অভিযোগ জানাতে থানায় আসছেন না ভুক্তভোগিরা ফেসবুকে পুলিশ-প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা
তানভীর দিপু ||
কুমিল্লায়
হঠাৎ করেই যেন বেড়ে গেছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। রাতের বেলা ছাড়াও দিনে দুপুরেও
ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে শহরে। এমনকি জনবহুল এলাকাতেই অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নিয়ে
যাওয়া হচ্ছে মোবাইল, টাকা পয়সাসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী। এসব ঘটনায়
থানায় অভিযোগ না হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা উল্লেখ
করে অনেকেই প্রশাসনের কাছে ছিনতাই রোধে দ্রুত পদক্ষেপ চেয়েছেন। এসব ঘটনায়
বিভিন্ন স্ট্যান্ডের অসৎ সিএনজি ও অটোরিকশা চালকদের যোগসাজশের কথাও উঠে
এসেছে অভিযোগে। এদিকে রবিবার সকালে কোটবাড়ি শালবন এলাকায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে
অটোরিকশা চালকসহ ২জনকে ধারালো অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশে দিয়েছে এলাকাবাসী।
গত শুক্রবার ও শনিবার এধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
সচেতন নাগরিকদের দাবি কুমিল্লার গুরুত্বপূর্ণ
পয়েন্টগুলোতে সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে এসব ছিনতাইকারীদের খোঁজে বের
করা। এছাড়া যেসব এলাকায় সিসি ক্যামেরা নেই সেখানে দ্রুত ক্যামেরার ব্যবস্থা
এবং পর্যাপ্ত ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা। তবে এক্ষেত্রে পুলিশের তৎপর ভূমিকা
ছিনতাই কমাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করেন তারা।
এদিকে খোঁজ
নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশের কাছে
অফিসিয়ালি অভিযোগ কিংবা মামলা করেননি কেউ। তবে প্রতিটি ঘটনার পর পরই
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছিনতাইয়ের বিষয়টি তুলে ধরে পুলিশ-প্রশাসনের
দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ভুক্তভোগিরা।
শনিবার রাতে কুমিল্লার রেলস্টেশনে
ট্রেন থেকে চুরি হওয়া যাত্রীর স্বর্ণের গয়না ও মোবাইলসহ দুই ছিনতাইকারীকে
গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার কুমিল্লার শহরের ধর্মপুরে থেকে চুরি হওয়া
জিনিসপত্রসহ ওই দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারে করা হয়। ভুক্তভোগি যাত্রী
ছিনতাইয়ের ঘটনায় একটি মামলা করেছেন।
গ্রেফতার দুই ছিনতাইকারী হচ্ছেন,
কুমিল্লার ধর্মপুর এলাকার জলিল মিয়ার ছেলে আবদুল্লাহ (২৫) এবং একই এলাকার
জামাল মিয়ার ছেলে মো. মামুন।
কুমিল্লার রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ
মো. ইসমাইল হোসেন জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় কুমিল্লা থেকে নোয়াখালীগামী
ট্রেন উপকূলে উঠেন ফাতেমা বেগম নামে এক যাত্রী। তার বাড়ি নোয়াখালীতে।
কুমিল্লা স্টেশন থেকে উঠে ট্রেনে বসার সাথে সাথে দুই ছিনতাইকারী ওই মহিলার
বেগ থেকে দুইটি স্মার্ট মোবাইল ফোন, স্বর্ণের দুইটি আংকটি ও একটি কানের দুল
চুরি করে নিয়ে যায়। পরে তিনি ফাঁড়িতে অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে
রবিবার কুমিল্লা শহরের ধর্মপুর এলাকা থেকে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। তখন
তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া কোটবাড়ি শালবন
এলাকা থেকে অটোরিকশা ব্যবহার করে ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুই যুবককে আটক করে
এলাকাবাসী। তাদের অটোরিকশা থেকে ধারালো বড় ছুরি ও রডসহ অস্ত্র উদ্ধার করে
পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজমুল হাসান
জানান, তাদেরকে কোতয়ালী থানায় পাঠানো হয়েছে।
গত শনিবার কুমিল্লার একটি
জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপে জহিরুল ইসলাম জাহি নামে একজন সতর্কতামূলক পোস্টে
উল্লেখ করেন, আজ(শনিবার) সন্ধ্যায় কুমিল্লার জাংগালিয়া থেকে অটোতে করে আসার
সময় টমছমব্রীজ এলাকয় আমার বোন ভাগিনা থেকে মোবাইল স্যমসাং ট্যাবসহ নগদ
টাকা ৬ জন ছিনতাইকারী নিয়ে যায়।
জিয়া আহমেদ জনি নামে আরো একটি ফেসবুক
আইডি থেকে জানোনো হয়েছে, আমার এক ছোট ভাই শুক্রবার রাতে রামঘাট থেকে
সিএনজিতে করে বাড়ি যাবার পথে নোয়াপাড়া কবরস্থান এলাকায় গেলে সিএনজি থামিয়ে
ছুড়ি ধরে সাথে থাকা মোবাইল ও টাকা পয়সা নিয়ে যায়। এই ঘটনার সাথে সিএনজি
চালক জড়িত ছিলো বলে জানায় সে।
ওমর ইরাদ নামে ইস্পাহানি স্কুল এন্ড
কলেজের এক ছাত্র জানায়, শনিবার বিকাল ৪টায় নগরীর সালাইদ্দন মোড় ও টমছমব্রীজ
এলাকার মাঝামাঝিতে সিএনজি থামিয়ে দুই লোক ছুরি ধরে সব নিয়ে যাবার চেষ্টা
করে।
কান্দিড়পাড় থেকে পদুয়ার বাজার চলাচলকারী একাধিক সিএনজি যাত্রী
জানান, রাতের বেলা ছিনতাইয়ের ঘটনায় সিএনজি অটো চালকদের যোগসাজশ থাকে।
ছিনতাইকারীরা সিএনজি চালক বেশে এই কাজ করে। এছাড়া টমছমব্রীজ ও শাকতলা
এলাকায় কিছু গ্রুপ এই কাজের সাথে জাড়িত। এছাড়া শাসনগাছা, টমছমব্রীজ, চানপুর
ব্রীজ এলাকায়ও ছিনতাইয়ের ঘটনা রয়েছে। এসব এলাকায় বসবাসকারীরা রাতদুপুরে
চলাচল করতে ভীতসন্ত্রস্ত বলে জানিয়েছে তারা। পুলিশ যদি দ্রুত তাদের বিষয়ে
পদক্ষেপ না নেয় তবে এই অপতৎপরতা আরো বাড়বে।
কুমিল্লা কোতয়ালী থানার
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক বলেন, টমছমব্রীজ পর্যন্ত আমার সীমানা।
তারপরও এই রুটে যারা এই ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত আমরা সদর দক্ষিণ থানার
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এছাড়া কেউ যদি আইনী সহায়তা চায় তাহলে আমরা তাদের অবশ্যই সর্বোচ্চ সহযোগিতা
করবো।