কুবি প্রতিনিধি:
ভয়াবহ
সেশনজটে জর্জরিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) অধিকাংশ বিভাগ।
শিক্ষার্থীদের ৪ বছরের স্নাতক ৫ বছরেও শেষ করতে হিমশিম খাচ্ছে বিভাগগুলো।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ টি অনুষদের অধীনে ১৯ টি বিভাগের স্নাতক ও
স্নাতকোত্তরে মোট ১০০ টি সেমিস্টারের ফলাফল বাকি। এর মধ্যে স্নাতক
সেমিস্টারের ফলাফল বাকি ৮৯ টি এবং স্নাতকোত্তরের বাকি ১১ টি সেমিস্টারের।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে আটকে আছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের মোট ২৯ টি
সেমিস্টারের ফলাফল।
ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায়
আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের। তবে
বিভাগগুলোর দাবি, করোনা মহামারীর প্রভাব, শিক্ষক সংকট, বহিপরীক্ষক থেকে
খাতা ফেরত আসতে দেরি হওয়ায় ফলাফল প্রকাশ করতে সময় লাগছে বেশি।
রবিবার (৭
আগস্ট) পর্যন্ত বিভাগগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বোচ্চ ৯ টি ফলাফল
প্রকাশ করা বাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং
ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের। এর পরেই রয়েছে ইংরেজি বিভাগ।
তাদের বাকি ৮ টি সেমিস্টারের। ৭ টি করে ফলাফল বাকি রয়েছে নৃবিজ্ঞান বিভাগ ও
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের। আইন বিভাগ ও ফার্মেসি বিভাগের বাকি রয়েছে ৬ টি করে
সেমিস্টারের। অর্থনীতি বিভাগ, লোক প্রশাসন বিভাগ, বাংলা বিভাগ এবং রসায়ন
বিভাগের বাকি রয়েছে ৫ টি করে। ৪ টি করে বাকি রয়েছে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ,
ফিনান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগ এবং একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন
সিস্টেমস বিভাগের। ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, কম্পিউটার সাইন্স এন্ড
ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, গণিত বিভাগ এবং পরিসংখ্যান বিভাগের বাকি ৩ টি করে
সেমিস্টারের ফলাফল।
এর মধ্যে ১০ মাসের অধিক সময় পেরিয়ে গেলো ফলাফল পাননি
ইংরেজি বিভাগসহ একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ফার্মেসি বিভাগের ১১তম
ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের অভাবে আটকে আছে ৮ম সেমিস্টারের
পরীক্ষা। চলেছে নবম সেমিস্টারের ক্লাস।
একাধিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের
সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা পরবর্তী অল্প সময়ে প্রতি ব্যাচের একের অধিক
সেমিস্টার সম্পন্ন করা, বিভাগে শিক্ষক সংকটসহ বহিপরীক্ষক থেকে খাতা ফেরত
আসতে দেরি হওয়ায় ফলাফল প্রকাশ করতে সময় লাগছে বেশি। তবে কাজ চলমান রয়েছে,
দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে জানান বিভাগগুলোর প্রধানরা।
ইংরেজি
বিভাগের ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারজানা ইসলাম বলেন, আমরা ২০২১ সালের
অক্টোবর মাসে মাস্টার্সে পরীক্ষা দিয়েছি। ১০ মাস হয়ে গেলেও আমরা রেজাল্ট
পাচ্ছি না। রেজাল্ট ছাড়া আমরা অনেক চাকরি পরীক্ষায় আবেদন করতে পারছি না।
রেজাল্ট এর বিষয়ে একাধিকবার বিভাগের যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া
যায়নি।
তাছাড়া, গণমাধ্যম কর্মীদের কোনো তথ্য দিলে তার প্রভাব ফলাফলে গিয়ে পরে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী।
পরীক্ষা
নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের প্রধান মোহাম্মদ নুরুল করিম চৌধুরী বলেন, এটা একটা
লম্বা প্রসেস। বিভাগ থেকে ফলাফল আসার পর আমরা আবার যাচাই-বাছাই করি।
যাচাই-বাছাই শেষে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপাচার্য স্যারের কাছে পাঠানো
হয়। উপাচার্য স্যারের কাছ থেকে ফেরত আসলে আমরা বিভাগে পাঠিয়ে দেই।
বিলম্ব
হওয়ায় কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম
রয়েছে। তাছাড়া ফলাফল প্রকাশের পাশাপাশি রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া,
ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনসহ বিভিন্ন কাজ করতে হয় আমাদের। জনবলের তুলনায় কাজের
চাপ বেশি হওয়ায় কাজ কিছুটা বিলম্ব হয়।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ
হুমায়ুন কবির জানান, ফলাফল বাকি থাকার বিষয়টি আমি আপনার থেকে পেরেছি। আমি
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর এবং বিভাগগুলোর চেয়ারম্যানের সাথে দ্রুত যোগাযোগ
করে কেনো দেরি হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইব। দ্রুত যেনো প্রকাশ করা যায়
ব্যবস্থা নেবো।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে লোকবল কম থাকার বিষয়টি জানতে
চাইলে তিনি বলেন, লোকবল নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি উপাচার্য স্যারের হাতে।
স্যারকে লোকবল কম থাকার বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমাদের এখানে সার্কুলার
প্রকাশ করা আছে। লোকবল কম থাকায় মাঝে মধ্যে আমি আমার দপ্তরের ১ জনকে
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে পাঠিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক
ড. এ এফ এম আব্দুল মঈনের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে
একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।