প্রায় এক মাস আত্মগোপনে থাকা মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগমকে পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়েছে। রোববার সকালে পিবিআই কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয় রহিমা বেগমকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভিকটিমকে উদ্ধারের পর থেকে তিনি আমাদের কাছে কিছুই বলছেন না। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাকে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুসের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। শনিবার রাত ২টার দিকে রহিমা বেগমকে নিয়ে দৌলতপুর থানায় পৌঁছায় পুলিশের একটি টিম।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, অফিসাররা ওই বাড়িতে গিয়ে দেখেন, ভিকটিম দুই নারীর সঙ্গে কথা বলছেন। অফিসাররা যখন তাকে জিজ্ঞেস করেন, তখন থেকে তিনি কথা বলা বন্ধ করে দেন।
তিনি আরো বলেন, মামলাটি যেহেতু পিবিআইতে হস্তান্তর হয়েছে, তারা বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখবেন। ভিকটিমক নিয়ে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আমরা তাকে উদ্ধার করতে পেরেছি, আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। আমরা সবাই খুশি। বাকিটা পিবিআই তদন্ত করবে। আমি আশাবাদী পিবিআই এর রহস্য উদঘাটন করতে পারবে।
এদিকে, গত শুক্রবার সকালে নিখোঁজ রহিমা বেগমের সন্ধানে ময়মনসিংহে যায় মরিয়ম ও তার পরিবারের সদস্যরা। কাপড় দেখে মায়ের লাশ দাবি করেন মরিয়ম। তবে পুলিশ বলেছিল, ডিএনএ টেস্ট ছাড়া লাশ চূড়ান্ত শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশার উত্তর বণিকপাড়ার নিজ বাসা থেকে টিউবওয়েলে পানি আনতে নিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এরপর আর ঘরে ফেরেননি তিনি। স্বামী ও ভাড়াটিয়ারা নলকূপের পাশে ঝোঁপঝাড়ে তার ব্যবহৃত ওড়না, স্যান্ডেল ও বালতি দেখতে পান। সেই রাতে মাকে খুঁজতে আত্মীয়-স্বজন, আশপাশসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেন সন্তানরা।
রহিমার ছয় সন্তান কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কখনো মাইকিং, কখনো আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারস্থ হয়েছেন। করেছেন সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর মাকে খুঁজে পেতে দৌলতপুর থানায় মামলাও করেন। মামলার বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের ভার পায় পিবিআই। ১৭ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানা থেকে মামলাটি পিবিআইয়ে স্থানান্তর করা হয়।
পুলিশ জানায়, গত ২৭ আগস্ট নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকার বাড়ির সামনে থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হয়-এ অভিযোগ তুলে তার মেয়ে আদুরি আকতার বাদী হয়ে পরের দিন দৌলতপুর থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ছয়জন।
তারা হলেন- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ, জুয়েল এবং হেলাল শরীফ।