কুমিল্লার হোমনায় দীর্ঘদিন একজন রেডিওলজিস্ট না থাকায় ব্যহত হ”েছ ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা। ভোগান্তি পোহাচ্ছে অসংখ্য সাধারণ রোগী। ইতোমধ্যে লাখ লাখ টাকা মূল্যের তিনটি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে দুটি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছে। একটি মেরামত করা হয়েছে; স্থঅপন করা হয়েছে আরও একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন। ফলে একজন রেডিওলজিস্টের অভাবে একদিকে যেমন প্রতিদিনই এক্স-রে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী, অপরদিকে সচল এক্স-রে মেশিন দুটিও ব্যবহার করতে না পারায় সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব।
স্বা¯’্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকায় মূল্যের খওঝঞঊগ ৩০০ গঅ, জঊঢ-৩২৫জ (লিসটেম ৩০০ এমএ, রেক্স-৩২৫ আর) মডেলের এক্স-রে মেশিনটি গত বছর ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ব্যয়ে মেরামত করা হয়েছে। অযত্ন আর অবহেলায় যে কোনো সময় আবারও বিকল হতে পারে এটিও। একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (রেডিওলজিস্ট) জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন নিবেদন করেও ব্যর্থ হ”েছ উপজেলা স্বা¯’্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। একজন রেডিওলজিস্ট পেতে উপজেলা স্বা¯’্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জেলা সিভিল সার্জনকে বেশ কয়েকবার মৌখিকভাবে জানানোর পর সর্বশেষ ২০ অক্টোবর ২০২০খ্রি. লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন হোমনা উপজেলা স্বা¯’্য কমপ্লেক্সে ৩/৪ শ’ রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। এদের মধ্যে এক্স-রে পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা থাকে অনেকের। সরকারি হাসপাতালে এক্স-রে সেবা না পাওয়ায় প্রাইভেট ক্লিনিক অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে অতিরিক্ত দ্বিগুণ-তিনগুণ অর্থ ব্যয়ে এক্স-রে করাতে বাধ্য হ”েছন রোগীরা। পূর্বে কর্মরত রেডিওলজিস্ট শ্যামল চন্দ্র সরকারের দেওয়া তথ্যে অনুযায়ী, খওঝঞঊগ ৩০০ গঅ, জঊঢ-৩২৫জ (লিসটেম ৩০০ এমএ, রেক্স-৩২৫ আর) মডেলের এক্স-রে মেশিনটি ২০০৫ সালে ¯’াপন করা হয়। এরপর তিন বার নষ্ট হলে তিন বারই এটি মেরামত করা হয়। এই মেশিনটি দিয়ে ২১ হাজার রোগীর এক্স-রে সেবা দেওয়া হয়েছে। আর এর থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
জানা যায়, ১৯৮৪ সাল থেকেই হোমনা উপজেলা স্বা¯’্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে সেবা চালু ছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৯ ও ২০০৫ সালে আরও দুটি এক্সরে মেশিন ¯’াপন করা হয়। ইতোমধ্যে তিনটির মধ্যে দুটি মেশিন সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেলেও ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ব্যয়ে গত ২৪ অক্টোবর পরের মেশিনটি মেরামত করে সচল করা হয়। এরই মধ্যে হোমনা উপজেলা স্বা¯’্য কমপ্লেক্সে কর্মরত রেডিওলজিস্ট শ্যামল চন্দ্র সরকার জেলার দাউদকান্দি উপজেলার মালিগাঁও স্বা¯’্য কমপ্লেক্সে ডেপুটেশনে চলে যায়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় হোমনা উপজেলা স্বা¯’্য কমপ্লেক্সে রেডিওলজিস্টবিহীন এক্স-রে মেশিন বেকার পড়ে রয়েছে। বর্তমানে মেশিনটি অযত্ন, অবহেলা আর বিনা ব্যবহারে জলে ভেসে যেতে বসেছে সরকারের লাখ লাখ টাকা।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘দাউদকান্দির মালিগাঁও ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি যখন চালু হয় তখন তাকে (রেডিওলজিস্ট শ্যামল চন্দ্র সরকার) ডেপুটেশনে নেওয়া হয়েছিল। কথা ছিল সেখানে লোক পেলেই তাকে হোমনা উপজেলা স্বা¯’্য কমপ্লেক্সে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। লোকবলের অভাব আছে। শুধু হোমনায় নয়, পুরো ১৬ উপজেলায়ই এমন প্রচুর স্টাফ খালি পড়ে আছে। আমাদের চাহিদা দেওয়া আছে। মন্ত্রণালয় বলেছে যে, আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমেও ‘রিকভার’ হতে পারে, আবার নিয়োগের মাধ্যমেও হতে পারে। যদি আউট সোর্সিং আগে আসে সেখান থেকেই দিব, অথবা নিয়োগ হলে সরাসরি নিয়োগ দিয়ে দেব। সেটা কি আউট সোসিং থেকে হবে নাকি সরাসরি নিয়োগ দিবে- সে ব্যাপারে আশা করছি, শিগগিরই একটি সিদ্ধান্ত চলে আসবে।”
হোমনা উপজেলা স্বা¯’্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুছ ছালাম সিকদার বলেন, “একজন রেডিওলজিস্টের অভাবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এক্স-রে সেবা থেকে বঞ্চিত হ”েছ। হোমনা উপজেলা স্বা¯’্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজিস্ট) দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার বলেছি। সর্বশেষ ২০ অক্টোবর লিখিতভাবে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জনকে জানিয়েছি। এক্স-রে মেশিনটি বহু কষ্টে মেরামত করেছি। এখন সেটি আবারও নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আরও একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনও ¯’াপন করা হয়েছে। ”