ঈদুল আজহার বাকি মাত্র ৫দিন। সারাদেশের মহাসড়কগুলোতে বাড়ছে যানবাহনের চাপ। ব্যতিক্রম নয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ। তবে এ মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাজ করছে ১৫টি কুইক রেসপন্স টিম। মহাসড়কে কোথাও-কোনও দুর্ঘটনা হলে এই টিমগুলো দ্রুততার সঙ্গে চলাচল স্বাভাবিক করবে। এছাড়া এবার সড়কের কোনও অংশে সমস্যা থাকলে দ্রুততম সময়ে তা মেরামতে ৪০ জনের একটি দল সার্বক্ষণিক কাজ করবে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ অবস্থায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে এবার ঈদযাত্রা অনেক বেশি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক হবে বলে মনে করছেন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
জানা গেছে, গত ঈদুল ফিতরে ঘরমুখী মানুষের চাপ ছিল বেশি। এতে সড়কে দ্বিগুণ চাপ সৃষ্টি হয়। সড়কের সংস্কার কাজ, হাইওয়ে পুলিশের লোকবল সংকট, এক লেনে যান চলাচল এবং সর্বোপরী সড়কে গণপরিবহনের চাপ বেশি থাকার পরেও কোনও বড় যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। তাই যাত্রী সাধারণের প্রত্যাশা এবারের ঈদে যাত্রা আরও স্বস্তির হবে।
যাত্রী সাধারণ ও বাস শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা চাকরিজীবী তাদের একটি বড় অংশ গত ঈদুল ফিতরে ছুটি নিয়েছিলেন। যে কারণে এবারে অনেকে ছুটি পাবেন না। এছাড়া ঈদুল ফিতরে কোরবানির পশু কেনার জন্য অনেকেই ঈদের আগেই শহর ছেড়ে গ্রাম চলে যাচ্ছেন। যে করণে শেষ মুহূর্তের চাপ থাকবে না।
এদিকে মহাসড়কের পাশের বিভিন্ন বাজারের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব বিষয়েও পুলিশ তৎপর থাকবে বলে জানা গেছে।
কুমিল্লার নিমসার বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজার মহাসড়কের অংশ দিয়ে যানবাহন ধীর গতিতে চলে। কারণ মানুষ মহাসড়ক পার হয়ে একদিক থেকে অপরদিকে যায়। তবে এখনও কোনও যানজট লাগেনি।
পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকার বাসিন্দা ফাহিম মুনতাসির বলেন, এ দিকটায় ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে মানুষ চলাচল করে। তাছাড়া মহাসড়কে উঁচু নিরাপত্তা বেষ্টনি আছে যে কারণে কেউ তেমন সড়ক দিয়ে পারাপার হয় না। তাই সড়কে তেমন ধীরগতি নেই। আর যানজটও চোখে পড়েনি। মহাসড়ক ফাঁকাই বলা চলে। চৌদ্দগ্রাম এলাকার সোহাগ মিয়া জানিয়েছেন, চৌদ্দগ্রামের কোনও অংশে যানজট নেই। আমরা আশাবাদী এবার যানজট হবে না। কারণ এর আগেরবার গাড়ির চাপ থাকার পরেও যানজট হয়নি। এবারতো যান বাহনের চাপ নেই।
কুমিল্লা-ঢাকা রুটের তিশা পরিবহনের চালকের সহকারী মোহাম্মদ জয়নাল বলেন, টোল কাউন্টারের কাছে সামান্য যানজট থাকে। এছাড়া পুরো সড়ক খালি থাকে। যদিও কোথাও কোথাও সড়ক সামান্য ভাঙার কারণে ধীরগতিতে চলতে হয়।
রয়েল কোচ বাসে ঢাকা থেকে কুমিল্লা আসা সাইফুল ইসলাম বলেছেন, মাত্র দুই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে আসলাম। ঈদ মৌসুমে এত কম সময়ে এর আগে মনে হয় না আসতে পেরেছি। কোথাও যানজট নেই। তবে টোল প্লাজাসহ কিছু স্থানে ধীরগতি আছে।
এদিকে মহাসড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণ ও ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে কাজ করছে পুলিশ। ঈদকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে ভিন্ন উদ্যোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের যেকোনও অংশে দুর্ঘটনার খবর পেলে সর্বোচ্চ ১০মিনিটের মধ্যে যেন ঘটনাস্থলে যেতে পারে তার জন্য গঠন করা হয়েছে ১৫টি কুইক রেসপন্স টিম। এই টিমের আছে পাঁচটি রেকার, যা ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করবে।
এছাড়া হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, মহাসড়কের কিছুকিছু অংশ অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ভেঙে গেছে। এ কারণে ওই অংশে ধীরগতিতে যান চলাচল করছে। এছাড়া গত দুই বছর কোরবানির ঈদে গরু ব্যবসায়ীরা দূর-দূরান্তে যেতে পারেনি। এই কোরবানির ঈদ আমাদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। কেননা এবার তারা দূর-দূরান্তে গরু নিয়ে যাবে। তাই তাদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি।
তিনি জানিয়েছেন, গত ঈদে সামান্য জনবল সংকট থাকলেও এবার হাইওয়ে পুলিশের কোনও জনবল সংকট নেই। আমাদের যে জনবল সংকট ছিল আমরা কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে পূরণ করেছি। আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে ৬০ জন কমিউনিটি পুলিশ সদস্য।
এছাড়া সড়কে চাঁদাবাজি রোধে পরিবহন সেক্টরের মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। চাঁদাবাজি রোধে তাদেরও সোচ্চার থাকতে বলেছি। যেসব বাজার দিয়ে সাধারণ মানুষ মহাসড়ক পার হয়, সেসব বাজারে আমাদের বিশেষ নজরদারি থাকবে। কিছু বাজারে আমরা কাঁটাতারের ব্যবস্থা করেছি। এতে করে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে, যান চলাচলও স্বাভাবিক থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা পুরো মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও বাড়তি আরও ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স রেখেছি। যাতে করে দুর্ঘটনায় কবলিতদের দ্রুত হাসপাতাল নেওয়া যায়। মহাসড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন ও সার্বক্ষণিক দেখাশোনার জন্য আমাদের ৩৪টি মোবাইলটিম মাঠে থাকবে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, হাইওয়ে পুলিশের সাথে আমাদের ৪০ জন সদস্য সার্বক্ষণিক থাকবে। মহাসড়কের কোনও অংশ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার করা হবে। ৭ জুলাই থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও কিছু অংশে সংস্কার কাজ করা প্রয়োজন ছিল। আমরা তা করে দিয়েছি। আমরা চান্দিনা ও গৌরিপুরের বিশেষ কিছু অংশ সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণে রেখেছি। তাই এবার যানজটের সম্ভাবনা নেই বলা চলে।