কে হতে পারেন শ্রীলঙ্কার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট?
Published : Saturday, 16 July, 2022 at 12:00 AM
গোটাবায়া
রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার
দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন একজন ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী, দেশটির মূল বিরোধীদলের
প্রধান নেতা ও সাংবাদিক থেকে রাজনৈতিক হওয়া ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা।
অর্থনৈতিক
সংকটে গণবিক্ষোভের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে প্রথমে প্রতিবেশী মালদ্বীপে
গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে, বৃহস্পতিবার সেখান
থেকে এশিয়ার আরেক দেশ সিঙ্গাপুরে চলে যান তিনি। সেদিন রাতে সিঙ্গাপুর থেকে
পাঠানো এক ইমেইলে শ্রীলংকার পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র
পাঠিয়েছেন গোটাবায়া।
এখন আইনি প্রক্রিয়া শেষের পর শুক্রবার
আনুষ্ঠানিকভাবে গোটাবায়ার পদত্যাগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করার ঘোষণা
দিয়েছেন স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে। এই ঘোষণার পর স্পিকারের
পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান করার কথা রয়েছে আর এরপর পার্লামেন্টের ২২৫ জন
সদস্য নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দেবেন, যা আসছে সপ্তাহে হতে
পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পার্লামেন্টে সামান্য ব্যবধানে
সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারলেই একজন প্রার্থী জয়ী হবেন, কিন্তু তাকে
‘আরগালেয়া’ নামে পরিচিতি পাওয়া সরকারবিরোধী গণআন্দোলনে অংশ নেওয়া হাজার
হাজার সাধারণ শ্রীলঙ্কানের আস্থাও অর্জন করতে হবে। কারণ এ আরগালেয়া বা
‘সংগ্রামের’ মাধ্যমেই রাজাপাকসে পরিবারকে ক্ষমতা থেকে হটানো সম্ভব হয়েছে।
ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী:
চলতি
বছরের মে-তে ষষ্ঠবারের মতো শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন রনিল
বিক্রমাসিংহে, এখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবেও নিয়োগ পেয়েছেন; যারা
দেশটির শীর্ষ পদ পেতে আগ্রহী তিনিও তাদের মধ্যে আছেন বলে দুটি রাজনৈতিক
সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে।
পার্লামেন্টে বিক্রমাসিংহের
দলের মাত্র একটি আসন থাকলেও গোটাবায়া রাজাপাকসের ভাই বাসিল রাজাপাকসেসহ
ক্ষমতাসীন শ্রীলঙ্কা পোদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) দলের একটি অংশ তাকে
সমর্থন দিচ্ছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এসএলপিপির একজন কর্মকর্তা
জানিয়েছেন, দলের লোকেরা অনুভব করছে শ্রীলঙ্কা যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
মোকাবেলা করছে বিক্রমাসিংহে (যিনি দেশটির অর্থমন্ত্রীও) তা ভালোভাবে সামাল
দিতে পারবেন।
বিক্রমাসিংহে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) বেইলআউট প্যাকেজ ও শ্রীলঙ্কার নতুন বাজেট নিয়ে আলোচনায় যুক্ত আছেন।
কিন্তু
শ্রীলঙ্কার সরকারবিরোধী বহু আন্দোলনকারী ৭৩ বছর বয়সী এ রাজনীতিককে
গভীরভাবে অপছন্দ করেন। তাদের অনেকেই চলতি সপ্তাহে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে
সংঘর্ষে জড়ানোর পর প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহের দপ্তর দখল করে নিয়েছিল।
শ্রীলঙ্কার
প্রধান বিরোধীদল সামাগি জানা বালাভিগায়া-র (এসজেবি) নেতা সাজিথ
প্রেমাদাসাও (৫৫) এ ময়দানের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু পার্লামেন্টে তার
দলের সদস্য সংখ্যা মাত্র ৫০ হওয়ায় ভোটে উৎরে যেতে তাকে দ্বিদলীয় সমর্থনের
জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে পড়াশোনা করা সাজিথ
শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসার ছেলে। ১৯৯৩ সালে এক
আত্মঘাতী বোমা হামলায় রানাসিংহে নিহত হওয়ার সাজিথ রাজনীতিতে নামেন। ২০০০
সালে তিনি পার্লামেন্টের সদস্য হন এবং পরে শ্রীলঙ্কার উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী
হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৮ সালে তিনি দেশটির গৃহনির্মাণ ও সংস্কৃতি
বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তার দল এসজিবি আরগালেয়া প্রতিবাদ
আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত আছে। জনগণের দুর্দশার বিষয়ে তার ‘গভীর বোঝাপড়া’ আছে
বলে দাবি করেছেন এসজিবির একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য।
শ্রীলঙ্কার পরবর্তী
প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে থাকা তৃতীয় প্রার্থী সাবেক সাংবাদিক
দুল্লাস আলাহাপেরুমা (৬৩) । অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত হলেও ক্ষমতাসীন এসএলপিপির
জ্যেষ্ঠ এ আইনপ্রণেতা সব হিসাবনিকাশ উল্টে দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তিনি তার দলের সহকর্মীদের একটি অংশের মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন।
শ্রীলঙ্কার
পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন দলের প্রায় ১১৭টি ভোট আছে। এ ভোট আলাহাপেরুমার জন্য
ব্যবহার করে তাকে জয়ী করা যেতে পারে বলে মত এসএলপিপির আইনপ্রণেতা চারিথা
হেরাথের।
১৯৯৪ সালে পার্লামেন্টে প্রবেশ করা আলাহাপেরুমা শ্রীলঙ্কার
গণমাধ্যম মন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন।
এপ্রিলে আান্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের বাসভবন ঘেরাও করলে তিনি
মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত করেন, তখন আলাহাপেরুমা পদত্যাগ করেন।
“আমি
বাস্তববাদী। আমাদের এমন একজন প্রার্থী দরকার যিনি আরগালেয়া আন্দোলন ও
জনগণের বিরাট অংশের কাছেও গ্রহণযোগ্য এবং যিনি পার্লামেন্ট সদস্যদের
অনুমোদনও পেতে পারেন। এ ধরনের প্রার্থী পাওয়া সহজ নয়, কিন্তু দুল্লাস
একইসঙ্গে শক্তিশালী এবং কার্যকর বিকল্প হতে পারেন,” বলেন হেরাথ।