গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে দগ্ধ হন কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনি। প্রায় এক মাসের চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তিনিসহ দগ্ধ পুলিশ কনস্টেবল জিল্লুর রহমান। তাদের ঘটা করে বিদায় জানিয়েছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানের। সেখানে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে আবু হেনা রনি বলেন, ‘আমি নতুন জীবন পেয়েছি। আর সেটা সম্ভব হয়েছে চিকিৎসকদের কল্যাণে।’ এসময় মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনসহ চিকিৎসক, নার্স ও পুলিশ সদস্যরা।
আবু হেনা রনি এসময় আরও বলেন, ‘আমি যে দুর্ঘটনায় পড়েছিলাম, সেখান থেকে পরিবার, শুভাকাঙ্ক্ষী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীর দোয়ায় আজ অনেকটাই সুস্থ। পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও সময় লাগবে। আজ ছুটি হয়ে যাচ্ছে। এখন বাসায় গিয়ে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসায় থাকবো।‘
দুর্ঘটনার পর ‘দ্বিতীয় জীবন পেয়েছেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের পরিশ্রম এবং সেবার কারণেই আমি আজ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।’
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবু হেনা রনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেলুনটি যখন আকাশে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন আকাশে না উড়ে মঞ্চের পাশে এসে পড়ে। আমি ঠিক পাশেই ছিলাম। এসময় বেলুনগুলো নিচে নেমে আসায় যদি সুতা কেটে দেওয়া হতো তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না। সুতা না কেটে বেলুনে গ্যাস ভরা সেই ব্যক্তি গ্যাস লাইট জ্বালিয়ে দেয়। আর সঙ্গেসঙ্গেই বিস্ফোরণ হয়। আর তাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়, এজন্য অবশ্যই সেই ব্যক্তি দায়ী।’
চিকিৎসাধীন রনি এবং পুলিশ কনস্টেবল জিল্লুরের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা যে একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করেছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
রনিকে উদ্দেশ করে আইজিপি বলেন, ‘তিনি আজ সুস্থ হয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর তিনি আবারও মঞ্চে উঠে জনগণকে বিনোদন দেবেন। জনগণ আবারও তার কৌতুকের মাধ্যমে বিনোদিত হবেন।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আবু হেনা রনি এবং পুলিশ কনস্টেবল জিল্লুরের চিকিৎসার জন্য সর্বাত্মক নিয়োজিত ছিলাম। এ ছাড়া বার্ন ইউনিটের অন্যান্য যেসব রোগী ছিলেন, তাদের চিকিৎসার জন্য আমরা সবসময় নিয়োজিত ছিলাম এবং আছি।’
এসময় উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘বার্ন ইউনিটের এক চিকিৎসকের মায়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকার পরও তিনি শুধু নিজের পেশার দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তিনি চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন।’
প্রসঙ্গত, গত ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান চলাকালে বেলুন বিস্ফোরণ হয়ে পাঁচ জন দগ্ধ হন। এ সময় দগ্ধ হন কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনি, গাজীপুর জেলা পুলিশের কনস্টেবল মোশাররফ হোসেন, গাছা থানার কনস্টেবল রুবেল মিয়া, টঙ্গী পূর্ব থানার কনস্টেবল জিল্লুর রহমান এবং গাছা থানার আরেক কনস্টেবল মো. ইমরান হোসেন। ঘটনার পরপরই দগ্ধদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য আবু হেনা রনি ও কনস্টেবল জিল্লুর রহমানকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।