ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
হিজড়া সেজে প্রতারণা বেড়েছে
Published : Thursday, 15 September, 2022 at 12:00 AM
রাজধানীর চলতি পথে কিংবা বাসা-বাড়িতে বিভিন্ন সময় দেখা যায় হিজড়াদের উৎপাত। চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারলে লোকজনের সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করে। এতে প্রতিনিয়ত বিব্রত হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আর এই অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিকে পুঁজি করেই চাঁদাবাজির সাথে জড়িয়ে পড়ছে অনেক হিজড়া।
সম্প্রতি দেখা গেছে, হিজড়া ছদ্মবেশে অনেক পুরুষ চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ছে। এমন কি আগের অপরাধ ঢাকতেও হিজড়ার ছদ্মবেশে নেয় কোনও কোনও পুরুষ ব্যক্তি। স্থান পরিবর্তন করে তারা বিভিন্নভাবে চাঁদাবাজিতে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এমনই বেশ কয়েকজন হিজড়া ছদ্মবেশী পুরুষকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, অনেক অপরাধী এখন হিজড়া ছদ্মবেশ ধারণ করেছে। আগের অপরাধ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যাতে তাদের শনাক্ত করতে না পারে সে কারণেই তারা এই বেশ ধারণ করে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় প্রতিনিয়ত আসছে।
রাজধানীর শাহ আলী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মাদক মামলার এক আসামি বিল্লালকে বাড্ডা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে মাদক মামলা থেকে বাঁচতে বিল্লাল হিজড়ার ছদ্মবেশে বাড্ডা এলাকায় অবস্থান করছিল এবং চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ে। সাত বছর ধরে হিজড়া ছদ্মবেশে আছে সে।
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় একটি পরিবহনে চাঁদাবাজির অভিযোগে চার হিজড়াকে গ্রেফতার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। পরবর্তীতে জানা যায় তারা সবাই পুরুষ। হিজড়ার ছদ্মবেশে চাঁদাবাজি করে আসছিল তারা।
এদিকে, আদাবর এলাকা থেকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় দুই হিজড়াকে।
ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান, বিভিন্ন সময় যানজটে কিংবা চলতি পথে হিজড়ারা এসে টাকা দাবি করে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারলে লোকজনের সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা খারাপ ব্যবহার করে গালিগালাজ করে। কিছু বলতে গেলে উল্টো আরও চেঁচামেচি শুরু হয় তাদের। এ থেকে আমরা মুক্তি চাই। সাথে থাকা ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আমরা আতঙ্কে পড়ে যাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে আশা করি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে রাজধানীতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে হিজড়াদের প্রতারণা এবং নানা অপরাধের ঘটনা। কোনও বাসা-বাড়িতে নবজাতক শিশু থাকলে করলে সেসব বাসায় গিয়ে টাকা দাবি করে। এ ধরনের ঘটনায় পুলিশকে অবহিত করার কথা জানান তিনি। এছাড়া কেউ ব্যবস্থা নিতে চাইলে আইনি সহায়তা দিবে পুলিশ।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগে আমরা সম্প্রতি চার হিজড়াকে গ্রেফতার করি। পরে থানায় এনে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে আমরা দেখতে পাই— চার জনই পুরুষ। তারাই হিজড়া সেজে উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিল। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হিজড়ানেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাসে-ট্রেনে কিংবা বিভিন্ন জায়গায় যারা হিজড়া পরিচয়ে চাঁদাবাজি করছে তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার গুরু-মাতাদের ইন্ধনে করছে। গুরু মাতাদের ইন্ধন ছাড়া কোনভাবেই তা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হলেও কার্যকর কোনও পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
আমরাও চাই এ ধরনের কাজ করা বন্ধ হোক— উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, সম্প্রতি পুরুষরা হিজড়া সেজে বিভিন্ন ধরনের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে যা আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর। গুটিকয়েক অসাধু হিজড়ার কারণে পুরো হিজড়া জনগোষ্ঠীর উপর নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয় মানুষের।