ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বীরপ্রতীকের নামে সড়কের নাম ফলকের সাথে শত্রুতা!
চান্দিনায় ৩টি ফলকই ভেঙ্গে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা
Published : Friday, 9 April, 2021 at 10:30 PM
বীরপ্রতীকের নামে সড়কের নাম ফলকের সাথে শত্রুতা! রণবীর ঘোষ কিংকর: কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাস স্টেশন থেকে চাঁদপুর জেলার রহিমানগর পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার সড়কের নামকরণ করা হয়েছিল প্রতীক কর্ণেল (অব.) মো. সফিক উল্লাহ’র নামে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিক এর নামে নামকরণ করা ওই সড়কের ‘নাম ফলকের’ সাথে শুরু হয়েছে চরম শত্রুতা। একের পর এক ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত ওই সকল নামফলক। রাতের অন্ধকারে কোন একটি কুচক্রি মহল ভেঙ্গে দিচ্ছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের নামে নামকরণ করা সড়কের ওই ফলকগুলো। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- বৃহস্পতিবার দিনগত রাতের অন্ধকারে চান্দিনা উপজেলার জোয়াগ ইউনিয়নের কৈলাইন মিঞা বাড়ি সংলগ্ন একটি ফলক ও একই ইউনিয়নের আমলকি এলাকায় অপর একটি ফলক ভেঙ্গে দেয় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে আমলকি এলাকার একটি ফলম সম্পূর্ণ গুড়িয়ে দেয় এবং অপরটির একটি অংশে ভেঙ্গে ফেলেছে তারা। এ ঘটনায় বীরপ্রতীক সফিক উল্লাহ’র ভাতিজা অধ্যাপক মো. পারভেজ মিয়ান চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও চান্দিনা থানা অফিসার ইন-চার্জ (ওসি)’র নিকট মুঠোফোনে মৌখিক অভিযোগ করেন।
এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারী মাধাইয়া বাস স্টেশন এলাকার ফলকটিও ভেঙ্গে দিয়েছিল দুবর্ৃৃত্তরা। এ ঘটনায় বীরপ্রতীক সফিক উল্লাহ’র অপর ভাতিজা শাহেন শাহ্ মিয়ান।
বীরপ্রতীক সফিক উল্লাহ’র ভাতিজা অধ্যাপক মো. পারভেজ মিয়ান জানান- চান্দিনা উপজেলার জোয়াগ ইউনিয়নের কৈলাইন মিয়ান বাড়ির বাসিন্দা কর্ণেল (অব.) সফিক উল্লাহ মহান মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের ই কোম্পানীর ৫নং গেরিলা বাহিনীর কমান্ডারের দায়িত্বকালে বিশেষ ভূমিকা পালন করায় বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত হন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন পদে চাকুরীতে যোগাদানের পর কর্ণেল পদ মর্যাদা নিয়ে অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি জানান- ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করার পর একই বছরে কৈলাইন গ্রামের তার স্মরণ সভায় বৃহত্তর কুমিল্লার বিশিষ্টজন ও মুক্তিযোদ্ধাগণের উপস্থিতিতে সেই দিন চান্দিনার মাধাইয়া ও চাঁদপুর জেলার কচুয়ার রহিমানগরের সংযোগ সড়কটি বীরপ্রতীক কর্ণেল (অব.) মো. সফিক উল্লাহ’র নামে নামকরণ করার জন্য প্রস্তব করা হয়। সেখানে সর্ব সম্মতিক্রমে পরবর্তীতে নাম ফলক স্থাপন করা হয়। দাপ্তরিক ভাবে বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর জেলা পরিষদের অর্থায়নে চান্দিনা অংশে ৩টি এবং কচুয়া অংশে ৬টি নাম ফলক স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে কুমিল্লা জেলা পরিষদ ৩টি এবং চাঁদপুর জেলা পরিষদ ৬টি নাম ফলক নির্মাণ করেন। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে শুধুমাত্র চান্দিনা অংশের নাম ফলকগুলোই কোন একটি মহল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখ জনক।
এদিকে, খেতাব প্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধার নামে সড়কের নামফলক ভেঙ্গে দেওয়াকে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চান্দিনা উপজেলার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।
চান্দিনা উপজেলার যুদ্ধকালিন কমান্ডার জোনাল বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মিঞা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন- এখনও স্বাধীনতা বিরোধীরা সক্রিয়। বীর প্রতীক কর্ণেল (অব.) সফিক উল্লাহ’র স্মরণসভায় আমিই প্রস্তাবকারী ছিলাম। ওই প্রস্তাবে কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা কমান্ডার, চান্দিনার সংসদ সদস্যসহ অকেন গুনিজনরা উপস্থিত ছিলেন। সেই সভায় সড়কটির নামকরণ ‘বীর প্রতীক কর্ণেল (অব.) সফিক উল্লাহ’র নামে করার জন্য সর্ব সম্মতিক্রম আমার প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। পরবর্তীতে আইনি প্রক্রিয়া অনুস্মরণ করে জেলা পরিষদ থেকে ফলক করা হয়েছে। এখন সেই ফলকগুলো ভেঙ্গে দিচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধীরা। যা সকল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমান জনক।  
চান্দিনা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজী আব্দুল মালেক জানান- আগে একটি ফলক ভাঙ্গা হয়েছে সেটা শুনেছি। নতুন কোন ফলক ভাঙ্গার বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধার নামের নাম ফলক ভাঙ্গা দেখতেও খারাপ, শুনতেও খারাপ।  
চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শাসমউদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান- প্রথম ঘটনায় একটি থানায় একটি জিডি করেছে তাদের পরিবার। পরের বিষয়টি কিছুক্ষণ আগে (রাত সাড়ে ৮টার দিকে) আমাকে ফোনে অবহিত করেছে। আগামীদিন (শনিবার) ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে দেখবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান- মূলত সরকারি গেজেটে ওই সড়কের নাম এখনও মাধাইয়া-রহিমানগর সড়ক হিসেবেই রয়েছে। সড়কের নামকরণ করতে হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এর নেতৃত্বের কমিটি থেকে পাশ হয়ে আসার পর নামকরণ করতে হয়। কিন্তু বীর প্রতীক সফিক উল্লাহ’র নামে কোন গেজেট হয়নি। নামফলকগুলো তাদের পরিবারের কয়েকজন ব্যক্তি সরকারি বিধি না মেনে স্থাপন করেছেন। তবে রাতের অন্ধকারে কারা ভেঙ্গেছে সে ব্যাপারেও কেউ সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারেননি। তারপরও বিষয়টি আমরা দেখবো।