পবিত্র
ঈদ-উল আযাহার আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি। তবে ঈদকে সামনে রেখে কুমিল্লায় এখনো
জমে উঠেনি পশুর হাটগুলো। বাজারগুলোতে একদিকে যেমন গরুর সংখ্যা কম; তেমনি
নেই ক্রেতাদের আনা-গোনাও। তারপরও যারাই বাজারে আসছেন; দরদাম পরখ করে চলে
যাচ্ছেন। রবিবার (৩ জুলাই) কুমিল্লার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন
চিত্র। বেশিরভাগ পশুর হাটই ছিলো ফাঁকা; ছিলো না ক্রেতা সমাগমও।
যদিও
শহরের চেয়ে গ্রামের চিত্র কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতা এবং
বিভিন্ন বাজার কমিটির লোকজন মনে করছেন- দুয়েকদিনের মধ্যে কুমিল্লায় জমে
উঠবে কোরবানির পশুর হাট, চলবে জমজমাট বিকিকিনি।
আগামী ১০ জুলাই পবিত্র
ঈদ উল আযহা অনুষ্ঠিত হবে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবার
ঈদে কুমিল্লায় কোরবানীর পশুর চাহিদা ২ লাখ ৪৮ হাজার। এর বিপরীতে জেলায় মজুদ
আছে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৩২টি। এবারের ঈদের জন্য জেলাজুড়ে স্থায়ী পশুর হাট আছে
৭৫টি এবং অস্থায়ী হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৩৭৯টি। তবে জেলা প্রশাসন থেকে
কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে এবং
মহাসড়কের পাশে কোরবানির পশুর হাট বসতে দেওয়া হবে না।
কুমিল্লার বিভিন্ন
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে স্থায়ী এবং অস্থায়ী পশুর হাটগুলোতে গরু
আসতে শুরু করেছে। যদিও এর সংখ্যাটা তুলনামূলক অনেক কম। এসব বাজারে দরদাম
পরখ করতে আসছেন ক্রেতারা। তবে পশু ক্রয়ের প্রতি তাদের ঝোঁক অনেক কম। দরদাম
জেনে কিছুটা ধারণা নিয়ে রাখছেন তারা। ক্রেতাদের পাশাপাশি বিক্রেতারাও
যাচাই করে নিচ্ছেন বাজার।
রবিবার দুপুরে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার
সাহেবাবাদ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারটিতে গরুর সংখ্যা খুবই কম। ফাঁকা
মাঠে অল্প কয়েকজন গৃহস্ত ও ব্যবসায়ী তাদের গরু নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় আছেন।
কিন্তু বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে। তারপরও যারা আসছেন, গরু দেখে দরদাম
জিজ্ঞেস চলে যাচ্ছেন। ফলে অনেক বিক্রেতার চোখে-মুখেই ফুটে উঠেছে হতাশা।
যদিও
ক্রেতাদের অভিযোগ বিক্রেতারা গরুর দাম হাঁকছেন অনেক বেশি। সাহেবাবাদ
বাজারে বুড়িচং থেকে গরু কিনতে যাওয়া নজরুল ইসলাম বলেন, ভেবেছিলাম বাজার জমে
উঠেছে। কিন্তু এসে দেখি মাঠ ফাঁক। যে কয়েকটি গরু আছে, বিক্রেতারা দাম
হাঁকছেন আকাশচুম্বি। এতো দামের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।
বাজারের
ইজারাদার দুলাল হোসেন সরকার বলেন, বাজার এখনো জমে উঠেনি। দুয়েকদিন পর থেকে
কেনাকাটা বাড়বে। মানুষজন যারাই আসছে, তারা মূলত দামজানতে চাইছে। আরো
কয়েকদিন পর হয়তো কিনবে। এবার বাজার বেশ চড়াই মনে হচ্ছে। দেখা যাক সামনে
দিনগুলোতে কি হয়। শুধু সাহেবাবাদ নয়, অন্যান্য বাজারের চিত্রই এক বলে জানা
গেছে।
সরকারিভাবে শুমারীতে দেখা গেছে, কোরবানির চাহিদা মেটাতে দেশীয়
পশুর সংখ্যা পর্যাপ্ত রয়েছে। তারপরও প্রতিবছর ভারত থেকে অবৈধ পথে গরুর
কারণে চাহিদা কমে যায় স্থানীয় খামারে লালন-পালন করা গরু-ছাগলের। যে কারণে
অনেক খামারীকেই হাটে গরু বিক্রি না করে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয়।
ভারত থেকে
আসা গরুর কারণে দেশীয় খামারীরা লোকসানের মুখে পড়তে পারে- এমন আশঙ্কা জানিয়ে
সেইফ ক্যাটল ফার্মের সত্ত্বাধিকারী নাহিদ হোসেন জানান, এখনো পর্যন্ত
বাজারে গরুর দাম খামারীদের অনুকূলে আছে। তবে যদি জেলার প্রধান প্রধান
বাজারগুলোতে ভারতীয় গরুর সংখ্যা বেড়ে যায়Ñ তাহলেই খামারীদের জন্য বিপদ।
আমরা আশা করছি ভারত থেকে গরু আসা ঠেকাতে প্রশাসন সচেষ্ট থাকবে।
নাহিদ
আরো জানান, ভারত থেকে আসা গরুর কারণে কোরবানির সময় দাম কমে গেলেও ঈদের পরে
গরুর মাংসের দাম বেড়ে যায়। কারণ, তখন খামারীরা কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা
গরু চড়া দামে কসাইদের কাছে বিক্রি করে।