ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুমিল্লায় হারিয়েছে খেলার মাঠ
ঈদগাহ মাঠই ভরসাশিশু-কিশোরদের
Published : Sunday, 30 May, 2021 at 12:00 AM, Update: 30.05.2021 12:49:00 AM
ঈদগাহ মাঠই ভরসাশিশু-কিশোরদেরমাসুদ আলম।।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে খেলার মাঠ হারিয়ে যাচ্ছে। শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে পর্যাপ্ত বিকাশ ঘটছে না তাদের। ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ায়, উন্মুক্ত প্রান্তরে অবাধে বিচরণের সুযোগ না থাকায় তারা সোনালি শৈশবেই জড়িয়ে পড়ছে প্রযুক্তির অতিরিক্ত ও অপব্যবহারের সঙ্গে। অনেকে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তাই সচেতন মহল থেকে দাবি উঠেছে নগরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও উদ্যান গড়ে তোলার। কুমিল্লা নগরীতে খেলার মাঠ না থাকায় শিশু-কিশোররা শেষ ভরসা হিসেবে ঈদগাহকে বেছে নিয়েছেন। সকাল, বিকাল কিংবা শুক্রবারসহ ছুটির দিনে কেন্দ্রীয় ঈদগাহে গেলে বুঝা যাবে না- এটি ঈদগাহ না খেলার মাঠ। খেলোয়াড়দের অধিকাংশ শিক্ষার্থী। তারা খেলার মাঠ না পেয়ে এখানে আসে বলে জানান। ১০/১৫ বছর আগেও নগরীর বিভিন্ন স্থানে কিছু খোলা মাঠ ছিল। সেখানে শিশু-কিশোররা তাদের খেলার ক্ষুধা মিটাতে পারত। মাঠগুলো ফুরিয়ে যাওয়ায় তারা খেলার নির্মল আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নগরীর কয়েকটি স্কুলের মাঠ থাকলেও সেগুলোও বিকালে তালা দেওয়া থাকে। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা পাড়ার গলিপথ কিংবা ঈদগাহে খেলে। এদিকে গত দুই বছর করোনাকালিন সময়ের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্কুল-কলেজে যেটুকু হতো, সেই সুযোগটাও গত দুই বছর থেকে বন্ধ।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লার কেন্দ্রীয় ঈদগাহে শতাধিক ছেলে বিভিন্ন রকম খেলা খেলে। কেউ ফুটবল, কেউ ক্রিকেট, কেউ ভলিবল, সাইক্লিংসহ প্রভৃতি খেলায় তারা মেতে থাকে। একই পাকা মাঠে খেলতে গিয়ে তারা একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়, কেউ পড়ে গিয়ে আহত হয়। এতকিছুর পরেও তারা খেলতে পেরে আনন্দিত। ঈদগাহে কথা হয় কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া কলেজের ছাত্র মাহমুদুল হাসান রাকিব, ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী মো. সৌরভের সঙ্গে। তারা বলেন, খেলতে পারলে মনে আনন্দ থাকে। আর অলস মস্তিষ্ক হচ্ছে শয়তানের কারখানা। যারা খেলতে পারে না, তারা মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। নগরীর স্কুল-কলেজের মাঠগুলো উন্মুক্ত করে দিলে শিক্ষার্থীদের জন্য উপকার হতো।
আবুল হাসানসহ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, নগরীর জিলা স্কুল, হোচ্ছামিয়া স্কুল ও ইউসুফ হাইস্কুলের মাঠগুলো বিকালে খেলার জন্য খুলে দেওয়া যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা নির্মল আনন্দের খোরাক পাবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিতে পারে।
কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান রোমেন বলেন, কেন্দ্রীয় ঈদগাহে শিশু-কিশোর ও তরুণদের খেলাধুলায় আগ্রহ দেখে জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে কুমিল্লা গোমতী নদীর পাড়ে শেখ কামাল ক্রীড়া পল্লী তৈরি করা হয়েছে। কাজ শেষ পর্যায়ে। এই ক্রীড়া পল্লী থাকবে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য একেবারে উন্মুক্ত। শহর থেকে শিশু-কিশোরদের যাতায়াতের জন্য ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া নগরীর ২৭ ওয়ার্ডের শিশু-কিশোরদের জন্য কুমিল্লা সদর ও সদর দক্ষিণ আরও দুইটি মিনি স্টেডিয়াম করার প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া বিকেল বেলায় শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য কুমিল্লা জিলা স্কুল মাঠসহ নগরীর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ খুলে রাখার জন্য স্ব স্ব প্রধান শিক্ষদের কাছে অনুরোধ রয়েছে। জিলা স্কুল মাঠ খোলা থাকে। নগরায়ণের কারণে কুমিল্লা নগরীর খেলার মাঠ কমে গেছে। তরুণ সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে খেলার বিকল্প নেই।