‘দীর্ঘদিন
ঢাকায় রিকশা চালাতাম। বড় বড় দালান দেখে মনে মনে ভাবতাম, আমার কি একটা
টিনের ঘরও হবে না? প্রধানমন্ত্রী আপনি সে ব্যবস্থা করেছেন। এক মা আমাকে
জন্ম দিয়েছেন, আরেক মা আপনি ঘর দিলেন।’
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) উপহারের
ঘর পেয়ে পঞ্চগড় সদরের মাহানা পাড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে রিকশাচালক রবিউল
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিওকলে যুক্ত হয়ে এভাবে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
এদিন
সারাদেশে ২৬ হাজার ২২৯টি পরিবারকে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত ঘর
হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা ঘরের চাবি ও জমির দলিল
বুঝিয়ে দেন।
গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর
কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। উদ্বোধনী বক্তব্য শেষে
প্রধানমন্ত্রী ৫টি স্থানে উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রথমে
মতবিনিময় করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে রামগতি থেকে
ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেছিলেন, সেই রামগতির চড় পোড়াগাছা
ইউনিয়নের চর কোলাকোপা আশ্রয়ণ কেন্দ্রে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার
হোছাইন আকন্দের পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর হাত থেকে আশ্রয়ণের জায়গা পাওয়া বীর
মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ্দিন জাতির পিতার স্মৃতিচারণ করেন।
তিনি বলেন,
জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আমরা স্বাধীন দেশে
ভূমিহীন ও গৃহহীন ছিলাম। জাতির পিতা ’৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চর পোড়াগাছা
গ্রাম পরিদর্শন করেন। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য তিনি নিজ হাতে
মাটি কেটে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনে জায়গা দেন। সেখানে জাতির পিতাকে দেখার
সৌভাগ্য হয়েছিল। জাতির পিতার দয়ায় আমরা আড়াই একর জায়গা পাই। সেখানেই
সুখে-শান্তিতে বসবাস করছি। আমরা অনেক অনেক সুখে আছি।
উপকারভোগী নাসিমা
আক্তার বলেন, ভূমিহীন আমাকে জায়গা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। প্রধানমন্ত্রী
আপনি জায়গা দিয়েছেন। আমাদের মুখে এখন হাসি। আপনাকেও আমরা হাসিমুখে দেখতে
চাই। আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেঁচে থাকুন।
আপনার হাসিমুখ দেখতে চাই।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর
রহমানের পরিচালনায় জলদস্যু জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা উপকারভোগী
আবদুল হান্নান বলেন, আমাদের ৯ সদস্যের পরিবার। বাবার পক্ষে সংসার চালানো
অনেক কঠিন ছিল। সংসারের কথা বিবেচনা করে জলদস্যুতার জীবন বেছে নেই। খেয়ে না
খেয়ে সুন্দরবনে দুঃসহ জীবন কাটিয়েছি। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাকে সুন্দর
জীবন দিয়েছেন। আপনার দেওয়া সাধারণ ক্ষমায় আমি সুন্দর জীবন পেয়েছি। এখন ঘর
দিলেন। কখনো ভাবিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো, গ্রামে আসতে পারবো, নিজের
বাড়িতে থাকতে পারবো। সেই সুযোগ হয়েছে। এখন আমি দিনমজুরের কাজ করি। আগামীতে
ব্যবসা করতে চাই।
শাহীনুর বলেন, আগে ঘর ছিল না। এখন ঘর পেয়ে অনেক খুশি।
পদ্মা সেতুর কারণে অনেক খুশি হয়েছি। কারণ আমার মায়ের বাড়ি নরসিংদী জেলায়।
২০২০ সালে মা যখন মারা যান, তখন মায়ের মুখ দেখতি পারিনি, কারণ ফেরি তিন
ঘণ্টা দেরি করেছিল। এখন বাপের বাড়ি যেতে আর তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।
ময়মনসিংহ
থেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক এনামুল হক। সেখান থেকে
উপকারভোগী নাসিমা খাতুন বলেন, চার সন্তান রেখে স্বামী চলে যায়। এক সন্তানকে
দত্তক দেই। অন্যের জমিতে থেকে সন্তানদের পড়ালেখা করিয়েছি। ঘর ছিল না। আপনি
ঘর দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের কাছে আসবেন, ডালভাত খেয়ে যাবেন।
তার কথার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আসার চেষ্টা করবো।
আরেক উপকারভোগী জমিলা খাতুন বলেন, স্বামী আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিল। আপনি ঘর দেওয়ার পর স্বামী আবার ফিরে এসেছে। আমি এখন অনেক সুখী।
মাগুড়া
জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলমের পরিচালনায় জাঙ্গালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে
শিক্ষার্থী প্রিয়াংকা সরকার বলেন, আমার বাবা ভ্যানচালক। কোনো ঠিকানা ছিল
না। এখন ঠিকানা পেয়েছি। আগে মনে মনে বলতাম, আমাদের কী নিজস্ব ঠিকানা হবে
না? নিজস্ব ঠিকানার অভাবে চিঠি পাবো না? এখন আপনি ঘর দিয়েছেন। নিজস্ব
ঠিকানায় চিঠি পাবো।
পঞ্চগড়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাত বলেন,
প্রধানমন্ত্রী আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আপনার ছবি ঘরে টাঙিয়ে রেখেছি।
প্রতিদিন পরিষ্কার করি। ঘর পেয়ে অনেক খুশি। চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে
চাই। আপনার ঘর দেওয়ার কারণেই এটা পারবো।