পবিত্র
ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। এ সময় পেঁয়াজ ও মসলার চাহিদা বেড়ে
যায়। প্রতিবছরই তার সুযোগ নেন এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী। তাঁরা নিজেদের
মধ্যে সিন্ডিকেট করে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন।
এবারও তার ব্যতিক্রম
হয়নি। এক সপ্তাহ আগেও যে পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ টাকা কেজি, গতকাল তা বিক্রি
হয়েছে ৫৫ টাকা কেজিতে। আগামী সপ্তাহে বা ঈদের আগে আগে তা আরো বেড়ে যেতে
পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আদা, রসুন বা অন্যান্য মসলার দামও বাড়তি। এ সময়
কোরবানি করা পশুর চামড়া সংরক্ষণে প্রচুর লবণের প্রয়োজন হয়। জানা যায়, একটি
সিন্ডিকেট লবণের দাম বাড়ানোর জন্যও উঠেপড়ে লেগেছে। যদিও উৎপাদকরা
জানিয়েছেন, প্রচুর লবণ মজুদ আছে। দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
প্রকাশিত খবর
থেকে জানা যায়, বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা ভারতীয় পেঁয়াজ
আমদানি বন্ধ থাকা এবং পেঁয়াজের অভ্যন্তরীণ সরবরাহ কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন।
তাঁদের বক্তব্যে যুক্তি রয়েছে। সে কারণে পরিস্থিতি সামলানোর জন্য জাতীয়
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে দ্রুত
পেঁয়াজ আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের অনুমতি (ইমপোর্ট পারমিট) দেওয়ার অনুরোধ
জানিয়েছে। পাশাপাশি অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন বাজারে অভিযানও পরিচালনা করা
হচ্ছে। ক্রয় রসিদ না রাখা এবং ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার অভিযোগে
বুধবার শ্যামবাজারে অভিযান চালিয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০ হাজার টাকা
জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ মজুদ করার প্রমাণও
পেয়েছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। এদিকে হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা
জানিয়েছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য তাঁরা প্রস্তুত রয়েছেন এবং
সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় আছেন।
শুধু পেঁয়াজ বা মসলা নয়, বাজারে প্রায়
প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ছে। বাড়ছে চালের দামও। চালের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য
এর আগে দেশজুড়ে অভিযানও চালানো হয়েছে। সম্প্রতি চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে
সরকার। আগামী চার মাসের জন্য চালের আমদানি শুল্ক ৬২.৫ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ
করা হয়েছে। এর পরও বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। দাম ক্রমেই বাড়ছে।
অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতির এই সময়ে কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয়
পণ্যসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।
ভোক্তাদের
স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যেতে
পারে—বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কেন সে বিষয়টি আগে উপলব্ধি করেনি, তা আমাদের
বোধগম্য নয়। এখন দ্রুত আমদানির অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি বাজারে
সরকারের হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে। কার্ডে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি টিসিবির ট্রাক
সেল বাড়াতে হবে। অন্যদিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নিতে হবে।