নতুন বিয়ে করেছি। বৌভাত শেষে বাবা গাড়িতে করে সাভারের আশুলিয়া পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হলো না। বৌভাত শেষে উত্তরার কাওলা থেকে বের হয়ে জসীমউদ্দীন পার হলে বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডার সরানোর সময় আমাদের চাপা দেয়।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিলেন নিহত রুবেলের ছেলে সদ্য বিবাহিত হৃদয়।
তিনি বলেন, চোখের সামনেই বাবা, আমার শাশুড়ি, খালা শাশুড়ি ও তার দুই সন্তানসহ চাপা পড়ি। আমার বাবা গাড়ি চালাচ্ছিলেন। গাড়ির বাম পাশেই আমি বসা ছিলাম। ঠিক তার পেছনেই আমার স্ত্রী বসা ছিল। তিন দিন হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। বাবা নিজেই ড্রাইভ করে আমাদের শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই বিআরটির ৬০ থেকে ৭০ টনের গার্ডারের নিচে চাপা পড়তে হয়। আমি বাবার শুধু হাতটা দেখেছিলাম।
হৃদয় বলেন, স্থানীয়রা ও পুলিশের সহায়তায় আমি ও আমার স্ত্রী বের হতে পারলেও আমার বাবা, শাশুড়ি, খালা শাশুড়ি ও তার দুই সন্তান চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের উদ্ধার করে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে চোখের সামনে আমার বাবা, শাশুড়িসহ পাঁচ জন মেয়ের জীবন শেষ হয়ে গেল। দেশের এত বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলছে, কিন্তু তাদের কোনো সেফটি নাই। আমাদের এতিম করে আমার বাবা চলে গেল। রাতে গাড়ি কম চলে, এই কাজটি তারা রাতে করতে পারত। কীভাবে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছি না। তারা যদি নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করত তাহলে আজকে তাজা পাঁচটি প্রাণ ঝরে যেত না। আমি সরকারের কাছের সুষ্ঠু বিচার চাই। এই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা অবহেলা করেছেন, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করছি।
হৃদয় আরও বলেন, ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে অনেক আগেই। তবে এখনও কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে। বাবার জানাজা মানিকগঞ্জের সিংগাইড়ে দেওয়ার পর মেহেরপুরে দাদা-দাদির কবরের পাশে দাফন করা হবে।
সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় প্রাইভেটকারে থাকা শিশুসহ পাঁচ জন নিহত হন। আহত হন দুই জন।
নিহতরা হলেন— আইয়ুব আলী হোসেন রুবেল (৫৫), ফাহিমা আক্তার (৩৮), ঝর্না আক্তার (২৭), ঝর্না আক্তারের দুই শিশু সন্তান জান্নাতুল (৬) ও জাকারিয়া (৪)।