Published : Tuesday, 6 September, 2022 at 12:00 AM, Update: 06.09.2022 12:37:26 AM
দেবিদ্বার
প্রতিনিধি: কুমিল্লার দেবিদ্বারে গ্রাহকদের আমানতের প্রায় দুই কোটি টাকা
উধাও হয়েছেন আবদুস সাত্তার নামে এক ব্যক্তি। তিনি আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স
অ্যান্ড ফাইন্যান্স ব্যাংক লিমিটেড এগারোগ্রাম বাজার শাখার ম্যানেজার
পরিচয় দিতেন। আবদুস সাত্তার দেবিদ্বার উপজেলার মুগসাইর গ্রামের সুরুজ মিয়ার
ছেলে। গত রবিবার গণমাধ্যম কর্মীরা অভিযুক্ত সাত্তার মিয়ার বাড়ি গেলে তার
ঘর তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।
প্রতারণার শিকার মোগসাইর গ্রামের আবদুল কাদির,
তাজুল ইসলাম, শারমিন আক্তার জানায়, অভিযুক্ত সাত্তার মিয়া আজিজ কো-অপারেটিভ
কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ব্যাংক লিমিটেড নামে মোগসাইর এগারোগ্রাম বাজার
শাখার এরিয়া ম্যানেজার ছিলেন। ওই শাখায় তিনি গ্রামের মানুষদের আর্থিক
সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ, ফিক্সড ডিপোজিট ও ডিপিএস নামে টাকা
সংগ্রহ করতেন। এভাবে তিনি দুই বছর গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছেন।
গত কয়েকদিন ধরে তাঁর ফোন নম্বর বন্ধ পেয়ে বাড়ি গিয়ে দেখি ঘর তালা। সে তাঁর
পরিবার নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই।
মুগসাইর এগারো
গ্রামের স্থানীয় লোকজন বলেন, আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স
ব্যাংক লিমিটেড কথিত ব্যাংকটি জাফরগঞ্জ শাখা হিসেবে দেবিদ্বার উপজেলার
জাফরগঞ্জ বাজারে পরিচালিত হতো। পরে ওই শাখাটি এগারগ্রাম বাজারে স্থানান্তর
করে নিয়ে আসেন সাত্তার। গ্রাহকদের রসিদেও এগারগ্রাম বাজার শাখা হিসেবে সিল
মারা হতো। বর্তমানে সেটির মালিক সাত্তার পালিয়ে গেছে।
একই গ্রামের
বিধবা খোসনেয়ার বেগমও অধিক মুনাফার আশায় শেষ সম্বল জমানোর দুই লক্ষ টাকা
আমানত রেখেছিলেন আজিজ কো-অপারেটিভ লি. এর এগারো গ্রাম বাজার শাখায়। জমানো
টাকা হারিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন খোসনেয়ারা। একমাত্র সন্তানের
ভবিষ্যৎ নিয়ে দু:চিন্তায় খোসনেয়ারা কণ্ঠে বলেন, সাত্তার আমাকে বিভিন্ন
প্রলোভন দেখিয়ে টাকাগুলো হাতিয়ে নিয়েছে। আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। মানুষের
এখানে কাজ করে টাকাগুলো জমিয়েছি। ছেলের লেখাপড়া খরচ আমি কিভাবে চালাব। আমি
আমার টাকাগুলো ফেরত চাই। খোসনেয়ারা ছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা মুগসাইর গ্রামের তাজুল ইসলাম। পেনশনের দুই লাখ টাকা জমা
রেখেছিলেন সাত্তারের কাছে। তিনি বলেন, ‘বিশ^াস করে তার কাছে টাকা জমা
রেখেছিলাম। এভাবে প্রতারিত হবো বুঝতে পারিনি।’ এগারগ্রাম বাজারে ফার্মেসী
ব্যবসায়ী আবদুল কাদির বলেন, দুই নামে দশ লাখ টাকা জমা রেখেছি। আমি ছাড়াও
‘গ্রামের সহজ-সরল মানুষ বিশ^াস করে তার ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছে। এখন
মানুষকে নিঃস্ব করে প্রতারক সাত্তার পালিয়ে গেছে। এগারগ্রামের শারমিন
আক্তার বলেন, সাইনবোর্ডে ব্যাংক লেখা দেখে টাকা জমা দেখে তিন লক্ষ টাকা
আমানত রেখেছিলাম। এটি যে ধোকা এখন বুঝতে পারছি। ইউপি সদস্য মো. আনোয়ার
হোসেন বলেন, এগারো গ্রাম বাজারে আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড
ফাইন্যান্স ব্যাংক নামে একটি মাল্টিপারপাস ছিলো। এখন শুনতেছি গ্রাহকদের
টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে সাত্তার। তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা
হলে, ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
দেবিদ্বার উপজেলা সমবায় অফিসার মো. মোশারফ
হোসেন বলেন, আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ব্যাংক লিমিটেড
সরকারিভাবে নিবন্ধন নেই। তারা গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে আসছে অনেকদিন
থেকে। সমবায় বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের কেেরছ। এগারো গ্রাম থেকে ১৫
জন গ্রাহক আমার কাছে এসেছেন। আমি সরে জমিনে গিয়ে তদন্ত করেছি। তার অফিস
বাড়ি তালা দেখতে পেয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন ইউএনও ও জেলা সমবায় অফিসে জমা
দিয়েছি। উপজেলা ও জেলা সমবায় অফিস প্রতারক সাত্তারের বিরুদ্ধে মামলা করবে।