ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বিষের সঙ্গে বসবাস
Published : Saturday, 2 July, 2022 at 12:00 AM
বলতে গেলে প্রতিদিনই বিষের সংস্পর্শে আসছি আমরা। আমাদের অসচেতনতায় প্রতিনিয়ত নানা পণ্যে ভর করে বিষ ঢুকছে শরীরে। এ তালিকায় শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব নিয়ে এখনই সচেতন না হলে ভয়ানক পরিণতি মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
খাদ্যে ভেজাল ও নিম্নমানের প্রসাধনীর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন আতঙ্ক-নিম্নমানের প্লাস্টিক পণ্য, খেলনা ও মানি রিসিপ্ট। এটিএম বুথ থেকে শুরু করে যেকোনও দোকানেই এখন মুদ্রিত রসিদ দেওয়া হয়। যে কালিতে এটি প্রিন্ট করা হয় সেটাই বিষাক্ত। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন এসডো’র গবেষণা বলছে মানি রিসিপ্ট ও সস্তা খেলনায় বিপিএ-এর সঙ্গে বিপিএস-ও পাওয়া গেছে। বৈশ্বিক অঙ্গনে এ নিয়ে প্রচলিত স্লোগানটা হলো ‘ট্রানজেকশন উইথ টক্সিনস’।
৩৯টি স্থান (দোকান, শপিং মল) থেকে নেওয়া মানি রিসিপ্টের ২৭টিতে বিপিএ ও ১০টিতে বিপিএস পাওয়া গেছে। এসব নমুনায় বিপিএ’র মাত্রা ছিল ০.৮৩-১.৭১ শতাংশ এবং বিপিএস ছিল ০.৬১-০.৯৬ শতাংশ। অথচ ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য মাত্রা ০.০২ শতাংশ।
গবেষণা বলছে, মানি রিসিপ্ট থেকে বিপিএ বা বিপিএস মানুষের হাতে আসে ও ত্বক ভেদ করে রক্তে মেশে। বিশেষ করে ভেজা হাতে রিসিপ্ট স্পর্শ করলেই এই বিষ শোষণের হার সাতগুণ বেড়ে যায়।
গবেষকরা তাই মানি রিসিপ্টকে সবসময় শুকনো হাতে ধরতে বলেছেন। এছাড়া এটাকে সংরক্ষণ না করে নির্ধারিত ময়লার ঝুড়িতে সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দেওয়া উচিত বলেও জানান তারা।
বিসফেনল-এ তথা বিপিএ হলো এন্ডোক্রাইন বিঘ্নকারী রাসায়নিক (ইডিসি)। প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে দৈনিক বিপিএ এক্সপোজারের পরিমাণ ০.৪৮ থেকে ১.৬ মাইক্রোগ্রাম প্রতিকেজি। পানি, ধুলা, পয়ঃনিষ্কাশন, অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের বায়ুর নমুনাসহ বিভিন্ন পরিবেশগত নমুনায় বিপিএ পাওয়া গেছে। এটি সস্তা প্লাস্টিক পণ্য, খাদ্য ও পানীয় প্যাকেজিং থেকেও নিঃসৃত হতে পারে এবং টিনজাত খাবারকেও দূষিত করতে পারে।
বলা হচ্ছে প্লাস্টিকের বোতল তৈরিতে বিপিএসহ একাধিক উপাদান থাকে যা বিষাক্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের তৈরি বোতলে দিনের পর দিন পানি পান করলেও ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়ে। এই উপাদান রক্তে মিশলে কিডনির সমস্যাও হতে পারে।
ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো প্লাস্টিক কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় প্লাস্টিক রিসাইকেল করা হয়। সেই পুরনো প্লাস্টিকের সঙ্গে সস্তার অন্য প্লাস্টিক মিশিয়ে তৈরি হয় শিশুর খেলনা। এসব খেলনা শিশু হাতে-মুখে নিয়ে খেলে। এতেও তার শরীরে মাইক্রো-প্লাস্টিক তথা অণুবিক্ষণিক কণা প্রবেশ করে।
এসব নিয়ে একাধিকবার খবর প্রকাশ হলেও অবৈধ ঘোষণা করতে দেখা যায়নি। দেশের বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগীরা এই দাবিতে সোচ্চার থাকলেও পরিবেশ অধিদফতর এ কাজে এখনও পিছিয়ে।
এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিষয়গুলো অবগত হয়েছি। নানা মাধ্যমে গবেষণা হলেও আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হতে হয়। সেজন্য কাজ করছি। তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মানি রিসিপ্ট ও প্লাস্টিকের খেলনায় বিপিএ’র উপস্থিতি আমাদের জন্য নতুন বিষয়। এ নিয়েও আমরা কাজ করছি।
জানতে চাইলে এসডো’র নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, সরকার এখনও তেমন কোনও উদ্যোগ নেয়নি। আমরা সচেতন করার চেষ্টা করছি। বারবার বলে বিষয়টি আলোচনায় এলে কাজের গতি বাড়ে। এই বিপিএ’র সবচেয়ে খারাপ দিক শিশুদের নিম্নমানের খেলনায় এটা ব্যবহার হচ্ছে। নিম্নমানের এসব খেলনার বেশিরভাগই বানানো হয় পুরান ঢাকায়। এ খেলনায় বিপিএ ছাড়াও আছে সিসা। এটিও ভীষণ ক্ষতিকর।