ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
পৌরমেয়রের এক মাসে যাতায়াতেই ব্যয় লাখ টাকা!
Published : Monday, 4 January, 2021 at 11:28 AM
পৌরমেয়রের এক মাসে  যাতায়াতেই ব্যয় লাখ টাকা!চাঁদপুরের কচুয়া পৌরসভা মেয়র নাজমুল আলম স্বপনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন প্রকল্পের নামেনতুন জিপ গাড়ি মেরামতের নামে লাখ লাখ টাকা ব্যয়, দুটো ফগার মেশিন ক্রয়ের নামে দ্বিগুণ টাকা ব্যয়, পৌরসভার গার্বেজ গাড়ি ভাড়া দিয়ে তা আত্মসাতের মতো বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া কোনও কাজের ভাউচার ২৫ হাজার টাকার উর্ধ্বে হলে তা টেন্ডার ছাড়া কাজ করা যায় না। কিন্তু সে বাধ্যবাধকতাও মানেননি মেয়র। পৌর পরিষদের বিভিন্ন মাসের মাসিক সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, স্বপন মেয়র নির্বাচিত হন ২০১৫ সালে। ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ক্রয় করেন একটি পাজারো স্পোর্টস জিপ গাড়ি। নতুন এ গাড়ি কেনার পর থেকেই এর মেরামত বাবদ প্রতি বছর ব্যয় দেখানো হয় কয়েক লাখ টাকা।
২০১৯ সালে মার্চের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, মেয়রের নতুন জিপ গাড়ি মেরামতে ব্যয় ৭২ হাজার টাকা, গাড়ির জ্বালানি ১৩ হাজার টাকা, ড্রাইভারের অতিরিক্ত খাটুনিতে ১৪ হাজার ৬০০ টাকা, ড্রাইভারের বেতন-ভাতা আরও ২৩ হাজার টাকাতো আছেই। এসব মিলে মেয়রের যাতায়াত ব্যবস্থাতেই পৌরসভার ব্যয় দাঁড়ায় ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা। এভাবে ২০১৯ সালে ছয় মাস এবং ২০২০ সালের ৯ মাসে শুধু গাড়ি মেরামতেই ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৯০০ টাকা।
এছাড়া এইক বছরের আগস্টের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মশক নিধন এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসকরণে এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে ক্রাশ প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগ মন্ত্রণালয় হতে বরাদ্দকৃত সাড়ে ৯ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ টাকা দিয়ে একটি K-10 SP- জার্মানি মডেলের ফগার মেশিন ক্রয়ে মূল্য দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা এবং জার্মানির একটি ফগার মেশিন ক্রয় হয়েছে দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে। জানা গেছে, ফগার মেশিন দুটির মূল্য হতে পারে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা।
পৌরসভার সাবেক সচিব ফখরুল ইসলাম বলেন,  ‘আমি দায়িত্বে থাকাকালে পৌরসভার নতুন গার্বেজ গাড়ি চাঁদপুরে বালু আনা-নেয়ার কাজে প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা করে মাসে ৯০ হাজার টাকা ভাড়া দিত। কিন্তু সেই টাকা পৌরসভার কোষাগারে জমা না দিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া রোলার ভাড়া দিলেও তার টাকাও ঠিক মতো জমা দিত না। মেয়রের এসব অনিয়মের বিরোধিতা করায় তিনি আমাকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে জামালপুরের ইসলামপুরে বদলি করে দেন।
তিনি বলেন, ‘কোনও ভাউচার ২৫ হাজার টাকার উর্ধ্বে হলে পৌর পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে তা কোটেশনের মাধ্যমে টেন্ডার দিয়ে মেরামত করতে হবে। এখন তিনি জিপ গাড়ি মেরামত বাবদ যে অর্থ ব্যয় করেছেন তা টেন্ডারের মাধ্যমে করেছেন কিনা তা জানি না।
নতুন গাড়ি এত বেশি মেরামত হয় কিনা এ প্রশ্নের জবাবে গাড়ির ড্রাইভার জাকির বলেন, ‘জিপ গাড়ি মেরামতে মাসে এতো টাকা ব্যয় এটা ঠিক আমি বলতে পারছি না। পৌরসভার জিপ, গার্বেজ গাড়ি, রোলার আছে। এগুলো সব মেরামতের খাত একটি। হয়তো সবগুলো মেরামতে তা ব্যয় হতে পারে। এ সম্পর্কে পৌরসভার অ্যাকাউন্টেন্ট ও সচিব স্যার বলতে পারবেন।
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বিব্রত বোধ করে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সির আব্দুল্লা আল মামুনসহ কয়েক কাউন্সিলর বলেন, ‘মেয়র সাহেব অনেক কাজের সঙ্গেই আমরা যুক্ত ছিলাম না। স্থানীয় সরকার বিভাগের বরাদ্দের টাকায় মশক নিধন কাজ কাগজেপত্রে হয়তো টেন্ডার হয়েছে। কতজন সেই টেন্ডারে অংশ নিয়েছে তা বলতে পারছি না। তবে যে কাজের জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছে সেই কাজই হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ফগার মেশিন আনা হয়েছে- এমন কোনও তথ্য আমার জানা নেই। পৌর পরিষদ চলে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। অনিয়মের বিষয়ে একা কথা বললে সত্য বললে ঝামেলা। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগ এসব বিষয় দেখলে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।‘
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমি এখানে যোগদান করেছি গত সেপ্টেম্বরে। আগের বিষয়গুলো আমি বলতে পারছি না। তবে তাৎক্ষণিক কোনও কাজ হলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত টেন্ডার ছাড়াই করা যায়। ফগার মেশিন বিভিন্ন দামের রয়েছে। ক্রাইসিস সময়ে দাম উঠানামা করে। সম্ভবত এই মডেলের একটি ফগার মেশিন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হতে পারে।
গাড়ি মেরামতে ব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, মেয়র সাহেব তো বিভিন্ন প্রজেক্টের কারণে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। আইইউআইডিপি এবং ইউআইআইপি প্রজেক্টগুলো আনার জন্য ঢাকায় দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। গাড়ির চাকা নষ্ট হয়- হয়তো এসব ক্ষেত্রে ব্যয় হয়েছে।
মেয়র ঢাকায় আসা-যাওয়ায় পৌরসভার গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পারে না তো ঠিকই। কিন্তু কোনও মেয়র গাড়ি ছাড়া যায় না। এখন মেয়র সাহেব কি গাড়ি রেখে লোকাল বাসে ঢাকায় যাবেন?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কচুয়া পৌরসভার সচিব জহিরুল আলম সর্দার বলেন, ‘সব কার্যক্রমই নিয়মানুযায়ী হয়েছে। মেয়রের সঙ্গে কথা বলুন। মোবাইলে কি বলবো? আপনি অফিসে আসুন, কথা বলবো।
এ বিষয়ে কথা বলতে পৌরমেয়র স্বপনের মোবাইলে কয়েকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।