
১৫ বছরের আক্ষেপ দূর হবে?
অস্ট্রেলিয়ার
হোবার্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে দারুণ শুরুর
ইঙ্গিত দিয়ে নিভে যায় বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের আলো। ২০০৭ বিশ্বকাপের
প্রথম আসরে শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে মাটিতে নামিয়ে এনেছিল
বাংলাদেশ। এর পরের ছয়টি বিশ্বকাপে একই গল্প লেখা হয়েছিল বাংলাদেশের,
প্রতিটি বিশ্বকাপই যেন বাংলাদেশের জন্য হাহাকারের নাম। আগের ব্যর্থতা
ভুলিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সাকিবের দল সোমবার সকালে মাঠে নামছে। ম্যাচটি
জয়ে শেষ করতে পারলে ১৫ বছর ধরে সুপার টুয়েলভে জয়হীন বাংলাদেশ পাবে
‘দ্বিতীয়’ জয়ের দেখা। সোমবার বাংলাদেশ সময় সকাল দশটায় ম্যাচটি মাঠে গড়াবে।
ক্রিকেটের
সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স তলানিতে। বিশ্বকাপের আগে
সহযোগী সদস্য আরব আমিরাতকে হারাতেই ঘাম ছুটে গেছে সাকিব আল হাসানের দলের।
তাছাড়া টিম কম্বিনেশনের ঘাটতি ছিল স্পষ্ট। এখন পর্যন্ত ব্যাটিং অর্ডার কী
হবে, ম্যাচের একদিন আগে সেটি পরিষ্কার নয়। তার মধ্যে বাংলাদেশের জন্য
চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার বড় মাঠের কন্ডিশন জয় করার। এমন চ্যালেঞ্জ
নিয়েই, সোমবার মাঠে নামবে সাকিববাহিনী।
গত সাতটি বিশ্বকাপে সাফল্যহীন
বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মূলপর্বে জয়
পেয়েছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এরপর আরও ছয়টি বিশ্বকাপ খেললেও মূলপর্বে
একটি ম্যাচও জিততে পারেননি সাকিব আল হাসানরা। এবার অবশ্য দারুণ কিছু করতে
আত্মবিশ্বাসী সাকিব। গত আসরগুলোতে যেটা সম্ভব হয়নি, এমন কিছু করতে মুখিয়ে
তারা।
ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলে
গেছেন, ‘টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমাদের রেকর্ড খুবই খারাপ তবে এবারের
বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার সামর্থ্য আছে। এটা এমন একটা ফরম্যাট যেখানে আমরা
কখনো ভালো করিনি। বিশ্বাস করি এই বিশ্বকাপে আমাদের এমন কিছু করার সামর্থ্য
আছে, যেটা এর আগে কোনও বিশ্বকাপে করিনি।’
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এই
ফরম্যাটে তিনটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে দুটি জিতেছে সাকিবরা।
বাকি একটি ম্যাচ জিতেছে ডাচরা। সোমবারে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার
আগে সাকিব নেদারল্যান্ডসকে সহজ প্রতিপক্ষ মনে করছে না। অন্যসব ম্যাচের মতোই
গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নামতে প্রস্তুত সাকিবরা, ‘দেখুন এখানে বিশ্বকাপে আমাদের
যে পাঁচটা ম্যাচ আছে, এই পাঁচটা ম্যাচের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। এখানে যার
সঙ্গেই খেলি, প্রস্তুতি একই থাকবে। সেটা নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ আফ্রিকা,
ইন্ডিয়া, পাকিস্তান অথবা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে একই থাকবে। প্রস্তুতিতে বদল
আসবে না, চিন্তাতেও কোনও পরিবর্তন আসবে না। তারা কিন্তু কোয়ালিফাই করেই
এসেছে। এই পারসেপশনটা হয়তো আপনারাই তৈরি করেছেন যে নেদারল্যান্ডস আসাতে
বাংলাদেশ দল স্বস্তিবোধ করছে।’
এদিকে ৮ বছর পর গ্রুপ পর্ব পেরুতে পেরেছে
নেদারল্যান্ডস। এতদিন ধরে চলা আক্ষেপটা পূরণ করতে সুপার টুয়েলভে দারুণ
কিছু করে দেখাতে চায় তারা। ডাচ ব্যাটার টম কুপার তেমন কিছুই ইঙ্গিতই দিলেন,
‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বড় দলের বিপক্ষে অনেক ক্রিকেট খেলেছি। হয়তো ম্যাচ
জিততে পারেনি। কিন্তু বেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আগামীকাল বাংলাদেশের
বিপক্ষে ম্যাচে সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে আমাদের জন্য ভালো হবে। অবশ্যই
বাংলাদেশ বিপজ্জনক দল। সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের পারফরম্যান্স ভালো না হলেও
তারা নিজেদের দিনে যে কাউকে হারাতে পারে। আমরা চাই দারুণ
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি ক্রিকেট খেলতে।’
তবে দুই দলই ম্যাচটি জিততে
মুখিয়ে থাকলেও বৃষ্টি এসে ম্যাচটি বাতিল করে দিতে পারে। কেননা ম্যাচের আগের
দিন থেকেই হোবার্টের আকাশে কালো মেঘ বাসা বেঁধেছে। ম্যাচের দিন বৃষ্টি
হওয়ার জোড় সম্ভাবনাও আছে। এমনকি এই বৃষ্টির কারণে দুই দলই ঠিকমতো অনুশীলন
করতে পারেনি। সবমিলিয়ে ম্যাচটি বৃষ্টির পেটে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রকট।
সাম্প্রতিক
পারফরম্যান্সে বাংলাদেশকে নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা নেই সমর্থকদের। চলতি
বছর মাত্র চারটি জয় পেয়েছেন লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। তার মধ্যে আরব আমিরাতের
বিপক্ষে দুটি জয় আছে। বিশ্বকাপের আগে ক্রাইস্টচার্চেও বাজে সময় কেটেছে
বাংলাদেশের। চার ম্যাচের সবকটিতেই হেরেছে তারা। ফলে বিশ্বকাপের মতো আসরে
নামার আগে এমন জয়হীন থাকা দলটি আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগছে।
বাংলাদেশের টপ
অর্ডারে নিয়মিত পরিবর্তন, নেতৃত্বের অস্থিরতা এবং ইনজুরি- মিলিয়ে গত
কিছুদিনে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক কিছুর বদল হয়েছে। এই মুহূর্তে পুরো দলকে
একত্রিত করে সাফল্য তুলে আনার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে সাকিবকে। সেটি করতে
পারলেই মূলত জয় পাওয়া সম্ভব হবে। দলগত চেষ্টার ঘাটতি দেখা গেলেও পেস ইউনিট
হিসেবে যথেষ্ট উন্নতি করেছে বাংলাদেশ দল।
নেদারল্যান্ডসের পেস বোলিং
আক্রমণ খুবই দুর্দান্ত। ফ্রেড ক্ল্যাসেন, ডি লিড এবং পল ভ্যান মিকারেন
প্রথম রাউন্ডে অসাধারণ বোলিং করেছেন। স্পিনারদের ভূমিকাও ছিল দুর্দান্ত। সব
কিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটারদের সতর্কতার সঙ্গেই সামলাতে হবে ডাচ বোলিং
আক্রমণকে। এখন দেখার অপেক্ষা, বৃষ্টির বাঁধা দূর করে ডাচদের হারিয়ে
বিশ্বকাপের শুরুটা কেমন করে সাকিবের দল। জয়ে পেলে দীর্ঘদিনের আক্ষেপ দূর
হবে, বাংলাদেশ পাবে ‘দ্বিতীয়’ জয়।