যেমন-
নগরীতে অপরিকল্পিতভাবে যে এত শপিংমল বা আবাসিক ভবন নির্মান হয়ে গেলো চাইলেও
এখন এসব অপসারন করা সম্ভব না। কিন্তু নগরীর বিভিন্ন সমস্যার জন্য এসব
অপরিকল্পিত ভবনগুলোই দায়ী। এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
তিনি
আরো বলেন, নগরীতে জনসংখ্যা এবং আয়তন অনুযায়ী আবসিক এলাকা তৈরী এবং যানবাহন
অনুমোদন করা উচিত। জলাবদ্ধতা এবং যানজট নিরসনে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করা
ছাড়া এগুনো আবার কোন সমস্যা যেন তৈরী না করে তা খেয়াল রাখতে হবে।
ইতিহাসবিদ
আহসানুল কবির বলেন, বর্তমান মেয়র যেহেতু সরকারি দলের লোক- তিনি চাইলে
সরকারি সকল দপ্তরের সহযোগিতা সহজে নিতে পারেন। এবং উন্নয়ণ কাজে সকল
সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বিত করার উদ্যোগ গ্রহন করলে এই নগরীর পরিবর্তন
সম্ভব। তবে পরিকল্পনা ব্যতীত যে কোন কাজই নগরীর ভবিষ্যত উন্নয়ণকে
বাঁধাগ্রস্থ করবে।
গত ১৫ জুন নির্বাচনে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে নতুন
মেয়র নির্বাচিত হন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কুমিল্লা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক
আরফানুল হক রিফাত। এবারই প্রথম তিনি জনপ্রতিনিধিত্ব করবেন। তবে এই পর্ষদে
নির্বাচিত অধিকাংশ কাউন্সিলর পূর্বে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং গত মেয়াদে
কাউন্সিলর হিসেবে জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন । যে কারণে নগরীর
বেশিরভাগ ওয়ার্ডের সমস্যাগুলো আগে থেকেই জানা আছে কাউন্সিলরদের, যা তারা
সহজেই নতুন ভাবে উপস্থাপন করে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহন করতে পারে।
উল্লেখ্য,
নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার
উন্নয়ণ বরাদ্দ পেয়েছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন। এত বিশাল পরিমান বরাদ্দ এর
আগে পায়নি এই সিটি। নগরবাসীর প্রত্যাশা সরকারি এই বরাদ্দ পরিকল্পনামতই যেন
ব্যয় করা হয় নগরীর উন্নয়ণে।