অবৈধ অভিবাসনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়: পররাষ্ট্র সচিব
Published : Saturday, 23 July, 2022 at 12:00 AM
মৃত্যু হতে পারে জেনেও একদল বিপথগামী বাংলাদেশি অবৈধপথে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, ‘এরফলে তারা একদিকে নিজেরা ক্ষতিগ্রস্থ হন, পরিবারকেও নিঃস্ব করে দেন। অন্যদিকে এতে দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। দেশ যখন মধ্যম আয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন অবৈধ পথে অভিবাসন গ্রহণযোগ্য নয়।’
শুক্রবার (২২ জুলাই) সকালে শরীয়তপুরে ‘মানবপাচার প্রতিরোধ ও নিরাপদ অভিবাসন’ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। প্রথমবারের মতো এ ধরনের মতবিনিময় সভার আয়োজন করলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রথম সভাটির স্থান হিসেবে শরীয়তপুর বেছে নেওয়া হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, ওই অঞ্চল থেকে বেশি সংখ্যায় অবৈধপথে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। সভায় জেলার বিভিন্ন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সুশীলসমাজ, মসজিদের ইমাম, ইতালি ফেরত ও সাংবাদিকদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
শরীয়তপুর সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, জননিরাপত্তা সচিব মো. আখতার হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব আহমেদ মুনিরুস সালেহিন, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ইতালিতে একসময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ। তিনি সেসময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি ইতালিতে চার বছর রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছি। ওই সময়ে আমি বাংলাদেশিদের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট দেখেছি, বিভিন্ন সময়ে জেল পরিদর্শন করেছি।‘
ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা একটি মরণ ফাঁদ উল্লেখ করে বলেন, ‘অবৈধপথে যাওয়াদের ৮০ শতাংশরই আশঙ্কা যে ইউরোপে প্রবেশ করা যাবে না। কোনোভাবে প্রবেশ করতে পারলেও ওখানে স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা এখন নেই বললেই চলে। এর আগে ৮০, ৯০-এর দশকে ইউরোপে গিয়ে অনেকে বৈধ হয়েছেন। কিন্তু এখন সেইপথ একেবারেই সংকুচিত হয়ে গেছে।’
অবৈধ পথে যাওয়ার জন্য এক-একজন ব্যক্তি ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা খরচ করে। আর বিপুল এই অর্থ খরচ করেও তারা নিজের জীবনকে বিপন্ন করে। অন্যদিকে দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে এই অবৈধ অভিবাসনের কারণে ইতালি নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে জানান ওই দেশের রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা। তিনি বলেন, বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইতালি প্রবেশের চেষ্টা করার সময়ে গত বছর ৩ হাজার ২৩১ জন মারা গেছেন বলে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। আমি এই তথ্য দিচ্ছি এর ভয়াবহতা বোঝার জন্য। মানবপাচার বন্ধে আমাদের সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইতালির রাষ্ট্রদূত জানান, বৈধপথে ১ হাজার ৬০০ সিজনাল শ্রমিককে ভিসা দিয়েছে ইতালি। এছাড়া আরও ৩ হাজার শ্রমিক ইতোমধ্যে যাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেয়েছে। ভিসার জন্য শিগগিরই আবেদন করবে।
এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি সই নিয়ে আলোচনা চলছে বলে তিনি জানান।