ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
শিক্ষাজীবনে সব সময়ই সেরা সিনথিয়া
Published : Saturday, 23 January, 2021 at 2:31 PM
শিক্ষাজীবনে সব সময়ই সেরা সিনথিয়াশামসিতা তাসনিম সিনথিয়ার জন্ম রংপুরের কাউনিয়ায়। বাবা মো. শাহাদাত হোসেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার। মা খায়রুন নাহার গৃহিণী। একমাত্র ভাই মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। সিনথিয়া সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। বাবার বদলিতে চলে আসেন রাজধানীর বনশ্রীতে। অষ্টম শ্রেণি শেষ করেন মতিঝিল গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলে। ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন আইডিয়াল স্কুলে।
পড়াশোনার প্রতি বরাবরই আগ্রহ ছিল। সব সময় সেরা ফলাফলের তাড়না ছিল। স্কুলে প্রথম স্থান ধরে রেখেছেন। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। এসএসসিতে পান গোল্ডেন জিপিএ ৫। ঢাকা বোর্ড থেকে বৃত্তিও পেয়েছেন। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েছেন হলি ক্রস কলেজে। ২০১৪ সালে এইচএসসিতেও ছিল গোল্ডেন জিপিএ ৫। কলেজ জীবনে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। সকাল-দুপুর ক্লাস করে সন্ধ্যা পর্যন্ত ল্যাব করেছেন। কলেজ জীবনের এ পরিশ্রমের কারণে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। বনশ্রী থেকে কলেজে যাওয়ার সময়টা উপভোগ করেছেন। তারা ১২ জন একটি মাইক্রোবাসে যাতায়াত করতেন। সিনথিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিইউপিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু এমবিবিএস পড়ার সুযোগ না পেলেও ঢাকায় বিডিএস (ডেন্টাল) পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। মাত্র তিন মাস পড়ার পর ২০১৬ সালে ভর্তি হন রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। মেডিকেলে পড়তে না পারার ব্যাপারে তার সাবলীল উত্তর, ‘মেডিকেলে পড়তে পারিনি বলে কোনো খারাপ লাগা কাজ করে না। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করেও আমি সন্তুষ্ট।’
ডেন্টাল থেকে চলে আসার পর কিছুদিন বাজে সময় পাড় করেন। পরে পরিবারের উৎসাহে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করেন। সেখানেও সিনথিয়ার জয়জয়কার। প্রথম বর্ষে ফলাফল সিজিপিএ ৪। সেই সুবাদে পরবর্তী ৩ বছরের জন্য শতভাগ স্কলারশিপ পান। প্রথম বর্ষের মতো পরের তিনটি বর্ষেও ফলাফলের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন। সব মিলিয়ে তার সিজিপিএ ৪। এত ভালো ফলাফলের রহস্য জানতে চাইলে মিষ্টি হেসে সিনথিয়া বলেন, ‘আমি নিয়মিত ক্লাস করতাম। পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে থেকে পড়াশোনা করতাম। আমার টার্গেট ছিল সিজিপিএ ৪। মোটকথা চেষ্টা থাকায় ভার্সিটিতে আমার লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি। তৃতীয় বর্ষেই আন্ডার গ্রাজুয়েট টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাই। এর জন্য প্রতি সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.৫০ পেতে হয়। আমার কাজ হলো শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ব্যাপারে উৎসাহিত এবং সহযোগিতা করা।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শামীম এইচ রিপন ও সহকারী অধ্যাপক ড. মুহম্মদ রেজওয়ানুল হক তাকে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সিনথিয়ার ভাষ্য, ‘তারা সব সময় মন থেকেই চাইতেন আমি ভালো কিছু করি।’ প্রথম জনের অধীনে তিনি এক বছর আন্ডার গ্রাজুয়েট টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন। আর দ্বিতীয় জনের অধীনে কাজ করেন ৮ মাস। এ কাজের সম্মানি বাবদ তিনি প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা পেতেন। একবার তিন মাসের টাকা একত্রে পেয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য শপিং করে চমকে দেন। প্রতিমাসে যে টাকা পেতেন, তা দিয়ে নিজের হাতখরচ চালাতেন। সিনথিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে কয়েক মাস একটি ভর্তি কোচিংয়ের খাতা দেখতেন। এ জন্যও তিনি সম্মানি পেতেন। ভালো ফলাফলের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন বাবা-মা। পড়ালেখার জন্য তারা কখনো চাপ দিতেন না। পরীক্ষা দিয়ে সিনথিয়া হতাশ হয়ে কাঁদলেও সান্ত্বনা দিতেন। ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি কনভোকেশনে তিনি শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মণির হাত থেকে সর্বোচ্চ ফলাফলের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বর্ণপদক লাভ করেন। এমনকি প্রোগ্রামে তিনি গ্রাজুয়েটদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। তবে বক্তব্য দেওয়ার আগে তিনি বিচলিত ছিলেন। এত বড় প্রোগ্রামে আগে কখনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। বক্তব্য দেওয়ার পর পরিবার, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে বাহবা পেয়েছেন। স্বর্ণপদক প্রাপ্তি ও বক্তব্যের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি আমার জীবনের বিরাট প্রাপ্তি। স্বর্ণপদক পাওয়ার আনন্দ বলে বোঝাতে পারবো না। পদক পাওয়ার পর বাকরুদ্ধ ছিলাম। এতে সবচেয়ে বেশি খুশি হন আমার বাবা-মা।’ তিনি বলেন, ‘বক্তব্য দেওয়ার আগে হতাশ ছিলাম। ভাবতেও পারিনি, এত ভালো বক্তব্য দেব। বক্তব্য শেষে বাবা-মা আমাকে জড়িয়ে ধরেন। এর জন্য এখনো অনেকে অভিনন্দন জানান। আমার শিক্ষাজীবনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকেই এগিয়ে রাখি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে।’ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে সিনথিয়া বলেন, ‘অনেকে মনে করেন প্রাইভেট ভার্সিটিতে তেমন লেখাপড়া হয় না। আমি মনে করি, এটা মানুষের ভ্রান্ত ধারণা। আমি যে পরিমাণ পরিশ্রম প্রাইভেটে করেছি; সেটা পাবলিকেও করতে হবে নিশ্চিত।’ সিনথিয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কানাডা বা যুক্তরাষ্ট্রে এমএসসি করবেন। তারপর পিএইচডি করে দেশে ফিরবেন। দেশে এসে রিসার্চার হিসেবে কাজ করার ইচ্ছা আছে। একাডেমিক পড়ালেখার বাইরেও তিনি বই পড়েন। অবসর পেলে অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা দেখেন।