স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধে সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি
Published : Thursday, 21 July, 2022 at 12:00 AM
সীমান্ত পার করে দিলেই স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তি পেয়ে যায় মোটা অংকের টাকা। আকারে ছোট হওয়ায় লুকানো সহজ এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়ায় থামানো যাচ্ছে না এর চোরাচালান। অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় অনেকে জড়িয়ে পড়ছে চোরাচালান চক্রের সাথে। তবে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দাবি, স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের চিহ্নিত করে সীমান্ত এলাকায় বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ফলে বিভিন্ন সীমান্তে প্রায়ই স্বর্ণসহ ধরা পড়ছে এই চক্রের সদস্যরা।
বিএসএফের দাবি, স্বর্ণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব স্বর্ণ মূলত মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম ইউরোপ এবং সিঙ্গাপুর থেকে আনা। কাট অফ সিস্টেমে (একের সঙ্গে অন্যের পরিচয় না থাকা) পরিচালিত হয়ে থাকে স্বর্ণের চোরাচালান। চোরাচালানকারীদের একটি চেইন থাকে। সে কারণে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। চোরাচালানের পথ খোঁজার জন্য প্রথমে কম ওজনের স্বর্ণ সীমান্ত পার করানোর পরিকল্পনা করে। সফল হলে বেশি ওজনের স্বর্ণ পাচারের সুযোগ খোঁজে। তারা ট্রান্সপোর্টের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে। পাচারের এই টাকা তারা বিভিন্ন বিকল্প ব্যয়ে ব্যবহার করে। চোরাচালানে সফল হলে তারা সেসব টাকা দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে নিয়ে আসে।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দায?িত্বরতদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্তে কৃষি কাজ যারা করেন তাদের মধ্যে এসবে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। তারা ফেনসিডিল, ইয়াবা এবং স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও সেসব কাঁটাতারের বেড়া কেটে বিভিন্ন সময় চোরাকারবারিরা মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালান করে থাকে। এছাড়া সীমান্তে অনেক জায়গায় আলোর ব্যবস্থা না থাকায় রাতের অন্ধকারেও সুযোগ নেয় চোরাচালানকারীরা। এছাড়া, সীমান্তবর্তী এলাকায় যেসব ব্রিজ রয়েছে সেসব ব্রিজের নিচ দিয়ে পাইপ ব্যবহার করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে মাদক পাচার করা হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহন ভারতে প্রবেশ করছে, এর মধ্যেও অনেক সময় স্বর্ণচোরাচালানের ঘটনা ঘটে থাকে। বিপুল সংখ্যক ট্রাক এবং যানবাহন পণ্য নিয়ে ভারতে প্রবেশ করায় অনেক ক্ষেত্রে অবৈধ পণ্য ডিটেক্ট করা সম্ভব হয় না। সীমান্তে আধুনিক প্রযুক্তি স্থাপন করা গেলে চোরাচালান প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন দুই দেশের সীমান্তরক্ষায় দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সাউথ রিজিওনের ডিআইজি এস এস গুলেরিয়া বলেন, সীমান্তে স্বর্ণ কিংবা মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে যারা গ্রেফতার হচ্ছে তাদের অধিকাংশই এর বাহক বা ক্যারিয়ার। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে সেরকম কোনও তথ্য পাওয়া সম্ভব হয় না কারণ তারা কাট-আউট পদ্ধতিতে কাজ করে। তারপরও যতটুকু সম্ভব জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য বের করার চেষ্টা করি। সীমান্তের অনেক অংশ এখনও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে, আমরা চাই বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতার স্থাপনে কার্যকর ব্যবস্থা নিবে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি’র সাতক্ষীরা রিজিওন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওমর সাদী বলেন, বর্ডার বেল্টে ভারতের পাকা রাস্তা রয়েছে। পাশাপাশি তাদের কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। যেটা আমাদের অনেকাংশে নেই। আমাদের ক্ষেত্রে এটা আমরাও চিন্তা করেছি, আমরাও সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি কাঁটাতারের বেড়া আমাদেরও দরকার। যেটা এখন পাহাড়ি এলাকায় শুরু হয়েছে। চারদিকে রিং রোড হবে। তাহলে বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। সম্প্রতি সীমান্তে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িতরা বেশি ধরা পড়ছে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাথে তথ্য আদান-প্রদানের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই স্বর্ণচোরাচলানের সাথে সংশ্লিষ্টদের পাকড়াও করা সম্ভব হচ্ছে।